বাইরে বৃষ্টিটা সবেমাত্র থেমেছে। এরকম একটা সন্ধ্যেবেলা পছন্দের তেলেভাজা না থাকলে জমে! কিন্তু একি, দোকানের বাইরে যে বিশাল লাইন। সামনে এগিয়ে জিজ্ঞাসা করে জানলেন, অপেক্ষা করতে হবে ৩৮ বছর। স্বপ্নে না, বাস্তবেই এমন অভিজ্ঞতা হতে পারে। ঠিক কীভাবে? আসুন শুনে নিই।
ভিড় থাকলে লাইনে দাঁড়াতেই হবে। কিন্তু তা কতক্ষণের জন্য! ১ ঘণ্টা, দু ঘণ্টা কিংবা তার থেকে বেশি। টানা ৩৮ বছর অপেক্ষা করতে শুনেছেন? তাও স্রেফ একটা তেলেভাজা খাওয়ার জন্য! শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। জাপানের এক দোকানে এমনই নিয়ম। সেখান থেকে স্রেফ একটা তেলেভাজা কেনার জন্য অপেক্ষা করতে হতে পারে ৩৮ বছর!
আরও শুনুন: অ্যালুমিনিয়ামের ফয়েলে মুড়ে রাখা হয় ওষুধ, কী এর উপকারিতা?
কথা বলছি, জাপানের বিখ্যাত কোবে বিফ ক্রোকেট সম্পর্কে। মূল উপকরণ বলতে গোমাংস। সেই সঙ্গে আলোভাজাও থাকে। জাপানের ওই দোকানে এই ক্রোকেট খাওয়ার জন্যই ভিড় জমান সকলে। তবে ভিড় করলেই যে পেয়ে যাবেন তার কোনও মানে নেই। অপেক্ষা করতে হতে পারে ৩৮ বছর অবধি। কারণ এই খাবার তৈরিতে সাধারণ গো-মাংস ব্যবহার করা হয় না। আর সেই কারণেই এই অপেক্ষা। অন্তত তিন বছর অপেক্ষা করতে হয় এই বিশেষ কোবে বিফ সংগ্রহ করতেই। তারপর আরও বিভিন্ন পদ্ধতিতে তা সংরক্ষণ করা। সবমিলিয়ে একটা ক্রোকেট তৈরি করতে সময় লেগে যায় কয়েক বছর। শুধু তাই নয়, এর সঙ্গে যে আলুভাজা দেওয়া হয়, সেটিও নেহাতই সাধারণ নয়। এখানে ব্যবহার করা হয়, ‘রেড আন্ডেস’ নামে এক বিশেষ ধরনের আলু। যার মধ্যে এতটাই শর্করা থাকে, যা সাধারণ আলুতে পাওয়া যায় না। অনেকেই দাবি করেন, এই বিশেষ রেড আন্ডেসও স্রেফ জাপানের ওই দোকানেই পাওয়া যায়। দোকানটি অবশ্য নামে বিখ্যাত নয়। জাপানের হোয়োগো অঞ্চলে গেলেই এই দোকানের খোঁজ মিলবে। স্রেফ বলতে হবে, কোবো বিফ ক্রোকেট চাই। তাহলেই হবে। ওই অঞ্চলে এই ধরনের ক্রোকেট আর কোথাও পাওয়া যায় না। তাই যারাই এর খোঁজ করেন তাঁদের ভরসা একমাত্র ওই দোকান। স্বাদে অতুলনীয় তো বটেই, সেই সঙ্গে দামও যথেষ্টই কম। জাপানি হিসেবে ৩০০ ইয়েন দিলেই একটা ক্রোকেট মেলে। ভারতীয় হিসেবে ১৭০ টাকা মতোন। এই টাকায় ওর সমতুল্য আর কিছুই পাওয়া যাবে না। তাই কোবো ক্রোকেটের চাহিদা আকাশছোঁয়া।
আরও শুনুন: বিশ্বের সেরা মেধাবী পড়ুয়া এই বাঙালি কিশোরীই, চেনেন তাকে?
এদিকে চাহিদা থাকলে কি হবে, কাঁচামালের জোগান তো নেই। একদিনে মাত্র ২০০ ক্রোকেট তৈরি করা সম্ভব। আর দাম কম হওয়ার সুবাদে কেউ ১০ টার কম ক্রোকেট অর্ডার করেন না। তাই এই মুহূর্তে খেতে চাইলেই ক্রোকেট পাওয়া যাবে না। দোকানের হিসাব বলছে, এখনও পর্যন্ত মোট ৬৩০০০ জন ক্রোকেট অর্ডার দিয়ে অপেক্ষা করছেন। সময় এলে, তা যতদিন পরেই হোক না কেন, জানানো হবে। সবথেকে শেষে যার নাম, তার হাতে ক্রোকেট পৌঁছবে ২০৬২ সালে। এরপর আরও কেউ অর্ডার করলে বছরের হিসাব যে বাড়বে তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু তাতে কি! এই খাবারের স্বাদ নাকি এমন যে, এতবছর অপেক্ষা করতে হবে জেনেও হাসিমুখে অর্ডার দিয়ে দেন অনেকেই। আর সেই কারণেই এই তালিকা এতটা দীর্ঘ হয়েছে।