স্বাধীনতা দিবসের ৭৫ বছর। জাতির জীবনে এ এক আশ্চর্য গৌরবের ক্ষণ। আর এই ক্ষণেই আমরা স্মরণ করি তাঁদের, যাঁদের অসম সাহস আর আত্মবলিদানের জন্যেই আজ আমরা বাস করছি এই স্বাধীন সকালে। তাঁদের উদ্দেশে সংবাদ প্রতিদিন শোনো-র শ্রদ্ধার্ঘ্য।
১৯০৫ সাল। বাংলার মানচিত্র সেদিন জেগে উঠেছিল এক আগুনে প্রতিজ্ঞায়। কিছুতেই বাংলাকে ভাগ হতে দেওয়া যাবে না। প্রথমে নেওয়া হয়েছিল আবেদন, নিবেদনের পথ। কিন্তু পরাধীন জাতির সেই আবেদনে কান দিলেন না লর্ড কার্জন। ইংরেজের ঘা খেয়ে সেদিন জেগে উঠেছিল এক অখণ্ড জাতিসত্তা। রবি ঠাকুর দিলেন হাতে হাত রেখে বেঁধে বেঁধে থাকার মন্ত্র- ভাই ভাই এক ঠাঁই। লিখে দিলেন জাগরণের মাঙ্গলিক – বাংলার মাটি বাংলার জল/ বাংলার বায়ু বাংলার ফল/ পুণ্য হউক পুণ্য হউক হে ভগবান। বাঙালি সেদিন একজোট। রুখতে হবে বাংলা ভাগ।
সমবেত বাঙালির সেই জাগরণে টনক নড়ল ইংরেজের। ভয়ের ঠান্ডা স্রোত নেমেছিল সাম্রাজ্যবাদীদের শিরদাঁড়ায়। অতএব জারি হল ফতোয়া। বন্দেমাতরম উচ্চারণ করা যাবে না। করলেই নেমে আসবে মার। লাঠি তো ছার, বেয়নেট উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ইংরেজের পুলিশ। তবু, বাঙালি সেদিন মনে মনে জানত- ‘শাসনে যতই ঘেরো আছে বল দুর্বলেরও।’ বাঙালি যেন সম্মিলিত ভাবে ইংরেজের চোখে চোখ রেখে সেদিন এই কথাটাই বলে উঠেছিল। যত মারের ভয়, তত জেদে শক্ত হয়ে ওঠে বাঙালির চোয়াল। শত মারের মুখেও সে বন্দেমাতরম বলবেই। সেই সাহস, জেদের এক অসামান্য উদাহরণ কিশোর চিত্তরঞ্জনের ঘটনা। আমরা স্মরণ করি সেই বিস্মৃতপ্রায় মুহূর্তটিকে।
আরও শুনুন – ব্রিটিশদের তুষ্ট করতেই ‘জনগণমন’ লিখেছিলেন Rabindranath Tagore! সত্যিটা কী?
বাংলা ভাগ করতে কার্জন যেরকম সচেষ্ট, বাংলাকে অখণ্ড রাখতে তেমনই দাঁতে দাঁত চাপা লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিল বাঙালি। এক অভূতপূর্ব জাগরণ তখন বাঙালির শিরায় উপশিরায়। এক নির্ভীক সন্ন্যাসী সেদিন বাঙালির সামনে দাঁড়িয়ে দৃপ্ত কণ্ঠে বলছেন, তেত্রিশ কোটি দেবতা নয়। তোমার উপাস্য দেবতা তোমার সামনে, সে তোমার জন্মভূমি। ঋষি বঙ্কিমের আনন্দমঠ-এর পাতা থেকে বাঙালির চেতনায় যেন জাগ্রত হয়ে উঠল দেশমাতৃকার মূর্তিখানি। বাঙালির কণ্ঠে উঠে এল সেই মাতৃমূর্তির আবাহন মন্ত্র– বন্দেমাতরম্।
১৯০৫ সালের ৭ আগস্ট। টাউন হলে সেদিন লোকে লোকারণ্য। কার্জনের বঙ্গভঙ্গ রদের বিরুদ্ধে সেদিন বিলিতি জিনিস বয়কটের শপথ নিল বাঙালি। সভায় এসেছিলেন ডাক্তার নীলরতন সরকার। পরনে ছিল সাহেবি পোশাক। আবেগে হঠাৎ গলা থেকে খুলে ছুড়ে ফেলে দিলেন টাইখানি। প্রতিজ্ঞা করলেন, বিলাতি জিনিস ব্যবহার আর নয়।
কিন্তু বাঙালির আশা ব্যর্থ করে অনড় রইলেন কার্জন। নেমে এল জাতীয় বেদনার ক্ষণ। তা চিহ্নিত করে রাখতে বাঙালির ঘরে ঘরে পালিত হল অরন্ধন উৎসব।
বাকিটা শুনে নিন প্লে-বাটন ক্লিক করে।