জন্মাষ্টমীর দিনে যেমন ‘তালের বড়া’ খাওয়ার রীতি, তেমনই সরস্বতী পুজোয় নাকি কুল খেতেই হয়। দেশ জুড়েই বিভিন্ন ঋতুতে যে যে দেবতার পুজো হয়, সেই ঋতুর প্রচলিত ফলটিকেই দেবতাকে নৈবেদ্য হিসেবে দেওয়া হয়। মনে করা হয়, এমন নিয়ম গড়ে ওঠার নেপথ্যে রয়েছে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পরোক্ষে বাড়ানোর কৌশলও। শুনে নিন সেই কথা।
হিন্দু ধর্মে দেবদেবীর সংখ্যা নাকি তেত্রিশ কোটি। তাই প্রতি ঋতুতেই এক বা একাধিক দেবতার আরাধনা করেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। আর সেই ঋতুর বিশেষ ফল বা সবজি দিয়েই দেবতাকে ভোগ দেন তাঁরা। মরশুমের সেরা জিনিসটি দেবতাকে অর্পণ করার মধ্যে যেমন ভক্তি রয়েছে, তেমনই এর নেপথ্যে থাকতে পারে আরও একটি কারণও। মূলত প্রতি ঋতুতেই বিশেষ কিছু রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। আবার সেই রোগের হাত থেকে বাঁচার প্রতিরোধক হিসেবে বিভিন্ন ফল বা সবজিও সেই ঋতুতেই সাজিয়ে রাখে প্রকৃতি। প্রসাদের অছিলায় সেগুলি খাওয়া হলে বাড়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। যাদের নিজের জন্য সেই ফল কিনে খাওয়ার সাধ্য থাকে না, এই প্রথার দরুন উপকৃত হন তাঁরাও।
আরও শুনুন: পশুর চর্বি থাকায় সাবান ছুঁতেন না দেশবাসী, বিজ্ঞাপনে এগিয়ে এলেন খোদ রবীন্দ্রনাথ
যেমন ধরা যাক, বর্ষাকালে বিভিন্ন রোগের প্রকোপ বাড়তে দেখা যায়। তাই বর্ষায় উদযাপন করা উৎসবগুলির মধ্যে মরশুমি ফল খাওয়ার প্রবণতাও বেশি। উদাহরণ হিসেবে প্রথমেই বলা যায় ছত্তিশগড়ের এক লৌকিক উৎসবের কথা। স্থানীয় ভাষায় হারেলি নামে পরিচিত এই উৎসবে শস্যের দেবীর পুজো করা হয়। আর পুজোর প্রসাদ হিসেবে দেওয়া হয় নানান বন্য গাছপালার শিকড়, যেগুলির যথেষ্ট ঔষধি গুণ রয়েছে। বর্ষাকালের নানান রোগের প্রকোপ থেকে শরীরকে বাঁচাতে পারে সেইসব শিকড়।
একইভাবে দক্ষিণ ভারতেও জুলাই-অগস্ট মাস নাগাদ যেসব উৎসবগুলি পালন করা হয়, তার বেশিরভাগই বর্ষা ঋতুকে কেন্দ্র করে। আর এই উৎসবগুলিতেও প্রসাদ হিসেবে দেওয়া বিভিন্ন ভেষজ পথ্য। খাদ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্ষার শুরুতেই নিয়মের অছিলায় এইসব পথ্য খাওয়ার দরুন সাধারণ মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যথেষ্ট হারে বৃদ্ধি পায়। বর্ষা চলাকালীন মালয়ালি সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষজনও কোনও মন্দিরের পুজোর প্রসাদ হিসেবে বিভিন্ন শাকসবজি ঘরে এনে রাখেন।
একইসঙ্গে বলতে হয় বাংলায় পালিত হওয়া উৎসবগুলির কথাও। বর্ষাকালের অন্যতম প্রচলিত উৎসব জন্মাষ্টমী। যেখানে দেবতাকে তাল নিবেদন করাই রীতি। পাশাপাশি দেশের অন্যান্য প্রান্তেও জন্মাষ্টমী উপলক্ষে বিভিন্ন মরশুমি ফলমূল খাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে।
আরও শুনুন: জ্বলছে মোমবাতি, চলছে মন্ত্রপাঠ, সামনে রাখা খুলি… কী হত ঠাকুরবাড়ির গুপ্তসভায়?
পশ্চিম ভারতীয় প্রদেশগুলিতে অন্যতম বড় উৎসব গণেশ চতুর্থী। এই পুজো উপলক্ষে ‘মাতলি’ নামের এক প্রসাদ খাওয়ার চল রয়েছে, যা আসলে বিভিন্ন ভেষজের মিশ্রণে তৈরি করা খাদ্য বিশেষ। এমনিতেও রান্নায় ব্যবহার করা হলুদের মতো বিভিন্ন মশলা অজান্তেই শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তাই সেগুলো ব্যবহার করে দেবতার জন্য ভোগ রান্না করলে সেই প্রসাদে খানিক ঔষধি গুণ থাকবে এ কথা বলাই বাহুল্য। উড়িষ্যায় পালন করা রথযাত্রা থেকে আরম্ভ করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন উৎসব তাই আমাদের অজান্তেই বিভিন্ন নিয়মের মাধ্যমে আমদের উপকার করে আসছে, এ কথা বলাই যায়।