রাখঢাক ছেড়ে যৌনসুখের খোঁজ জনগণের, আর তাতেই বাড়ল দেশের বাণিজ্য- এমনটাই বলছে আর্থিক হিসেবনিকেশ। অথচ জানেন কি, একসময় কন্ডোমের বিজ্ঞাপনে পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা টেনেছিল ভারত?
যৌনতাকে অস্বীকার করার সাধ্য না থাক, যৌনতা নিয়ে ট্যাবু আছে ভরপুর। তাই কামসূত্রের দেশেও যৌনতা নিয়ে কেবলই রাখঢাক। যেন লোকে জানলেই যত অস্বস্তি। আর সেই কারণেই, যৌনতা নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও কথা বলতেই আপত্তি এ দেশের। যার প্রভাব পড়েছিল কন্ডোমের বিজ্ঞাপনেও। হ্যাঁ, দেশে যৌনসুখের বাণিজ্য যতই রমরমিয়ে চলুক না কেন, প্রকাশ্যে তার বিজ্ঞাপন করায় একসময় টানা হয়েছিল নিষেধাজ্ঞা। বিষয়টা ঠিক কী? তাহলে খুলেই বলা যাক।
সালটা ১৯৯১। সেই সময়েই টিভির পর্দায় আছড়ে পড়েছিল এক কন্ডোমের বিজ্ঞাপন। সুঠাম চেহারার মার্ক রবিনসনের শরীর যতখানি দেখা যাচ্ছে তাতে একটি সুতোও নেই। অন্যদিকে পূজা বেদীও প্রায় একই অবস্থায়। কোথাও সামান্য লজ্জা ঢেকেছে একটিমাত্র তোয়ালে। কোথাও বোতামখোলা শার্ট প্রায় খুলে পড়ার মুখে। দুজনের চোখে চোখে কামনার ঝড়। উন্মুক্ত পোশাকে বিদেশি পুরুষ মডেলের সঙ্গে ভারতীয় অভিনেত্রীর এহেন ঘনিষ্ঠ দৃশ্য দেখে চক্ষু চড়কগাছ দেশবাসীর। সেই সময়ের একাধিক ব্রিটিশ পত্রিকা দাবি করেছিল, এই বিজ্ঞাপনের হাত ধরেই ভারতে যৌনতার বিপ্লব শুরু হয়। কিন্তু হলে হবে কী, যখন ‘যৌনতা’ শব্দটি শুনলেই চারিদিকে চোখ চাওয়াচাওয়ি হত, সেই সময়ে গর্ভনিরোধের প্রকাশ্য বার্তা ভালো চোখে দেখেনি এ দেশ। দূরদর্শনে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয় বিজ্ঞাপনটি।
মজার ব্যাপার হল, একসময় সুরক্ষিত যৌনতা নিয়ে প্রকাশ্য কথা বলতে গিয়েই সরকারের কোপে পড়েছিল কন্ডোমের বিজ্ঞাপনটি। অথচ সম্প্রতি জানা গিয়েছে, বিগত এক বছরে দেশে যৌন উদ্দীপক বা এই সংক্রান্ত জিনিস বিক্রির হার বেড়েছে রমরমিয়ে। লাভও হয়েছে ঢের। হিসাব বলছে বিগত এক বছরে, সামগ্রিক ভাবে ১৭ শতাংশ বিক্রি বেড়েছে এইসব যৌন উদ্দীপকের। আলাদাভাবে প্রতিটি ভেষজ ওষুধ বিক্রির হিসাবেও দেখা যাচ্ছে, এসবের চাহিদা তুঙ্গে। বিভিন্ন ওষুধ যা যৌন ক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে, সেক্স টয় জাতীয় সামগ্রী, সবকিছুরই চাহিদা আগের তুলনায় বেড়েছে। অর্থাৎ এতদিন যৌনতা উপভোগের কথা বলতে অনেকেই যে অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন, এখন তা কাটিয়ে উঠে নিজেদের চাহিদা ও সমস্যা নিয়ে তুলনায় বেশি কথা হচ্ছে। যৌনতা বিষয়ে লুকিয়েচুরিয়ে ভুল জানাজানির চেয়ে তা নিয়ে কথা বলাই যে কাঙ্ক্ষিত, তা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তিরিশ বছরের ব্যবধানে এ বদল যদি ঘটেই থাকে, তবে তা পরিণতিরই লক্ষণ।