আজকের ডিজিটাল দুনিয়ায় ই-মেলের গুরুত্ব নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। ই-মেলের একার রাজত্বে এখন ভাগ বসিয়েছে আরও অনেক যোগাযোগ মাধ্যমই, তবুও প্রাতিষ্ঠানিক কাজে ই-মেলের জুড়ি নেই। কিন্তু জানেন কি, নিজেকে এই ই-মেলের জনক বলে দাবি করে থাকেন এক ভারতীয়? কিন্তু কেন? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
মার্কিন সেনাদের জন্য ইন্টারনেটের সাহায্যে চিঠি পাঠানোর পদ্ধতি আবিষ্কার করেছিলেন রে টমলিনসন। সেনাবাহিনীর খবর সবসময়েই শত্রুর কাছে ফাঁস হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে। কিন্তু কাগজের চিঠির মতো এই বৈদ্যুতিন চিঠি অন্য কারও পক্ষে খুলে পড়া কার্যত অসম্ভব, এমনটাই প্রচার করেছিল রে টমলিনসন-এর সংস্থা। কিন্তু গোটা আমেরিকা জুড়ে যখন তাঁকে নিয়ে হইচই চলছে, সেই সময়েই তাঁর কৃতিত্বের প্রতিবাদ করে বসেন এক ভারতীয়। দক্ষিণ ভারত থেকে আমেরিকায় আসা ওই ব্যক্তির নাম শিব আয়াদুরাই। যিনি দাবি করেছিলেন, মাত্র চোদ্দ বছর বয়সেই ই-মেল আবিষ্কার করে ফেলেছিলেন তিনি। এমনকি তার বছর কয়েক পরে এই আবিষ্কারের কপিরাইটও নাকি পেয়েছিলেন তিনি। বলার অপেক্ষা রাখে না, এক ভারতীয়ের এহেন দাবি ঘিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল তথ্যপ্রযুক্তির দুনিয়ায়।
আরও শুনুন: দেওয়ালে রং করলেই আলো জ্বলবে ঘরে, বিজ্ঞানীদের আশ্চর্য আবিষ্কার সৌর রং
ঠিক কী দাবি করেছিলেন শিব?
জানা গিয়েছিল, সাত বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে তামিলনাড়ু থেকে আমেরিকায় চলে আসেন শিব। স্কুলে পড়ার সময় তাঁর মায়ের কর্মক্ষেত্র, ইউনিভার্সিটি অফ মেডিসিন অ্যান্ড ডেন্টিস্ট্রিতে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করতেন তিনি। কোনও গুরুত্বপূর্ণ নথি, চিঠিপত্র, ফাইল, যে কোনও তথ্য এক ঘর থেকে অন্য ঘরে পাঠাতে হলেই কোনও মানুষকে তা নিয়ে ছুটতে হত। তাই দেখতে দেখতেই শিবের মাথায় এসেছিল এমন এক সফটওয়ার তৈরির ভাবনা, যেখানে একইসঙ্গে মানুষের পরিশ্রম কমানো যাবে, আবার গোপন তথ্যও থাকবে সুরক্ষিত। তখন তাঁর বয়স বছর চোদ্দ। আর সেই ভাবনা থেকেই এমন এক সফটওয়ার বানিয়েও ফেলেছিলেন তিনি। ১৯৮২ সালে ‘ই-মেল’ নামে ওই সফটওয়ারের কপিরাইটও পেয়ে গিয়েছিলেন তিনি। শিব দাবি করেছিলেন, রে টমলিনসন-এর সংস্থার প্রথম লিফলেট ছাপা হয়েছিল ১৯৮৬ সালে। রে টমলিনসন-এর অনেক আগেই সম্পূর্ণ অন্য প্রযুক্তিতে বৈদ্যুতিন চিঠি পাঠানোর উপায় আবিষ্কার করেন তিনি, জোর গলায় বলেন শিব আয়াদুরাই।
আরও শুনুন: শৌখিন প্রসাধন নয়, বিকল্প চিকিৎসার পদ্ধতি হিসেবেই শ্যাম্পু আবিষ্কার হয়েছিল ভারতে
২০১১ সালে টাইম ম্যাগাজিনে শিবের একটি সাক্ষাৎকারের শিরোনাম ছিল, ‘সেই ব্যক্তি যিনি ই-মেল আবিষ্কার করেছিলেন’। শিব আয়াদুরাই-এর দাবিকে সমর্থন জানিয়েছিল ওয়াশিংটন পোস্ট এবং স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউট। কিন্তু বিরোধী মতের চাপে পরবর্তী কালে তারাও মত বদলায়। যদিও নিজের দাবি থেকে কখনোই সরে আসেননি শিব আয়াদুরাই। বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির একাধিক শাখায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করলেও, নিজেকে ‘ই-মেলের আবিষ্কারক’ বলতেই ভালবাসেন তিনি।