ঘরে বিছানা থাকা সত্ত্বেও মাটিতেই ঘুমোন এই গ্রামের বাসিন্দারা। শরীর খারাপ হলেও এঁরা মাটিতেই শতরঞ্চি পেতেই ঘুমোন। এমনকি বাড়িতে কোনও অতিথি এলে তাঁর ঘুমানোর ব্যবস্থাও মাটিতেই করা হয়। কেন এমন অদ্ভুত নিয়ম মেনে চলেন এই গ্রামের বাসিন্দারা? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
গ্রামের সকলেই মাটিতে ঘুমোন। গ্রামের আরাধ্যা দেবীকে সন্তুষ্ট রাখতেই নাকি এমন অদ্ভুত নিয়ম পালন করেন সকলে। তাঁদের বিশ্বাস ঘুমানোর বিছানা ব্যবহার করলেই অনর্থ ঘটে যেতে পারে।
আরও শুনুন: জায়গার ফেরে বদলায় স্বাদ! কেন জয়নগরের মোয়াই বাঙালির একান্ত প্রিয়?
শুনতে অবাক লাগলেও ওড়িশার তিপিরসিঙ্গা গ্রামের বাসিন্দারা কোনোদিনই বিছানায় ঘুমান না। তাঁদের ধারণা এতে গ্রাম্যদেবী রুষ্ট হবেন। তাই তাঁকে সন্তুষ্ট রাখতেই বিছানা ব্যবহার করেন না গ্রামবাসীরা। দেওঘর জেলার এই গ্রামে বহুদিন ধরেই বাস করেন আদিবাসী সম্প্রদায় ভুক্ত জনজাতি। তাঁরাই নিজেদের গ্রামে এমন নিয়ম চালু করেছেন। যা মানতে বাধ্য ছোট থেকে বড় সবাই। তবে সে ব্যাপারে কোনও আক্ষেপ নেই তাঁদের। গ্রামবাসীদের মতে তাঁরা পরম ভক্তি সহকারে বারিহানি দেবীর নিত্যপূজা করেন। দেবীর দয়াতেই তাঁরা সুখে শান্তিতে বেঁচে আছেন। সেই দেবী নাকি বিছানায় শুয়ে ঘুমের বিষয়টি পছন্দ করেন না। তাই বিছানায় ঘুমোলেই বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে বলে মনে করেন গ্রামবাসীরা। এমনকি গ্রামে কোনও অতিথি রাত কাটাতে এলে তাঁকেও মাটিতেই ঘুমাতে হয়। এছাড়াও তাঁরা মনে করেন বিছানায় ঘুমোলে সাপ চলে আসতে পারে। আর ঘুমের মধ্যেই সাপের ছোবলে মৃত্যু হতে পারে যে কারও।
আরও শুনুন: বেঁচে ফিরলেন ‘নিহত’ তরুণী, ঘটনায় হতবাক খুনের দায়ে জেলবন্দি আসামি
এ প্রসঙ্গে বিভিন্ন লোককথাও প্রচলিত আছে সেই গ্রামে। একবার এক নববিবাহিত দম্পতিকে উপহার হিসাবে একটি খাট উপহার দিয়েছিলেন পাত্রীর বাবা। বিয়ের পর সেই বিছানাতেই ঘুমাতে যান তাঁরা। কিন্তু মাঝরাতে হঠাৎ খাট ভেঙে যায়। যা দেখে গ্রামের সকলে বলেন দেবী রুষ্ট হয়েছেন তাই এমন হয়ছে। তখনি সেই খাট পাত্রীর বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এবং গ্রামের নিয়ম মেনে তাঁরাও মাটিতেই ঘুমোতে আরম্ভ করেন। খানিকটা লোককথা আর প্রচলিত বিশ্বাসের জেরেই বিছানাকে ছেড়েছেন এই গ্রামের বাসিন্দারা। বরং মাটির কোলেই তাঁদের সুখের ঘুম। অবশ্য এই মাটিতে মাদুর বা চাটাই পেতে শোয়ার রেওয়াজ মানুষের বহুদিনেরই। ক্রমে ক্রমে তার জায়গা নিয়েছে বিছানা। সেই পুরাতন রীতিই যেন ধর্মবিশ্বাসের মোড়কে বেঁচে আছে ওড়িশার এই গ্রামে।