রামলালার কপালে সূর্যতিলক। নেটদুনিয়ায় এই নিয়ে কম আলোচনা হয়নি। বিজ্ঞানীদের প্রশংসায় যেমন ভেসেছেন একদল, কটাক্ষ করতেও ছাড়েননি অনেকেই। আর সেই আবহে চর্চায় ফিরেছে দেশের কিছু প্রাচীন মন্দির। যেখানে সত্যিই মিলেমিশে এক হয়েছে ধর্ম আর বিজ্ঞান! আসুন শুনে নেওয়া যাক।
একদিকে বিজ্ঞান। অন্যদিকে ধর্ম। যুক্তির সঙ্গে বিশ্বাসের লড়াই আজকের নয়। ভারতের মতো দেশে ধর্মকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করা কঠিন। ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন না এমন মানুষও এ দেশে খুঁজে পাওয়া কঠিন। নামকরা বিজ্ঞানীই হন বা উচ্চশিক্ষিত বুদ্ধিজীবি, ভগবানের পায়ে মাথা নয়ত করেন প্রায় সকলেই। ইসরোর বিজ্ঞানীদের কথাই ধরা যাক। প্রতি অভিযানের আগে তাঁরা মন্দিরে ছোটেন পুজো দিতে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান এমন মানুষও পুজো না করে বাড়ি থেকে বেরোন না। তবু তর্কের শেষ নেই। ধর্মের সঙ্গে বিজ্ঞানের তুলনা টেনে প্রায়শই বচসায় জড়ান নেটদুনিয়ার বাসিন্দারা।
সম্প্রতি এমনই এক তর্ক জমেছিল রামমন্দিরকে কেন্দ্র করে। রামনবমীর দিন রামলালার কপালে সূর্যতিলক তৈরি করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। আর এতেই তাঁদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল নেটদুনিয়ায়। অনেকেই বাঁকা ভাবে বলেছিলেন, এর জন্য এত আয়োজনের কোনও অপ্রয়োজনীয়। এমনকি এর মধ্যে কোনও উচ্চমানের প্রযুক্তিই নেই, এই দাবিও তুলেছিলেন কেউ কেউ। পালটা জবাব এসেছিল ভক্তদের তরফেও। সবমিলিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। তাই বলে, ধর্মের সঙ্গে বিজ্ঞানের যে কোনও যোগ নেই এমনটা ভাবা যায় না। দেশের কিছু প্রাচীন মন্দিরের দিকে তাকালেই ধারণা স্পষ্ট হবে। যদি ধরে নেওয়া হয়, সে যুগের ভারতীয় বিজ্ঞান আজকের মতো এত উন্নত নয়, তাহলে পালটা প্রশ্ন তুলবে দেশের ওই মন্দিরগুলোই। স্থাপত্যের নিদর্শন হিসেবে তো বটেই, বিজ্ঞানের প্রয়োগের ক্ষেত্রেও এইসব মন্দির অবাক করে।
কোনারকের সূর্যমন্দিরের কথাই ধরা যাক। বলা হয়, মন্দিরের আরাধ্য সূর্য বিগ্রহ ভাসমান। এমনকি গোটা মন্দিরটাই অদ্ভুত পদ্ধতিতে তৈরি। মন্দিরের গায়ে থাকা প্রতিটা পাথরের সঙ্গে লোহার পাত জোড়া। যা ধাপে ধাপে উঠেছে। আর একদম উপরে রয়েছে বিরাট এক চুম্বক। যা গোটা মন্দিরটা ধরে রেখেছে বলেই মনে করেন অনেকে। যদিও এই নিয়ে মতভেদ রয়েছে। এছাড়া মন্দিরের গায়ে যে বিশাল মাপের রথের চাকা দেখতে পাওয়া যায়, সেও অবাক করে বইকি। হাম্পির বিখ্যাত ভিত্তালা মন্দির। ইউনেস্কো স্বীকৃতি পাওয়া এই মন্দিরের থামে আওয়াজ করলেই ভেসে আসে সুর। মন্দিরের আদল একতলা রথের মতো। একই জায়গায় উঁচু হয়ে থাকা নয়, বরং বেশ খানিকটা অঞ্চল জুড়েই এই মন্দির রয়েছে। আর সেখানেই রয়েছে বেশ কিছু সুরেলা থাম। এমনিতে এসব দৈব আশ্চর্য মনে হলেও, বিজ্ঞানীরা এর নেপথ্যে যুক্তি রয়েছে বলেই মনে করেন। অর্থাৎ বিশেষ কোনও প্রযুক্তি কাজে লাগিয়েই এই মন্দিরের অদ্ভুত সৃষ্টি। থামের প্রসঙ্গে বলতে হয় লেপাক্ষী মন্দিরের কথা। গোটা মন্দিরে মোট ৭০ টি পাথরের পিলার দেখা যায়। উচ্চতায় সবই প্রায় ২০ ফুট। তার মধ্যে একটি পিলার এমন যার মাটির সঙ্গে কোনও যোগ নেই। মানে এই পিলারের সঙ্গে মাটির খুব সামান্য ফাঁক রয়েছে। সেখান দিয়ে কাপড় কিংবা কাগজ সবই গলানো যেতে পারে। এদিকে উপরের অংশ মন্দিরের ছাদের সঙ্গে লাগানো। দেখে মনে হবে উপর থেকেই যেন পিলারটি ঝুলছে। কিন্তু যে সময় মন্দির তৈরি হয়েছে তখনকার দিনে এমন কিছু তৈরি করা আদৌ কতটা সম্ভব ছিল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। একইভাবে কৈলাশ মন্দির, কর্নাটকের হলেশ্বর মন্দির সহ উদয়গিরি অঞ্চলের কিছু মন্দির নিয়েও আলোচনা হতে পারে। সর্বত্রই রয়েছে এমন প্রযুক্তির প্রয়োগ যা অবাক করে রীতিমতো। এও শোনা যায়, রামলালার মতো সূর্যাভিষেকও বহু আগে কোনও এক মন্দিরের বিগ্রহকে করা হত। সেক্ষেত্রে একই প্রযুক্তি ব্যবহার হত কি না বলা মুশকিল। কিন্তু বিজ্ঞান যে ধর্মের হাত বহু আগে থেকেই ধরে রয়েছে তা এর থেকে স্পষ্ট হয়।