গ্রাহকের বাড়ি থেকে নোংরা জামাকাপড় নিয়ে আসা। তারপর সেগুলো পরিষ্কার করে আবার ফেরত দেওয়া। স্রেফ এতটুকু কাজ। অথচ এই পরিষেবা দিয়েই ১০০ কোটি টাকার ব্যবসা ফেঁদেছেন এক যুবক। কার কথা বলছি? আসুন শুনে নিই।
কাপড় কেচেই একশো কোটির মালিক। তাও আবার এমন একজন যিনি স্নাতক হয়েছেন আইআইটি থেকে। ভাবছেন তো, দেশের নামকরা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে পড়শোনা করে তিনি কাপড় কাচার ব্যবসা শুরু করলেন কেন? সেখানেই লুকিয়ে এই যুবকের সাফল্যের গল্প। স্রেফ কাপড় কাচা বা এই সংক্রান্ত পরিষেবা দিয়েও যে এমন সফলভাবে ব্যবসা করা যায়, তা প্রমাণ করে দিয়েছেন তিনি।
আরও শুনুন: অভিনব বিয়ের আসর! মেয়ের বিয়েতে পশু-পাখিদেরও নিমন্ত্রণ কৃষকের
কথা বলছি জামসেদপুরের অরুনাভ সিনহার সম্পর্কে। বছর তিরিশের এই যুবক আইআইটি থেকে স্নাতক হয়েছেন। এমনিতেই এখানকার অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীই বিদেশে কাজের সুযোগ পান। অরুনাভর ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তাঁর ক্যেরিয়ারের শুরুটাও মার্কিন মুলুকের কোম্পানিতেই। কিন্তু খুব বেশিদিন সেই চাকরি তিনি করেননি। দেশীয় সংস্থাতেই কাজ করার ইচ্ছা ছিল তাঁর। সেইমতো দিল্লির এক নামজাদা হোটেলে উচ্চপদস্থ কর্মী হিসেবে যোগ দেন তিনি। যদিও চাকরির পাশাপাশি ব্যবসার দিকেও তাঁর বরাবরই ঝোঁক ছিল। সেই সময় চাকরি করতে করতেই একটি স্টার্টআপ কোম্পানি খুলে ফেলেন। যা কিছুদিন চালানোর পর বিক্রিও করে দেন। অনেক ভেবেও ঠিক করতে পারছিলেন না, ঠিক কোন ক্ষেত্রে ব্যবসাটা শুরু করবেন। সেই সময় যে হোটেলে তিনি কাজ করতেন, সেখানকার এক অদ্ভুত সমস্যা তাঁর নজরে আসে। প্রায়শই হোটেলের ঘরে বিছানার চাদর অপরিষ্কার থাকার অভিযোগ আসত। সেই কাজে নির্দিষ্ট কর্মী নিযুক্ত থাকলেও মাঝে মাঝেই কোনও না কোনও ঘর থেকে এমন অভিযোগ শুনতে হতো। এখান থেকে অরুনাভর প্রথমবারের জন্য মনে হয়, এই কাপড় কাচা নিয়েই যদি ব্যবসা শুরু করা যায়। কারণ হোটেলে যেমন নিজে হাতে কোনও কাজ করতে হয় না, জামাকাপড় কেচে দেওয়ার জন্যেও নির্দিষ্ট লোক থাকে তেমন পরিষেবা যদি বাড়িতে শুরু করা যায়, তাহলে মন্দ হয় না। কিন্তু এমন ব্যবস্থা তো নতুন নয়, সমাজে বহু আগে থেকেই এই কাজ করার মতো লোক রয়েছেন। সেই ধোপারাই লোকের বাড়ি থেকে কাচার জন্য জামাকাপড় নিয়ে আসেন। আবার নির্দিষ্ট সময়ের পর তা ফিরিয়েও দেন। কিন্তু অরনাভ বুঝতে পারেন, এই ক্ষেত্রটি একেবারেই গোছানো নয়। তাই তিনি যদি সম্পূর্ণ ব্যাপারটাকে আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে মিলিয়ে দিতে পারেন তাহলে নিশ্চয়ই সাফল্য আসবে।
আরও শুনুন: দুধ বিক্রি করেই রোজ আয় ১৭ লক্ষ, ছকভাঙা পথে তাক লাগালেন আইআইটি-র স্নাতক
যেমন ভাবা তেমন কাজ। ২০১৬ সালে তিনি খুলে ফেললেন একটি সংস্থা। যাঁদের মূল কাজ লোকের বাড়ি থেকে জামাকাপড় নিয়ে এসে, পরিষ্কার করে তা আবার ফিরিয়ে দেওয়া। কিন্তু সবটাই আধুনিক পদ্ধতিতে। কিছুদিনের মধ্যেই তাঁর সংস্থার পরিষেবা নেওয়ার জন্য অনেকে আগ্রহ দেখান। ধীরে ধীরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিজেদের ব্রাঞ্চ খুলতে শুরু করেন অরুনাভ বর্তমানে প্রায় ১০০ টি শহরে তাঁর সংস্থার আউটলেট রয়েছে। এমনকি বাংলাদেশ, নেপাম সহ বেশ কিছু দেশেও ছড়িয়ে পড়েছে তাঁর সংস্থা। যেহেতু সবকিছুই মোবাইল অ্যাপ থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যুক্ত তাই দেশ বিদেশের যে কোনও প্রান্তের মানুষই এই সংস্থার পরিষেবা নিতে পারেন। যার ফলে সংস্থার আয়ও ১০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে বহুদিন। ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে নিজের সংস্থাকে নিয়ে যেতে চান অরুনাভ। সম্প্রতি প্যাকিংয়ের ক্ষেত্রে সম্পূর্নভাবে প্লাস্টিক বর্জন করেছে এই সংস্থা। যা এক অন্য মাত্রা যোগ করেছে। সব মিলিয়ে বলা যায় , কোনও কাজই যে ছোট নয়, সে কথাই নিজের জীবনের উদাহরণ দিয়ে প্রমাণ করেছেন এই ‘আইআইটি লন্ড্রিওয়ালা’।