ভারচুয়াল দুনিয়ার বাড়বাড়ন্তে স্বাভাবিকভাবেই বাড়ছে মোবাইল ফোনের প্রতি আসক্তি। আর সেই আসক্তি কমাতেই অভিনব উদ্যোগ নিল এক জৈন সংগঠন। নিজেদের সাধনার অঙ্গ উপোসকেই একটু বদলে নিয়ে ডিজিটাল উপোস পালন করলেন ওই ধর্মের মানুষেরা। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
পুজোআচ্চার কারণে তো ভক্তরা উপোস করেই থাকেন। কৃচ্ছ্রসাধনের মধ্যে দিয়েই ঈশ্বরের আরও কাছাকাছি হওয়া যায় বলে বিশ্বাস করেন তাঁরা। কিন্তু মোবাইল ফোনের নেশা কাটাতে উপোস? আজ্ঞে হ্যাঁ, এমনই আশ্চর্য কাণ্ড ঘটিয়েছে মধ্যপ্রদেশের এক জৈন সংগঠন। মোবাইল ফোনের প্রতি আসক্তি কমাতেই এহেন অভিনব উদ্যোগ নিয়েছিল সংগঠনটি। যে উদ্যোগে শামিল হয়েছেন অন্তত হাজারখানেক মানুষ। ‘ডিজিটাল ফাস্টিং’ নামে এক অদ্ভুত উপবাস ব্রতের পণ নিয়েছেন তাঁরা। তবে এখানে উপবাস বলতে খাবার খাওয়ায় নিষেধ নেই। দীর্ঘ ২৪ ঘণ্টা মোবাইল থেকে বিরত থাকলেই সম্পন্ন হবে এই ব্রত।
আরও শুনুন: বাঙালি ঘরের মহিলাদের ভালবাসার প্রকাশ লুচি! ব্যক্তির মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক সোশ্যাল মিডিয়ায়
উপবাস মানেই ত্যাগ ও সংযমের অভ্যাস। ব্রতের সময় ভগবানের প্রতি একাগ্র চিত্তে মনোনিবেশ করার জন্য উপবাস করার নিয়ম গড়ে উঠেছে। তবে জৈন সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষদের জন্য উপবাস সাধনার গুরুত্বপূর্ণ এক অঙ্গ। বছরের বিভিন্ন সময় নানান ব্রতের অছিলায় সামান্য জল খেয়েই দিন কাটিয়ে দেন তাঁরা। যাবতীয় জাগতিক ভোগের ঊর্ধ্বে গিয়ে কৃচ্ছ্রসাধন করাই জৈন ধর্মগুরুদের প্রধান উদ্দেশ্য। সেই ধারা মেনেই তাঁরা ‘পরযুশান’ পর্ব নামের এক ব্রত পালন করেন। ব্রতের নিয়মানুসারে সারাদিন মোবাইল কিংবা অন্যান্য বৈদ্যুতিন যন্ত্র থেকে বিরত থাকতে হয়। মানুষের আত্মসংযম, একাগ্রতা ও অধ্যবসায় বাড়ানোর উদ্দেশ্য নিয়েই পালন করা হয় এই ব্রত। এবার সেই ব্রতপালনের জন্যই বিপুল আয়োজন করেছিল ওই সংগঠনটি। আয়োজকদের মতে, মোবাইলের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সমাজের সব স্তরের মানুষ। আর সেই কারণেই এই ‘ডিজিটাল ফাস্টিং’-এর আয়োজন করেছিলেন তাঁরা। রাজধানী ভোপাল থেকে প্রায় ১২০ কিমি দূরে বেগমগঞ্জ শহরের এক মন্দিরে আয়োজন করা হয়েছিল এই কর্মকাণ্ডের। নিজেদের মোবাইল জমা রেখে ২৪ ঘণ্টা সংযম পালন করেছেন প্রায় ১০০০ জন ব্রতী, এমনটাই জানিয়েছেন সংগঠকেরা।
আরও শুনুন: সদ্যোজাত কন্যাকে জ্যান্ত পুঁতে ফেলা হল মাটিতে , ‘বেটি বঁচাও’-এর উল্টো পথেই কি হাঁটছে দেশ?
আট থেকে আশি যে বয়সই হোক, মোবাইলের পর্দা থেকে চোখ সরানো মুশকিল অনেকের কাছেই। পৃথিবী জুড়েই যন্ত্রনির্ভরতা যত বাড়ছে, ততই ওই ভারচুয়াল দুনিয়ায় ডুব দিচ্ছেন আরও বেশি সংখ্যক মানুষ। এই পরিস্থিতিতে এহেন ‘ডিজিটাল ফাস্টিং’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।