মকর সংক্রান্তি মানে কোথাও গঙ্গায় পুণ্যস্নান তো কোথাও নতুন গুড়ের পিঠেপুলি। শুধু বাংলা নয়, এই উদযাপন চলে গোটা দেশেই। অঞ্চলভেদে পালটে যায় উৎসবের নাম, সেসব পালনের রীতিও। গোটা দক্ষিণ এশিয়া জুড়েই রয়েছে মকর সংক্রান্তি পালনের প্রথা। কোথায় কী ভাবে পালন হয় মকর সংক্রান্তি? শুনে নিন।
বাংলায় যেমন পৌষপার্বণ বা ফসলের উৎসব, তামিলনাড়ুতে এই সময়টা পালন করা হয় ‘পোঙ্গল’। এই অনুষ্ঠানও কৃষির সঙ্গেই সম্পর্কযুক্ত। কর্নাটকেও এ সময়টা সূর্যের আরাধনা করা হয়। সেখানে এই অনুষ্ঠানের নাম ‘মকর সংক্রমণা’ বা ‘ইল্লু বিল্লা’। অন্ধ্রপ্রদেশের তেলঙ্গানায় আবার এই অনুষ্ঠানের নাম ‘পেদ্দা পান্ডুগা’। বাড়িতে অতিথি আগমন হয় এ সময়টায়। বাড়ি সাজানো হয় রঙ্গোলি দিয়ে। পুজো শেষে হয় চড়ুইভাতিও।
আরও শুনুন: খুলবে শক্তির অফুরন্ত ভাঁড়ার, পৃথিবীকে বিস্মিত করে নয়া রেকর্ড গড়ল চিনের ‘কৃত্রিম সূর্য’
গুজরাটে এ সময় পালন করা হয় ‘উত্তরায়ণ’। আর সেই অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে ঘুড়ির উৎসব। প্রায় প্রত্যেক বাড়ির ছাদে ছাদেই বসে ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা। আকাশ রঙিন হয়ে ওঠে রকমারি ঘুড়িতে। ওই ঘুড়ির মাধ্যমেই সূর্যের কাছে নিজেদের প্রার্থনা পৌঁছে দেন গুজরাটবাসীরা। রাজস্থানেও রয়েছে এই রেওয়াজ।
অসমে মকরসংক্রান্তি মানেই ‘ভোগালি বিহু’ বা ‘মেঘ-বিহু’। এ-ও আসলে ফসলেরই উৎসব। আগুনের দেবতাকে প্রণাম জানানো হয় এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে।
মহারাষ্ট্রে পালিত হয় ‘তিলগুল’ উৎসব। তিলগুল আদতে তিলের তৈরি এক ধরনের মিষ্টি। এই মকর সংক্রান্তিতে সেই মিষ্টি আদানপ্রদানের রেওয়াজ রয়েছে মহারাষ্ট্রে। মধ্যপ্রদেশে এই অনুষ্ঠানের নাম ‘সুকরাত’, কাশ্মীরে আবার ‘শায়েন-ক্রাত’।
উত্তর ভারতের হরিয়ানা, হিমাচল, পঞ্জাব ও জম্মুতে এ সময় পালন হয় ‘লোহরি’। বনফায়ার জ্বালিয়ে সেটিকে ঘিরে ঘরে নাচ-গানের মাধ্যমে উদযাপন করা হয় এই অনুষ্ঠান। অনেকে আবার একে মাঘী উৎসবও বলে থাকেন। বিহার, উত্তরপ্রদেশ ও ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন জায়গায় এই উৎসবকে ‘খিচড়ি পরব’ বলে।
আরও শুনুন: কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোয় ভুলেও এই কাজগুলো করবেন না, দুর্ভাগ্য পিছু ছাড়বে না
শুধু ভারতেই নয়, ভারতবর্ষের বাইরেও বেশ কিছু জায়গায় পালিত হয় মকর সংক্রান্তি উৎসব। নেপালে এ অনুষ্ঠানের নাম ‘মাঘে সংক্রান্তি’। ট্র্যাডিশনাল থেরু পোশাকে এ সময়টা সেজে ওঠেন সেখানকার মানুষ। স্থানীয় নাচগানের সঙ্গে খাওয়াদাওয়ায় মেতে ওঠেন সকলে। থাইল্যান্ডে এ অনুষ্ঠানের নাম ‘সংক্রান’। কম্বোডিয়ায় পালিত হয় ‘মহাসংক্রান’।
গোটা দক্ষিণ এশিয়া জুড়েই এ সময়টা অনুষ্ঠানের রমরমা। কোথাও লক্ষ্মীর পুজো, তো কোথাও সূর্যদেবতার আবাহন, কোথাও আবার শস্যের পুজো হয়। প্রায় সব জায়গাতেই এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উৎপাদনী শক্তিকে আবাহন জানানো হয়। নাম রেওয়াজ আলাদা, পুজোর সরঞ্জাম কিংবা প্রসাদও অঞ্চলভেদে আলাদা আলাদা। সব মিলিয়ে এ অনুষ্ঠান আদতে মানুষের নিজের মাটির উৎসব।