মিডিয়া আর সোশাল মিডিয়া দেখে দেখে আম ভারতীয়ের বিয়েও আজ আর ঘরোয়া নেই। তার সাজসজ্জা থেকে অনুষ্ঠানের বাড়বাড়ন্ত, প্রি-ওয়েডিং ফোটোশুট থেকে মেহেন্দি সংগীতের সিনেম্যাটিক আয়োজন, সবকিছুই এখন দামি। আর দেশের সেই উৎসাহের জোয়ার এসে লেগেছে কলকাতাতেও। যার ছাপ পড়ছে বিয়ের বাজারে।
কেবল আম্বানি-বাড়ির বিয়েতেই কি টাকা ওড়ে? উঁহু, আম্বানির সাধ্যের দিকে তাকিয়ে আজকাল আম নাগরিকও তার সাধের কোটা বাড়িয়ে নিয়েছে। গোটা দেশেই বদলে গিয়েছে আম বিয়ের রূপ রস গন্ধ। আর সেই বদলে যাওয়া বিয়ের সুবাদেই ব্যবসাতেও বাড়বাড়ন্ত। এমনকি নিপাট বাংলা ও বাঙালির কলকাতাতেও নাকি বিয়ে-শিল্পে ঝড়। এমনিতে শিল্প বলতে বাঙালি কালচার ছাড়া আর কিছু বোঝে না, এমনই একটা চলতি কথা আছে। অন্য শিল্প এ রাজ্যে কতখানি আছে বা নেই, তা নিয়ে বিতর্কও বরাবর ট্রেন্ডিং। কিন্তু চলতি কথা উড়িয়ে, চলতি মরশুমেই অন্তত ৬৫ হাজার কোটি টাকা লাভের আশা দেখছে এ শহর। সৌজন্যে বিয়ে ইন্ডাস্ট্রি।
এমনিতেই বিগ ফ্যাট ওয়েডিং-এর চোখধাঁধানো আলো আর টাকার শব্দে আপাতত গোটা দেশ ভরপুর। শুধু বিয়ে করলে আর মান থাকে না। তা যত দামি হবে, ততই বাড়বে তার কদর। তাই কেউ ছুটছেন বিদেশে, কেউ দেশেও সোনার কেল্লা খুঁজে বেড়াচ্ছেন। নেহাত যদি নিজের শহরেই বিয়ে করতে হয়, তাহলেও ঝাঁ চকচকে রিসর্ট কি ফার্ম হাউসের খোঁজ। বর কনের পরনে সব্যসাচী কি মনীশ মালহোত্রা না থাকলেই বা কেমন দেখায়! মোট কথা, সমস্ত ব্যাপারটাই হতে হবে রাজকীয়। বলিউড দীর্ঘদিন ধরে বিয়ে নিয়ে এমনই রূপকথা বুনেছে। আর হাল আমলে তাতে আরও রং চড়িয়েছে তারকাদের বিয়ের গল্প। মিডিয়া আর সোশাল মিডিয়া দেখে দেখে আম ভারতীয়ের বিয়েও আজ আর ঘরোয়া নেই। তার সাজসজ্জা থেকে অনুষ্ঠানের বাড়বাড়ন্ত, প্রি-ওয়েডিং ফোটোশুট থেকে মেহেন্দি সংগীতের সিনেম্যাটিক আয়োজন, সবকিছুই এখন দামি। আর দেশের সেই উৎসাহের জোয়ার এসে লেগেছে কলকাতাতেও। যার ছাপ পড়ছে বিয়ের বাজারে। উচ্চবিত্ত তো বটেই, মধ্যবিত্তের বিয়েও এখন আর মধ্যমানের নয়। যাদের সাধ্য কম, তারাও বিয়ের আয়োজনে সাধ্যের বাইরে গিয়ে জৌলুস টানতে মরিয়া। সব মিলিয়ে বিয়ের শাড়ি গয়না থেকে আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র, চাহিদা বাড়ছে সবকিছুরই।
বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলতি মরশুমে কলকাতায় বিয়ের বাণিজ্যে লাভ হতে পারে ৬৫ হাজার কোটি টাকা, যা আগের মরশুমের থেকে ৩৫ শতাংশ বেশি। ম্যারেজ রেজিস্ট্রার জেনারেল জানাচ্ছেন, গত বছরে গোটা রাজ্যে ১ লক্ষ ৪২ হাজার ৩১৮টি বিয়ে হয়েছিল, যার মধ্যে কলকাতায় মোটামুটি ৪৯ হাজার বিয়ে হয়। তবে এবার সেই সংখ্যাটা ৬০ হাজারে পৌঁছে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। গয়নার বাজারেও অন্তত ২০ শতাংশ লাভ বাড়বে বলে আশাবাদী ব্যবসায়ীরা। গত মরশুমে বিয়ের ফুল বাবদ ৫ কোটির লাভের অঙ্ক ছুঁয়েছিলেন ফুলব্যবসায়ীরা। তবে চলতি বছরে আরও ১০ শতাংশ লাভ বাড়বে, আশা করছেন তাঁরা। ইতিমধ্যেই বাজার চড়া হয়েছে ওয়েডিং ফোটোগ্রাফারদেরও।
‘ব্যান্ড বাজা বারাত’ ছবিতে দেখা গিয়েছিল, ওয়েডিং প্ল্যানার হিসেবেই ব্যবসা ফুলেফেঁপে উঠেছে যুগলের। সম্প্রতি ‘মেড ইন হেভেন’ সিরিজেও বিয়ের আয়োজনের বাড়বাড়ন্ত আর ওয়েডিং প্ল্যানারদের লাভের গল্প দেখা গিয়েছে। কেবল রিলে নয়, রিয়েলেও যে বিয়ে-বাণিজ্য লক্ষ্মীলাভের স্বপ্ন দেখাচ্ছে, সে কথাই বোঝাচ্ছে সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান।