কু ঝিক ঝিক রেলগাড়ি চড়তে কার না ভাল লাগে। আর সেই ভাললাগাকে যদি দ্বিগুণ করতে চান, তবে উঠে বসতেই হবে এই ট্রেনে। কাশ্মীর থেকে না হলেও ডিব্রুগড় থেকে কন্যাকুমারী, গোটাটাই আপনাকে প্রদক্ষিণ করিয়ে আনবে এই ট্রেন। হরেক রকম আবহাওয়া, হরেক ভাষা এবং হরেক সংস্কৃতির ছোঁয়া মিলবে এক সফরেই। কোন কোন জায়গা ছুঁয়ে যাবে এই ট্রেন জানতে চান? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
রেলগাড়ি যেন শুধু যাতায়াতের মাধ্যম নয়, এ যেন এক নস্টালজিয়া। আর সেই নস্টালজিয়া-সফর এবার হতে চলেছে আরও মনোরম।
বহু দেশেই দেখা যায় লম্বা রেলসফরের রুট। তা হয়ে দাঁড়ায় পর্যটকদের কাছে বিশেষ আকর্ষণও। সেই সব দেশের তালিকায় ইতিমধ্যে ঢুকে পড়ছে ভারতও। ডিব্রুগড় থেকে শুরু করে সুদূর কন্যাকুমারী, গোটাটাই সফর করা যাবে একটাই ট্রেনে। প্রায় ৪,২৭৩ কিলোমিটার রাস্তা পেরোতে সময় লাগবে মোট ৮০ ঘণ্টা ১৫ মিনিট। দিনের হিসেব ধরলে প্রায় চার দিন। অসমের ডিব্রুগড় থেকে তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারী পর্যন্ত প্রায় ৯টি রাজ্য প্রদক্ষিণ করবে এই বিবেক এক্সপ্রেস।
আরও শুনুন: ঘরের ছাদ, দেওয়াল নেই… তবু হোটেল ভাড়া ২৬ হাজার টাকা, কেন জানেন?
বিশ্বের অন্যতম বড় রেল নেটওয়ার্ক কিন্তু এই ভারতীয় রেল। কম প্রাচীনও নয়। অন্তত ১৬৮ বছরের ইতিহাস রয়েছে তাঁর। ১৭টি জোনে ভাগ করা এই রেল নেটওয়ার্কে প্রতিদিন যাতায়াত করেন ৩৫ লক্ষ মানুষ। রেলমন্ত্রকের ২০২১ সালের তথ্য অন্তত তাই বলছে। আর সেই সুপ্রাচীন ইতিহাসের ঐতিহ্য মেনেই ২০১১ সালের নভেম্বরে আত্মপ্রকাশ করে বিবেক সিরিজের ট্রেনগুলি।
ভারতের সবচেয়ে দীর্ঘতম রুটের ট্রেন এই বিবেক এক্সপ্রেস। ২০১৩ সালে স্বামী বিবেকানন্দর সার্ধ জন্মশতাব্দী উপলক্ষে তাঁর নামেই উৎসর্গ করা হয়েছিল এই বিশেষ রুটের ট্রেনগুলি। শুরু হয় পরিষেবাও। তবে করোনা-কাঁটায় ২০২০ সালে বন্ধ হয়ে যায় ওই রুটের ট্রেন চলাচল। অতিমারীর ফাঁড়া কাটিয়ে ফের যাতায়াত শুরু করেছে ভারতের সবচেয়ে দীর্ঘতম রুটের এই ট্রেন।
আরও শুনুন: ৬০ বছর ধরে তীর্থযাত্রীদের করিয়েছেন অমরনাথ দর্শন, এখনও মন্ত্রপাঠ করেন বৃদ্ধ গুলাম নবি
এই গোটা যাত্রাপথে সে ছুঁয়ে যাবে অসংখ্য স্টেশন। তিনসুকিয়া, ডিমাপুর, গুয়াহাটি, বঙ্গাইগাঁও হয়ে সেই ট্রেন ঢুকে পড়বে বাংলাতেও। আলিপুরদুয়ার, শিলিগুড়ি, কিসানগঞ্জ, মালদা, রামপুরহাট হয়ে পৌঁছে যাবে দুর্গাপুর, আসানসোল এবং খড়্গপুরে। সেখান থেকেই ট্রেনটি ঢুকে পড়বে উড়িষ্যায়। বালাসোর, কটক, ভুবনেশ্বর হয়ে পৌঁছে যাবে সেই ট্রেন দক্ষিণের স্টেশনগুলিতে। বিশাখাপত্তনম, বিজয়ওয়াড়া, নেল্লোর, কোয়েম্বত্তুর এবং পালাক্কাড় হয়ে পৌঁছেবে তিরুঅনন্তপুরমে, এবং শেষমেশ সেখান থেকে পৌঁছবে কন্যাকুমারীতে। গোটা সফরে নানা ধরনের আবহাওয়া, হরেক ভাষা এবং হরেক রকমের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় হবে যাত্রীদের। সব মিলিয়ে যাত্রীদের কাছে গোটা সফরটাই একটা অন্যরকম অভিজ্ঞতা হতে চলেছে বলেই আশাবাদী রেলমন্ত্রক।