সমাজ পালটাতে চান বলেই গাছের উপর বাস করেছিলেন মহিলা। তাও এক-দুদিন নয়, একেবারে দু’দুটো বছর। কে এই মহিলা? শুনে নেওয়া যাক।
গাছের উপর দুটো বছর কাটিয়ে দিয়েছিলেন মহিলা। না, কোনও রেকর্ড গড়ার শখে নয়। চেয়েছিলেন যাতে তাঁর আশেপাশের সমাজটা একটু পালটে যায়। যাতে নিজের গণ্ডির বাইরেও একটু তাকাতে শেখে মানুষ, আর চারপাশের প্রাণকে বাঁচিয়ে রাখার ব্যাপারেও সচেতন হয়। সেই কারণেই গুনে গুনে মোট ৭৩৮ দিন গাছের উপরেই ছিলেন তিনি।
আমেরিকার এই সমাজকর্মী অবশ্য পরিবেশ বাঁচাতে তৎপর বরাবরই। জুলিয়া বাটারফ্লাই হিল নামের এই মহিলা গোটা বিশ্ব জুড়েই সে কারণে খ্যাতি কুড়িয়ে নিয়েছেন। অবশ্য তাঁর জীবনটাই শুরু হয়েছিল প্রকৃতির কোলে, ফলে প্রকৃতিকে তিনি ভালোবেসেছেন সহজাতভাবেই। খ্রিস্টান মিশনারির মেয়ে তিনি। তাঁর পরিবার এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় ঘুরে ঘুরে ধর্মপ্রচার করত। ফলে ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে চড়ে পথে পথেই তাঁর শৈশবের অনেকটা সময় কেটে গিয়েছে। সেই সূত্রেই গাছপালা, নদী, পশুপাখির সঙ্গে মিলেমিশে বড় হয়েছেন তিনি। বছর সাতেক বয়সে এমনই পথে ঘোরার সময় একটি প্রজাপতি এসে আঙুলে বসেছিল, সেই থেকেই ‘বাটারফ্লাই’ ডাকনাম পান তিনি। তবে কুড়ি পেরোনোর পর এক মারাত্মক দুর্ঘটনা তাঁর জীবনটাকেই বদলে দেয়। প্রায় বছরখানেক লেগেছিল হাঁটাচলা আর কথা বলার ক্ষমতা ফিরে পেতে। কিন্তু এই দুর্ঘটনার পরেই তিনি ঠিক করে ফেলেন, নতুন করে ফিরে পাওয়া জীবনটাকে এমন কোনও কাজে লাগাবেন, যা বাকি দুনিয়াকে ভালো কিছু ফিরিয়ে দেবে।
সেই সূত্রেই পরিবেশকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন জুলিয়া। একটি রোড ট্রিপে ক্যালিফোর্নিয়া গিয়ে রেডউড বন বাঁচানোর কর্মকাণ্ডে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। প্যাসিফিক লাম্বার কোম্পানি তখন সেখানকার পুরনো রেডউড বন কেটে সাফ করে দিচ্ছে। পুঁজিবাদী স্বার্থে এভাবেই তো বনের পর বন উজাড় হয়ে যায়। কিন্তু সেই আস্ফালনের সামনেই সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন জুলিয়া। সেটা ১৯৯৭ সাল। একটি হাজার বছরের পুরনো রেডউড গাছের উপর তিনি উঠে বসে থাকেন। শুরুতে যা ছিল সাময়িক প্রতিবাদ, শেষ পর্যন্ত তাই গড়িয়ে যায় ৭৩৮ দিনে। এই গোটা সময়টায় পরিবেশের প্রতিকূলতা সয়েছেন জুলিয়া, সঙ্গে মানুষের হেনস্তা তো ছিলই। এমনকি ১০ দিন তাঁকে পুরোপুরি ঘেরাও করে রেখেছিল ওই কর্পোরেট সংস্থার রক্ষীরা।
তবুও হার মানেননি জুলিয়া। তাঁর এই অভিনব প্রতিবাদের কথা দেশে বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৯৯ সালে এসে অবশেষে দুই পক্ষের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। জুলিয়ার গাছটিকে কেন্দ্র করে ২০০ ফুট এলাকার গাছ বাঁচিয়ে রাখতে রাজি হয় সংস্থাটি। অন্যদিকে দুই পক্ষই ৫০ হাজার ডলার করে দান করে হামবোল্ট স্টেট ইউনিভার্সিটিকে, গাছ সংরক্ষণ এবং আধুনিক উন্নয়নের সমন্বয় বিষয়ে গবেষণা করার জন্যে।
গাছ বেঁচে গিয়েছে বটে। তবে জুলিয়ার আন্দোলন ফুরোয়নি। উন্নয়নের জন্য প্রকৃতির গায়ে মানুষের হাত পড়ছেই। আর সেই ধ্বংসের উলটোদিকেই প্রহরীর মতো জেগে আছেন জুলিয়ার মতো মানুষেরা।