তাঁর হাতের কাজ দেখলে মুগ্ধ হবেন যে কেউ। ঝুলিতে রয়েছে জাতীয় পুরস্কার। এমনকি বিদেশের মাটিতেও প্রশংসিত হয়েছেন এই ব্যক্তি। অথচ দেশে বিদেশে স্বীকৃতি পাওয়া সত্ত্বেও, পেটের দায়ে অটো চালাতে হচ্ছে তাঁকে। কার কথা বলছি? আসুন শুনে নিই।
জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত এক হস্তশিল্পী। যাঁর কাজ প্রশংসিত হয়েছে বিদেশের মাটিতেও। কিন্তু ভাগ্যের ফেরে সেই স্বীকৃতির কোনও মূল্যই যেন তাঁর জীবনে নেই। বর্তমানে পেটের দায়ে অটো চালাতে হয় তাঁকে। সেই কাশ্মীরি হস্তশিল্পীর জীবনসংগ্রামে কথাই নেটমাধ্যমে প্রকাশ করেছেন এক ব্যক্তি।
আরও শুনুন: পড়াশোনায় পিএইচডি, অথচ চালাচ্ছেন অটো, যুবকের জীবনের গল্প শুনে হতবাক যাত্রীরা
কথা বলছি সৈয়দ আইজাজ সম্পর্কে। পেশায় তিনি একজন অটোচালক। কিন্তু সেই পরিচয়ের নেপথ্যেও আরও বড় এক পরিচয় রয়েছে তাঁর। তিনি একজন জাতীয় স্বীকৃতি প্রাপ্ত হস্তশিল্পী। কাগজের মণ্ড দিয়ে বিভিন্ন আকৃতির মুখোশ বা পুতুল বানানোয় তিনি সিদ্ধহস্ত। এই বিশেষ শিল্পের পোশাকি নাম প্যাপিয়ার ম্যাশে। প্রায় ৬০০ বছর আগে কাশ্মীরের মাটিতে এই শিল্পের জন্ম। সেখানকার অনেক পরিবারেই এই হস্তশিল্পের প্রচলন রয়েছে। সৈয়দ নিজেও পারিবারিক সূত্রেই এর কায়দাকানুন শিখেছিলেন। তারপর দীর্ঘদিনের অভ্যাস তাঁকে পরিণত করেছে। আর সেইসঙ্গে এনে দিয়েছে সম্মানও। ২০০৬ সালে কেন্দ্র সরকারের তরফে পুরস্কার পেয়েছেন। শুধু দেশেই নয়, বিদেশের মাটিতেও এই বিশেষ কাজের জন্য তিনি সম্মানিত হয়েছেন। বিদেশে বেশ কিছু ছাত্রও রয়েছে তাঁর। কিন্তু বর্তমানে সেই পরিচয় প্রায় ফিকে হয়ে গিয়েছে এমনটাই বলা চলে। পেটের দায়ে এখন তাঁকে অটো চালাতে হয়। সারাদিনে রোজগার বলতে শ-তিনেক টাকা। বিগত ১০ বছর ধরে এভাবেই সংসার চালাতে হচ্ছে তাঁকে।
কিন্তু এমন শিল্পীর এই অবস্থা কেন হল?
আরও শুনুন: যেন উলটপুরাণ! সনাতন ধর্ম রক্ষায় ‘বেদ বিদ্যালয়ে’ জোর কংগ্রেসেরই
সে প্রসঙ্গে নিজের ভাগ্যকেই দোষ দেন সৈয়দ। কাগজশিল্পের টানে বিশেষ পড়াশোনা তিনি করেননি। পরবর্তীকালে দেশ বিদেশে খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ায় পুঁথিগত বিদ্যার থেকে আরও দূরে চলে গিয়েছেন । তাঁর কর্মদক্ষতা যতই থাকুক, তাঁর ঝুলিতে কোনও ডিগ্রি নেই। তাই বহু চেষ্টা করেও তেমন কোনও চাকরি জোটেনি কপালে। বহুবার চাকরিতে যোগদানের প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন। কিন্তু সব ক্ষেত্রেই নূন্যতম মাধ্যমিক পাস হওয়া বাঞ্ছনীয়। তাই শেষ পর্যন্ত কোনও চাকরিতেই যোগ দিতে পারেননি। অগত্যা পেশা হিসেবে বেছে নিতে হয়েছে এই পথ। তবে তাঁর এই কাহিনি শুনে আবেগে ভেসেছেন নেটিজেনরা। সকলেই শিল্পীর প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। কিন্তু সত্যিই কি এই ধরনের প্রতিভাবান মানুষের যোগ্যতা বিচারে পুঁথিগত শিক্ষা থাকা বাঞ্ছনীয়, সৈয়দের জীবনের গল্প যেন সে প্রশ্নই রেখে গেল।