লোকসভা ভোট আর পরমাণু বোমা। যেন একই বৃন্তে দুটি কুসুম। শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। সম্প্রতি এমনই তথ্যের হদিশ মিলেছে, যা সহজেই প্রমাণ করে ভোট আর পরমাণু বোমার অন্তরঙ্গ সম্পর্কের কথা। ব্যাপারটা কী? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
নির্বাচনে অশান্তি নতুন ঘটনা নয়। সাধারণ ঝামেলা কখনও বোমাবাজি অবধি পৌঁছতে। কিন্তু সে মোটেও পরমাণু বোমা নয়। এমন তেজস্ক্রিয় জিনিস কারও হাতের নাগালেই আসে না। তার বিস্ফোরণ কল্পনা করাও কঠিন। তাও নাকি ভোটের জন্য! শুনলে মনে হবে নেহাতই বানানো গল্প। কিন্তু না, ইতিহাস বলছে ভোটের সঙ্গে পরমাণু বোমার রয়েছে এক বিশেষ সম্পর্ক।
আরও শুনুন: পাকিস্তান প্রেমে ‘কলঙ্কভাগী’ বিজেপিই! আডবাণীকে হাতিয়ার করে মোদিকে তোপ কংগ্রেসের
পরমাণু ক্ষমতা সম্পন্ন দেশকে সবসময় বিশেষ কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। চাইলেই তেজস্ক্রিয় বিস্ফোরণের এক্তিয়ার নেই কারও। এমনটা করলে ফলাফল কী হতে পারে, তা গোটা বিশ্বের মানুষ ভালমতো জানেন। হিরোসিমা নাগাসাকির ঘটনা এখনও অনেকের কাছে দুঃস্বপ্নের মতো। সুতরাং পরমাণু বোমা বিস্ফোরণ বা এই ধরনের ঘটনা সচরাচর শোনা যায় না বললেই চলে। তা এহেন ভয়ঙ্কর জিনিসের সঙ্গে ভোটের কী সম্পর্ক?
ফেরা যাক ভারতে পরমাণু বোমা তৈরির ইতিহাসে। ১৯৯৮ সালে পোখরানে প্রথমবার দেশের পরমাণু শক্তির পরীক্ষা হয়েছিল। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর এই উদ্যোগ দেশের ইতিহাসে স্মরণীয়। সেই পরমাণু বোমা তৈরিতে যে সংস্থার হাত ছিল, তারাই দেশের নির্বাচন সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করতে প্রধান ভূমিকা পালন করেন। কথা বলছি, ইভিএম মেশিনের। এই যন্ত্র যে সংস্থা তৈরি করে তারাই পরমাণু বোমা তৈরিতে সাহায্য করেছিল। যদিও একটি সংস্থা নয়। এক্ষেত্রে উল্লেখ করতে হয় দুটি সংস্থার নাম। প্রথমটি হায়দরাবাদের ইসিআইএল। এই সংস্থাই দেশের পরমাণু কেন্দ্রগুলি চালানোর জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। এছাড়া বিভিন্ন তেজস্ক্রিয় বোমা তৈরিতেও এই সংস্থার ভূমিকা অনস্বীকার্য। একইসঙ্গে ভারতীয় সেনার একাধিক প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম যা তাঁদের আভ্যন্তরীণ যোগাযোগে সাহায্য করে, সেইসবও তৈরি করে এই সংস্থাই। দেশের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে যে সংস্থা এমন সব যন্ত্র তৈরি ক্রে, ইভিএম তৈরি তাদের কাছে হাতের মোয়া! দ্বিতীয় সংস্থাটি ভারত ইলেকট্রনিক লিমিটেড বা বিইএল। বেঙ্গালুরুর এই সংস্থাও ভারতীয় সেনাবাহিনীর একাধিক গ্যাজেট তৈরি করে। বিশেষ করে দেশের জন্য মিসাইল বানাতে এই সংস্থার ভূমিকায় সর্বাধিক। এমনকি বিভিন্ন যুদ্ধবিমান, রকেটও তৈরি করে বিইএল। তাই ইভিএম মেশিন তৈরিতে এই সংস্থারও অবদান থাকে যথেষ্ঠই। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কী এমন থাকে এই যন্ত্রে, যার জন্য এইসব সংস্থার কাছে ইভিএম তৈরির বরাত যায়?
আরও শুনুন: ওয়ো রুম বন্ধ কেন? প্রতিবাদে বিজেপি বিধায়কের দপ্তরের সামনে চুম্বন যুগলের
দেখে সাধারণ মনে হলেও ইভিএম যন্ত্র যথেষ্টই জটিল। এর মধ্যে এমন প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়, যাতে কোনও নেটোয়ার্কা বা ওয়াইফাই ছাড়াই সংযোগ ব্যবস্থা তৈরি করা সম্ভব। একইসঙ্গে নির্ভুলভাবে ভোট গণনা করতেও এই যন্ত্রের জুড়ি মেলা ভার। স্রেফ প্রযুক্তির কথা ভাবলে এ যন্ত্র অন্য কোনও টেক সংস্থাও তৈরি করতে পারত। কিন্তু দেশের নির্বাচন যে যন্ত্রের সঙ্গে সরাসরি জড়িয়ে, সেয়ানে সুরক্ষার দিকটাও না ভাবলেই নয়। তাই বিইএল বা ইসিআইএল-এর অমতো সংস্থাকে এই যন্ত্র তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়। তৈরি করতে খরচও হয় যথেষ্টই। হিসাব বলছে গত নির্বাচনে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা খরচে ইভিএম তৈরি করেছিল কমিশন। চলতি নির্বাচনেও খরচের বহর প্রায় এক। জানা গিয়েছে, এবার ৫.৫ মিলিয়ন অর্থাৎ ৫৫ লক্ষ ইভিএম তৈরি হয়েছে। দায়িত্ব নিয়ে যা তৈরি করেছে এই দুই সংস্থাই। সেই যন্ত্র ব্যবহার করেই গোটা দেশে চলছে লোকসভা নির্বাচন।