রমজান মাস। মুসলিম সমাজে অতি পবিত্র। সারাদিন উপোস থেকে সন্ধেবেলা খাবার খাওয়া। তাও সকলে মিলে একসঙ্গে বসে। যার পোশাকি নাম ইফতার। স্রেফ মুসলিমরাই যে আয়োজন করেন, তা নয়। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীও ইফতারের আয়োজন করতেন। তাতে যোগ দিতেন মুসলিমদের সঙ্গে যোগ দিতেন হিন্দুরাও। এমনই এক ইফতার পার্টিতে থেমেছিল সাম্প্রদায়িক অশান্তি। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
উৎসবের সঙ্গে রাজনীতির যোগ বরাবরের। অস্বীকারের উপায়ও নেই। তবে এক্ষেত্রে ধর্মের ভেদ চলে না। বিশ্লেষকদের মতে, ভোটবাক্স ভরানোর তাগিদে এমনটা করতেই হয়। ঠিক যেমন ইফতারের আয়োজন করতেন অটল বিহারী বাজপেয়ী। তাতে মুসলিমদের সঙ্গে যোগ দিতেন হিন্দুরাও। এমনই এক ইফতার পার্টিতেই থেমেছিল সাম্প্রদায়িক অশান্তি।
:আরও শুনুন:
ধর্মের চাইতে মানবতা বড়! ৪০ বছর ধরে ইফতারের আয়োজন মন্দির কর্তৃপক্ষের
রমজান মাস। মুসলিম সমাজে অতি পবিত্র। সারাদিন উপোস থেকে সন্ধেবেলা খাবার খাওয়া। তাও সকলে মিলে একসঙ্গে বসে। যার পোশাকি নাম ইফতার। এইসময়টা দেশের প্রায় সর্বত্রই ইফতারের আয়োজন করা হয়। কেউ কেউ ঘরোয়াভাবে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করেন। কেউ আবার রাজকীয় খানা-পিনার আয়োজন সারেন। কী না থাকে সেই দাওয়াতে! শুধুমাত্র মুসলিমরাই যে আয়োজন করেন, তা নয়। বরং হিন্দুরাও মুসলিমদের জন্য ইফতারের আয়োজন করেন। সম্প্রীতির সেই নিদর্শন সবথেকে ভালো বোঝা যায় রাজনৈতিক মহলে। ক্ষমতায় থাকা দল তো বটেই, বিরোধীরাও অনেক সময় ইফতারের আয়োজন সারেন। উচ্চবিত্ত সম্ভ্রান্ত মুসলিমদের তাতে নিমন্ত্রণ জানানো হত। একসময় নিয়ম করে ইফতারের আয়োজন হত রাষ্ট্রপতি ভবনে। ক্ষমতায় থাকাকালীন কংগ্রেসও ইফতারের পার্টির আয়োজন করত। এদিকে বিজেপি বরাবরই ইফতারের বিরোধী। গেরুয়া শিবিরের নেতাদের কাছে এই ধরনের ধর্মনিরপেক্ষতার প্রদর্শন ছিল ‘ভাঁওতাবাজি’। তবে বাজপেয়ী ব্যতিক্রমী ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন তিনিও ইফতারের আয়োজন করেছেন। তাতে দোলের নেতারা তো বটেই, বিরোধী শিবিরকেও আমন্ত্রণ জানাতেন। সেই অনুষ্ঠানে হাজির থাকতেন প্রভাবশালী মুসলিমরা। অনেকে বলেন, এঁদের মন পেতেই নাকি ইফতারের ব্যবস্থা করতেন বাজপেয়ী। তবে ইফতার যে স্রেফ রাজনৈতিক তা নয়। এই ইফতারেই থেমেছিল সাম্প্রদায়িক অশান্তি।
:আরও শুনুন:
রাষ্ট্রপতি ভবনের ইফতার বন্ধ করেছিলেন আব্দুল কালাম, নেপথ্যে কোন যুক্তি ছিল?
১৯৭৪ সালের এমনই এক রমজান মাস। সাম্প্রদায়িক অশান্তি দানা বেঁধেছে লখনউ-এ। বিরোধ অবশ্য হিন্দু-মুসলিমের নয়। বরং মুসলিম সমাজের দুই সম্প্রদায়, শিয়া এবং সুন্নির মধ্যে। দুই পক্ষই বিশেষ কিছু কারণে একে অন্যের বিরুদ্ধে। এদিকে, পবিত্র রমজান মাসে এমনটা হওয়ায় অশান্তির ঝাঁজ আরও বেড়েছে। উত্তরপ্রদেশের ক্ষমতায় তখন কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রী হেমবতী নন্দন বহুগুনা বেশ চিন্তায় পড়লেন দুই সম্প্রদায়ের অশান্তি নিয়ে। অবিলম্বে সমস্যা মেটানো দরকার। একমাত্র আলোচনা করেই এমনটা সম্ভব। কিন্তু কার সঙ্গে আলোচনা করবেন, রোজার সময় কোনও মুসলিম নেতা আলোচনায় রাজি নন। এই সময় বুদ্ধি করে ইফতারের আয়োজন করলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে আসার নিমন্ত্রণ উপেক্ষা করতে পারলেন না মুসলিম নেতারা। মুখোমুখি বসে আলোচনা হল। অল্পদিনেই সমস্যার সমাধানও হল। এভাবেই ইফতারের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের অশান্তি থেমেছিল। এবং সেই কারণে, পরবর্তী সময় নিয়ম করে ইফতার আয়োজন করতেন সে রাজ্যের শাসকদল। পর অবশ্য পরিস্থিতি পালটেছে। উত্তরপ্রদেশের ক্ষমতা বদল রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অনেক রদবদল এনেছে। তবে সামগ্রিকভাবে ইফতারের সঙ্গে রাজনীতির যোগ কাটেনি।