বড়দিনের মরশুম এলেই মনে পড়ে কেক-পেস্ট্রির গন্ধ, উপহার ভরা বাক্স, ক্রিসমাস ট্রি, আর অবশ্যই ফাদার ক্রিসমাসের কথা। আমরা যাঁকে সান্তা ক্লজ বলেই ডাকি। কিন্তু এমন একজন মানুষের ধারণা পাওয়া গেল কোথা থেকে? তবে কি বাস্তবেও ছিলেন সান্তা ক্লজের মতোই কোনও মানুষ? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
বড়দিনের আগের রাতে, অর্থাৎ ক্রিসমাস ইভে বল্গা হরিণে টানা স্লেজগাড়ি চড়ে বেরিয়ে পড়েন সান্তা ক্লজ। তাঁর সঙ্গে থাকে ঝোলাভর্তি উপহার। পরনে লাল পোশাক, লাল টুপি, কালো বুট। সাদা ধবধবে চুল দাড়ির ফাঁক দিয়ে উঁকি মারে হাসিভরা একটা মুখ। সান্তা ক্লজের এই গল্প যে কবে থেকে চলে আসছে বিশ্ব জুড়ে, তার ঠিক ঠিক সাল তারিখ বলা বোধহয় কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। তবে কেউ কেউ মনে করেন, সান্তা ক্লজ আসলে কোনও কল্পিত চরিত্র নন, তিনি ছিলেন বাস্তবেও।
আরও শুনুন: বড়দিনে আলোয় সেজে ওঠে বো ব্যারাক, গল্প বলে এক অন্য কলকাতার
কে ছিলেন বাস্তবের সান্তা ক্লজ? এ প্রশ্ন করলে অনেকেরই আঙুল ওঠে সেন্ট নিকোলাসের দিকে। চতুর্থ শতকের এই সাধু সম্পর্কে যে উদারতার গল্প শোনা যায়, সেখান থেকে অনেকের বিশ্বাস, সেন্ট নিকোলাসই আসলে সান্তা ক্লজ।
রোমান সাম্রাজ্যের শাসন চলছে যখন, সেই সময়ে এশিয়া মাইনরের মায়রাতে এই গ্রিক বিশপ থাকতেন বলে মনে করা হয়। তাঁর সম্বন্ধে এতদিন পরে আর বেশি কিছু জানা যায় না। তবে শোনা যায়, শিশুদের প্রাণ দিয়ে ভালবাসতেন তিনি। ভালবাসতেন অবিবাহিত তরুণ তরুণী, এবং নানা দেশ থেকে পড়তে আসা পড়ুয়াদেরও। তিনি নাকি গোপনে উপহার রেখে আসতেন সকলের বাড়িতে। প্রচলিত কাহিনি বলে, তিনটি মেয়েকে জোর করে দেহব্যবসায় নামানোর সময় তাদের পরিত্রাতা হয়ে দেখা দিয়েছিলেন নিকোলাস। তিনি নাকি পরপর তিন রাতে তাদের বাড়ির জানলা দিয়ে তিন থলি স্বর্ণমুদ্রা রেখে এসেছিলেন। আর তাঁর উপহার দেওয়ার এই রীতিই সান্তা ক্লজের কাহিনির জন্ম দেয়। তাঁর উপাসনার সময় নানারকম অলৌকিক ঘটনা ঘটত, এমন জনশ্রুতিও রয়েছে। তিনি ঝড়ে উত্তাল সমুদ্রকেও শান্ত করতে পারতেন, তিন নির্দোষ সৈন্যকে মৃত্যুদণ্ড থেকে রক্ষা করেছিলেন, এমন নানা গল্প শোনা যায়। সেইজন্য ‘নিকোলাস দ্য ওয়ান্ডারওয়ার্কার’ বলেও পরিচিত ছিলেন এই সাধু।
আরও শুনুন: ‘সান্তা ক্লজ এক্সপ্রেসে’ চড়ে যাওয়া যায় সান্তার বাড়ি, সে এক আশ্চর্য মুলুক
সেন্ট নিকোলাসের মৃত্যুর পর তাঁকে সমাধিস্থ করা হয় মায়রাতে। প্রচলিত বিশ্বাস, নিকোলাসের অস্থি চুরি করে ইতালির বারি-তে নিয়ে যায় নাবিকেরা। এই বারিতে-ই তাঁর স্মরণে তৈরি করা হয়েছে ব্যাসিলিকা ডি সান নিকোলা। কিন্তু গবেষণা করতে গিয়ে তুরস্কের ডেমরে জেলায় সেন্ট নিকোলাস চার্চের নীচে একটা সৌধের সন্ধান পেয়েছেন নৃতত্ত্ববিদরা। তাঁর নিচে নিকোলাসের সমাধি রয়েছে বলেই দাবি তাঁদের। আর সেন্ট নিকোলাসের সমাধি আবিষ্কার করার খবর ফের অক্সিজেন জুগিয়েছে বাস্তবের সান্তা ক্লজ থিয়োরিকে।