২০ বছর ধরে মাইনে বাড়েনি এক টাকাও। এমনকি ৭ বছর ধরে সেই বেতনও বন্ধ। তবুও নিজের কাজে ত্রুটি নেই এই মহিলার। মাসে মাত্র ২৫ টাকা বেতন, পান বা না পান, নিজের কাজটি মন দিয়ে করে চলেছেন তিনি। এতগুলি বছর ধরেই। কে তিনি? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
সুমন সেই কবেই বলেছেন, “সে তুমি শ্রমিক কিংবা তা ধিন ধিনা, পেটে চাই খাবার, নয়ত দিন চলে না, দিন চলে না।” নিজের প্রয়োজন মেটানোর জন্যই কাজ খোঁজে মানুষ। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান- যেটুকু প্রাথমিক চাহিদা, তা মেটাতে গেলেও তো অর্থের প্রয়োজন। আর তার জন্য কাজ না করে উপায় কী! কিন্তু এই মহিলা কাজ করে তাঁর প্রয়োজন মেটাতে পারেন না। কারণ তাঁর যা বেতন, তা শুনলে হয়তো তামাশা মনে করে হেসেই উঠবেন সকলে। আবার সেইটুকু বেতনও বন্ধ হয়ে গিয়েছে আজ সাত-সাতটি বছর। মানসিক ভারসাম্যহীন বয়স্কা মেয়ে আর তাঁর নিজের সংসার যে কীভাবে চলে, সে খোঁজও কেউ রাখেনি। তবুও নিজের কাজে বিন্দুমাত্র ফাঁকি নেই ৬৭ বছর বয়সি এই মহিলার। অথচ সে কাজে যে বিশেষ সম্মান আছে, এমনটাও নয় কিন্তু। কারণ তিনি আসলে সুইপারের কাজ করেন। একটি সরকারি স্কুল ধোয়ামোছার দায়িত্ব তাঁর। সে কাজে সম্মান নেই, প্রাপ্য বেতন নেই, নেই অন্যান্য সুযোগ সুবিধাও। তবুও নিজের দায়িত্বটুকু অবহেলা করতে নারাজ কাশ্মীরের নিসারা বেগম।
আরও শুনুন: ৭০ বছর বয়সে ঘরে বিদ্যুৎ, বৃদ্ধার খুশির নেপথ্যে এই মহিলা আইপিএস
তাঁর দায়িত্বে অবশ্য শুধু স্কুলটিই নেই, রয়েছে এক মেয়েও। তার বয়স ৩২। মানসিকভাবেও সুস্থ নন ওই তরুণী। রোজ সকালে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে বাড়িতে রেখেই স্কুলের উদ্দেশে হাঁটতে শুরু করেন নিসারা বেগম। এক কিলোমিটার হেঁটেই স্কুলে পৌঁছতে হয় তাঁকে। রাজধানী শ্রীনগর থেকে ৫৫ কিলোমিটার দূরের ওই সরকারি বয়েজ স্কুলে ২০ বছর ধরে কাজ করছেন তিনি। ১৯৯৫ সালে যখন ঠিকা কর্মী হিসেবে ওই স্কুলে কাজ শুরু করেছিলেন তিনি, তখন তাঁর মাইনে ধার্য হয়েছিল ২৫ টাকা। তখন থেকে কেটে গিয়েছে ২৭ বছর। অথচ বেতন বাড়েনি একটি টাকাও। শুধু তিনি নন, তাঁর মতো সব কর্মীদেরই হাল একইরকম। এই ইস্যুতে ২০১৭ সাল থেকেই সরকারের কাছে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন তাঁরা। তার জেরে আদালত বেতন বাড়িয়ে ২৫ টাকা থেকে ৭৫ টাকা করার নির্দেশ দিয়েছিল। তাতেও অবশ্য নড়েচড়ে বসেনি প্রশাসন। উলটে তখন থেকেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে ওই সামান্য বেতনও।
আরও শুনুন: একটা গানের জন্য নেন ৩ কোটি! অরিজিৎ বা সোনু নন, দেশের এই গায়ক কে জানেন?
তবে এই অবস্থায় পড়েও কিন্তু কাজ ছেড়ে দেননি নিসারা বেগম। একে তো মেয়েকে নিয়ে তাঁর সংসারের সব ভার তাঁরই উপর। তা ছাড়াও তিনি মনে করেন, এই স্কুলকে পরিচ্ছন্ন রাখার ভার যখন তিনি নিয়েছেন, সে কাজ তাঁকে করে যেতেই হবে। তাই শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও নিজের সে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন ৬৭ বছরের নিসারা বেগম।