দেশের সদ্যনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে ‘রাষ্ট্রপত্নী’ বলে বিতর্কে জড়ালেন কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী। রাষ্ট্রপতিকে অপমান করা হয়েছে, এই মর্মে প্রতিবাদে সরব গেরুয়া শিবির। কিন্তু রাজনৈতিক তরজা সরিয়ে রাখলেও, মহিলা রাষ্ট্রপতিকে সম্বোধন করে কি এই শব্দটি আদৌ বলা সঙ্গত? ব্যাকরণের নিরিখে কি সঠিক এই শব্দ? আসুন, শুনে নিই।
দেশের সদ্যনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে নিয়ে লিঙ্গবৈষম্যমূলক মন্তব্য করার অভিযোগে শুরু হয়েছে চাপানউতোর। দ্রৌপদী মুর্মুকে রাষ্ট্রপতি না বলে ‘রাষ্ট্রপত্নী’ বলে বসেছেন কংগ্রেস শিবিরের লোকসভার দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী। আর এই মন্তব্যের জেরেই ঘনিয়ে উঠেছে জোর বিতর্ক। এহেন মন্তব্যকে রাষ্ট্রপতির অপমান হিসেবেই দেখছে বিজেপি। শুধু অধীরই নন, খোদ কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীকেও ক্ষমা চাইতে হবে বলে দাবি তুলেছেন বিজেপি নেতানেত্রীরা। কংগ্রেস সাংসদ একে নেহাতই কথার ভুল বলে সাফাই দিলেও নিজেদের অবস্থানে অনড় গেরুয়া শিবির।
আরও শুনুন: দ্রৌপদী নাম হয়েছিল স্কুলে, নিজের ‘আসল’ নাম জানালেন দেশের নয়া রাষ্ট্রপতি
কিন্তু প্রশ্ন হল, সত্যিই কি ‘রাষ্ট্রপত্নী’ কথাটিকে লিঙ্গবৈষম্যমূলক বলা চলে? অর্থাৎ, ‘রাষ্ট্রপতি’ কি একটি পদের নাম হিসেবে লিঙ্গনিরপেক্ষ শব্দ, নাকি এই শব্দটি সোজা হিসেবমতো পুংলিঙ্গবাচক শব্দ যে তার স্ত্রীলিঙ্গে শব্দটি বদলে যাবে? এ বিষয়ে ব্যাকরণের কী মত, জেনে নেওয়া যাক তাহলে।
আরও শুনুন: মেয়ের নাম দ্রৌপদী রাখেন না অভিভাবকরা! রাষ্ট্রপতি কি বদলে দেবেন ধারণা?
সাধারণভাবে ‘পতি’ অর্থে আমরা স্বামী বুঝে থাকি। কিন্তু এই শব্দটি অন্য কোনও বিশেষ্য পদের সঙ্গে জুড়ে গেলেই দেখা যায় তার অর্থ বদলে যাচ্ছে। সেনাপতি, রাষ্ট্রপতি, নৃপতি, বনস্পতি– পতি-যুক্ত এমন একাধিক শব্দের সন্ধান মেলে, যাদের অর্থের সঙ্গে স্বামীত্বের কোনও সম্পর্কই নেই। আসলে ব্যাকরণের জগতে ‘পতি’ শব্দটি এত প্রাচীন যে তার কোনও একটিমাত্র উৎস নির্দেশ করতে গেলে সমস্যায় পড়তে হয়। তাই এক্ষেত্রে ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’ প্রণেতা খোদ হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়কেই প্রামাণ্য ধরে নেওয়া যেতে পারে। কী জানাচ্ছে বাংলা শব্দভাণ্ডারের এই আকর গ্রন্থটি? পণ্ডিত হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, ‘পা’ ধাতু থেকে উৎপন্ন এই শব্দটি প্রধানত ‘পালক’ বা ‘রক্ষক’, এই অর্থই বোঝায়। আরেকটি অর্থে অধিকারী বা নায়ক বোঝাতেও ‘পতি’ শব্দের ব্যবহার রয়েছে। অর্থাৎ বনই হোক কি রাষ্ট্র কি সেনাদল, এই জাতীয় কোনও সমগ্র বিষয়কে পালন বা রক্ষা করার দায়িত্বে রয়েছেন যিনি, তিনিই ‘পতি’ অভিধা পাওয়ার যোগ্য। ‘পতি’ এখানে একেবারেই লিঙ্গনিরপেক্ষ একটি শব্দ, যা ওই বিশেষ পদটিকে চিহ্নিত করছে। সুতরাং সেই পদে পুরুষ কিংবা মহিলা কিংবা তৃতীয় লিঙ্গের কোনও মানুষ, যিনিই থাকুন না কেন, সেই অনুযায়ী শব্দটির লিঙ্গ বদলাবে না কোনোভাবেই- এমনটাই জানাচ্ছে ব্যাকরণ। অতএব দেশের রাষ্ট্রপতি পদে প্রতিভা পাটিল কিংবা দ্রৌপদী মুর্মু বসলেও তাঁদের ‘রাষ্ট্রপত্নী’ বলে সম্বোধন করার কোনও ব্যাকরণগত ভিত্তি নেই। রাষ্ট্রের পালন বা রক্ষাবিধানই তাঁর কর্তব্য। অতএব তিনি রাষ্ট্রপতিই থাকবেন। এর স্ত্রী লিঙ্গবাচক শব্দ খোঁজা অর্থহীন।