দেশটা পাকিস্তান। মহিলাদের জন্য সেখানে পায়ে পায়ে গণ্ডি টানা। মেয়েদের পক্ষে সেখানে খেলাধুলো করা সহজ কথা নয়। সেই প্রতিকূল পরিবেশেই এবার নতুন করে বাধা খাড়া করল তীব্র দাবদাহ। কেন মহিলা খেলোয়াড়দেরই বাড়তি বিপাকে ফেলছে এই তীব্র গরম? শুনে নেওয়া যাক।
তীব্র দাবদাহে অস্থির দেশ। অস্থির সব মানুষই। কিন্তু কেবল শারীরিক অসুবিধা নয়, মনে মনেও ছটফট করছেন দেশের মহিলা খেলোয়াড়েরা। গরমের জেরে তাঁদের খেলাই বন্ধ হয়ে যাবে কি না শেষমেশ, সে চিন্তাতেই অস্থির তাঁরা। হ্যাঁ, পাকিস্তানের ছবিটা আপাতত এমনই। গরমের জেরে মানুষের অসুবিধার শেষ নেই এমনিতেই। তীব্র দাবদাহে যে কোনও কাজ করাই যেন অসম্ভব। বিশেষ করে শারীরিক পরিশ্রমের কাজ। কিন্তু সেই সামগ্রিক সমস্যার চেয়েও অতিরিক্ত এক সংকটে পড়েছেন পাকিস্তানের মহিলা খেলোয়াড়েরা।
আরও শুনুন:
নারীর সম্মান তার যোনিতে রেখেছে কে! পালটা প্রশ্ন তুলেছিলেন কমলা ভাসিন
আসলে মেয়েদের জন্য সে দেশে এমনিতেই পদে পদে নিয়মের বেড়াজাল। রক্ষণশীলতার জেরে মেয়েদের খেলার দুনিয়ায় আসা বড় সহজ নয়। খেলার জন্য ছোট পোশাক পরা, যে কোনও জায়গায় যাওয়া, বেশি রাতে বাড়িতে ফেরা- এইসব কিছুর প্রতিই সমাজের ভ্রূকুটি জেগে থাকে। মেয়েদের জন্য সারা শরীর ঢাকা পোশাকের যে বিধান জারি রয়েছে, সেই সমাজে খেলার ইউনিফর্ম পরে প্রকাশ্যে অনুশীলন চালানোই সম্ভব নয়। অথচ ঢাকা স্টেডিয়ামই বা কোথায়! দেখা যাচ্ছে গোটা জ্যাকোবাবাদের জনসংখ্যা ৩ লক্ষ, আর সেখানে মাত্র একটি স্পোর্টস অ্যাকাডেমি রয়েছে মহিলাদের জন্য। সেই জ্যাকোবাবাদ, যা গোটা বিশ্বের উষ্ণতম স্থান বলে স্বীকৃতি পেয়েছে। চলতি বছরে সেখানে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে মাঝেমধ্যেই। সেখানেও অনুশীলন করার জন্য চারদিক ঢাকা উপযুক্ত স্টেডিয়াম মাত্র ওই একটিই। অন্য সময়ে তাও শরীর ঢাকা জামাকাপড় পরে বাইরের মাঠে অনুশীলন চালাতে পারেন মেয়েরা। কিন্তু এই প্রবল গরমে দিনের বেলায় খোলা মাঠে শারীরিক কসরত করা, তাও আবার সারা শরীর ঢেকে, সে কি আদৌ সম্ভব! ফলে হয় তাঁদের খুব ভোরে উঠে প্র্যাকটিসে নামতে হয়, তখন কোনও পুরুষকে চোখে পড়বে না এই আশা রেখে। বাধ্য হয়ে বিকেলের দিকে অনুশীলন শুরু করেছেন অনেক মহিলা খেলোয়াড়, কিন্তু তাতে আবার বাড়ি ফিরতে রাত বেড়ে যায়। এহেন বেনিয়ম মেনে নিতেও নারাজ অনেকের পরিবার। হকি খেলোয়াড় আকসা শাব্বির বা হাসিনা সুমরো-রা বুঝতে পারছেন, এর জেরে নিজেদের সেরাটা দিতে পারছেন না তাঁরা। আর টানা খারাপ পারফরম্যান্সের জের তাঁদের কতখানি পিছিয়ে দেবে, সে আশঙ্কাতেই আপাতত কাঁটা হয়ে আছেন তাঁরা। পুরুষেরা যখন স্রেফ টিশার্ট আর শর্টস গলিয়ে অনায়াসে দৌড়ে যান বা কসরত করেন, তাঁদের দেখে বড্ড হিংসে হয়, বলছেন এই তরুণীরা।
আরও শুনুন:
মেয়েদের প্রশ্ন করাই মানা! সঞ্চালিকা মন্দিরাকে পাত্তাই দিতেন না ক্রিকেট তারকারা
একেই দেশটার নাম পাকিস্তান। ধর্ম আর সমাজ, দুইই সেখানে মেয়েদের অন্তঃপুরে আটকে রাখতে চায়। সেইসব প্রতিকূলতা পেরিয়ে ক্রমে ক্রমে খোলা মাঠে পা রেখেছিলেন মেয়েরা। কিন্তু এবার পরিবেশের প্রতিকূলতাতেই সেই খোলা পরিসরটুকু তাঁদের সামনে ফের বন্ধ হয়ে যাবে কি না, সেটাই চিন্তা পাকিস্তানের মহিলা খেলোয়াড়দের।