বেড়াতে গেছেন, ধরা যাক, আগে থেকেই হোটেল বুক করে রেখেছেন। যাতে গন্তব্যে পৌঁছে আর কোনও ঝামেলা সহ্য করতে না হয়। এবার যদি গিয়ে দেখেন, হোটেল আছে, কিন্তু হোটেলের রুমে মাথার উপর ছাদটাই নেই, তাহলে! আরও দেখলেন, ছাদ তো দূরের কথা, রুমের চারটে দেওয়াল-ও যে নেই! এই দেখে অবাক হবেন না রেগে যাবেন, সে পরের কথা, কিন্তু ঘটনা হল ঠিক এরকমই এক হোটেল আছে বাস্তবেই। আর সেখানে রুমের ভাড়া নেহাত কম কিছু নয়। ছাদহীন-দেওয়ালহীন সেই হোটেলের রুমে থাকতে গেলে প্রতি রাতের জন্য গুনতে ২৬টি হাজার টাকা। তা, এমনধারা হোটেল আছে কোথায়? আসুন শুনেই নেওয়া যাক।
খুব গরম পড়লে খোলা আকাশের নিচে শোয়ার অভ্যাস অনেকেরই আছে। বাড়ির সামনের মাঠে চৌকি পেতে নিশ্চিন্তে ঘুমানোর দৃশ্য আমাদের দেশে নতুন নয়। কিন্তু সুইজারল্যান্ডে ঘুরতে গিয়ে অনেকেই রাত কাটাচ্ছেন খোলা আকাশের নিচে! এমনটা কি ভাবা যায়? বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও, এমনইটা-ই কিন্তু ঘটছে সেখানে। আসলে যাঁরা এই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হচ্ছেন, তাঁরা থাকছেন এক বিশেষ ধরনের হোটেলে। যাকে বলা হয় ‘জিরো স্টার হোটেল’। বলতে গেলে, নামেই হোটেল। রাস্তার ধারে একটি পেট্রোল পাম্পের পাশে পাতা আছে একটা খাট। দুপাশে দুটি টেবিল আর সঙ্গে দুটি ল্যাম্প। ব্যস, এতটুকুই। আর এখানেই থাকার জন্য প্রতি রাতের ভাড়া ২৬ হাজার টাকা।
আরও শুনুন: একাই একশো! ঘাঁটিতে ঢুকে ৪০ জন রুশ সেনাকে ঘায়েল করল ইউক্রেনের ছাগল
এই অভিনব ভাবনার কারিগর ফ্রাঙ্ক ও পেট্রিক নামে দুই যমজ ভাই। সারা বিশ্বের হোটেলগুলি যখন অতিথির বিলাসিতার কথা চিন্তা করতে ব্যস্ত, এই দুই ভাই তখন হাঁটতে চাইছেন একেবারে উলটোপথে। প্রথমে সুইজারল্যান্ডের বেশ কিছু পাহাড়ের কোলে এমন ছাদবিহীন ঘরের হোটেল তাঁরা শুরু করেন। তারপর হঠাৎই এমন অদ্ভুত ভাবনা তাদের মাথায় আসে। একেবারে রাস্তার ধারে পেট্রোল পাম্পের পাশে শহরের যাবতীয় কোলাহল সঙ্গে নিয়েই তৈরি করেছেন নতুন আর-একটি হোটেল।
তাঁদের বক্তব্য, এভাবে থাকার দরুন মানুষজন একটু অন্যরকম ভাবে ভাবতে পারবে। তাঁরা মনে করছেন বর্তমান পৃথিবীর যা পরিস্থিতি তাতে ঘুমানোর থেকে বেশি দরকারি পারিপার্শ্বিক বিষয় নিয়ে চিন্তা করা। এখানে যাঁরা রাত কাটাতে আসবেন, তাঁরা যেন সারারাত ধরে জলবায়ু পরিবর্তন, যুদ্ধ পরিস্থিতি কিংবা প্রকৃতির সংরক্ষণের উপায় নিয়ে ভাবেন – এমনটাই চান দুই মালিক। এমনকী তাঁরা এও বিশ্বাস করেন, ভবিষ্যতে নাকি বিলাসিতা ছেড়ে মানুষ এরকম হোটেল গুলিতেই রাত কাটাতে আসবেন।
আরও শুনুন: আশ্চর্য ক্ষমতা এই জাদু-আংটির! বারবার হারালেও ফিরে আসে ঠিক মালকিনের কাছেই
যদিও রুম সার্ভিসের সুবিধা এই হোটেলেও থাকছে। খাটে শুয়ে অর্ডার করলেই চলে আসবে ব্রেকফাস্ট বা পছন্দসই পানীয়। ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে বুকিং-ও। আসলে প্রকৃতির সান্নিধ্য পেলেই প্রকৃতি, পরিবেশ আর মানুষের কথা ভাবনার সূত্রগুলি বোধহয় খুলে যায়। মানুষ নিজেকে চিনতে পারে। হোটেল ব্যবসার খাতিরে সেই ভাবনা বা দর্শনের কাছেই মানুষকে পৌঁছে দিতে চাইছেন এই হোটেলের মালিক।