বাটাবাটির ঝামেলা নেই। প্যাকেট খোলো আর মেশাও। বেশিরভাগ গুঁড়ো মশলার বিজ্ঞাপনেই এমন ট্যাগ লাইন চোখে পরে। কিন্তু খাটনি কমাতে গিয়ে যদি শরীরে বিষ ঢোকে? তাহলে নিশ্চয়ই আপত্তি থাকবে! সম্প্রতি, এমনই কারণ দেখিয়ে গুঁড়ো মশলার ব্যবহার কমানোর পরামর্শ দিল ICMR। বিকল্প কী? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
রান্নায় মশলা না হলে চলে নাকি! বিশেষ করে ভারতীয় রান্না মশলা ছাড়া কল্পনা করাই কঠিন। একসময় ভারতীয় মশলার নাম ছিল জগত জোড়া। তবে সেসব এখন অতীত। বেশ কিছু ভারতীয় মশলা প্রস্তুতকারী সংস্থাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা হয়েছে বিদেশে। তালিকায় হংকং, সিঙ্গাপুরের মতো দেশ রয়েছে। আর এই নিষেধাজ্ঞার পরই ICMR-র তরফে রান্নায় গুঁড়ো মশলার ব্যবহার কমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আরও শুনুন: মশলায় মিশছে কাঠের গুঁড়ো! দিল্লির ঘটনা চিন্তা বাড়াচ্ছে গোটা দেশেরই
এমনিতে নকল বা ভেজাল নিয়ে এখন আর নতুন করে চমকে যাই না আমরা কেউই। বরং যে কোনও জিনিসেই কিছু ভেজাল থাকবেই, এমনটাই আমরা মেনে নিয়েছি। তারপরেও, খাবারের ক্ষেত্রে যতটা সম্ভব সতর্ক তো হতেই হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে সেই খাবারের দুনিয়াতেই বারে বারে টান পড়ছে। সম্প্রতিই বিদেশের বাজারে নিষিদ্ধ হয়েছিল দেশের নামী সংস্থার গুঁড়ো মশলা। মশলায় ক্ষতিকারক রাসায়নিক মেশানো হচ্ছে, এ কথা শুনে কপালে ভাঁজ পড়েছিল দেশবাসীরও। কেননা স্বাদে সেরা হওয়ার দাবিতে যে মশলা নিজেকে বিজ্ঞাপিত করছে, সে বিজ্ঞাপনের লোভনীয় হাতছানিতে যে ভুলেছিলেন তাঁরাও। অথচ প্রথমে সিঙ্গাপুর, তারপর হংকং, দুই দেশেরই খাদ্যসুরক্ষা দপ্তর পরীক্ষানিরীক্ষা করে জানায় যে, সে মশলায় ইথিলিন অক্সাইডের পরিমাণ অনেক বেশি, যা আদতে একটি কীটনাশক। বলাই বাহুল্য, তা মানুষের ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত নয় তো বটেই, উপরন্তু বিপজ্জনকও। এই আবহে রাজধানী দিল্লিতেও ১৫ টন ভেজাল মশলা উদ্ধার করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় গুঁড়ো মশলায় কাঠের গুঁড়ো বা ওই জাতীয় ক্ষতিকর সামগ্রী মেশানো হচ্ছে। খালি চোখে দেখে বোঝার উপায় নেই। তার ওপর বিজ্ঞাপনের চমকে ঢেকে রঙিন প্যাকেটে মোড়া মশলায় ভেজাল খুঁজে পাওয়া আরও কঠিন। তাই রান্নায় গুঁড়ো মশলার ব্যবহারই কমিয়ে ফেলার নিদান দিচ্ছেন ICMR-র বিশেষজ্ঞরা।
আরও শুনুন: বিদেশে নিষিদ্ধ দেশের নামী সংস্থার গুঁড়ো মশলা, দেশবাসীর চোখ খুলবে কি?
এককালে এ দেশে গুঁড়ো মশলা ব্যবহারের চল ছিল না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সময় আর খাটনি কমাতে গুঁড়ো মশলা বাজারে আসে। অল্পদিনের মধ্যেই তা বেশ ছড়িয়ে পড়ে সকলের রান্নাঘরে। তখন অবশ্য ভেজালের কথা কেউ ভাবত না। কারণ গুঁড়ো মশলা ব্যবহার করে যদি রান্নার স্বাদ কমে যায়, তাহলে সেই মশলা কেউ ব্যবহার করবেন না। এভাবেই কয়েক দশক কেটেছে। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে গোটা মশলা বেটে রান্না করার কথা ভাবতেও পারেন না অনেকেই। শুধু মশলা নয়, পেঁয়াজ, আদা, রসুন বাটাও এখন প্যাকেটে উপলব্ধ। এমন মশলাও বেরিয়েছে যার গায়ে নির্দিষ্ট তরকারির নাম লেখা। অর্থাৎ কোন রান্নায় জিরে বেশি, কোন রান্নায় হলুদ কম , সেসব রাঁধুনিকে ভাবতে হবে না। যে পদ রাঁধা হচ্ছে তার জন্য নির্দিষ্ট মশলা কিনলেই হবে। অনায়াসে তৈরি হয়ে যাবে, মাছ, মাংস, পোলাও, বিরিয়ানি এমনকি মটরশুঁটির কচুরিও। কিন্তু এসবের আড়ালেই কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নিজেদের আখের গুচিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছেন। যার ফল ভুগতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। প্যাকেটবন্দী গুঁড়ো মশলা ব্যবহার করে আদতে বিষ ঢোকানো হয়েছে শরীরে। একেবারে এই সমস্যা মেটানো সম্ভব নয়। কিন্তু একেবারে গুঁড়ো মশলার ব্যবহার কমিয়ে দিলে কিছুটা লাভ হতে পারে। গোটা মশলা ব্যবহার করার অনেক ঝামেলা। কিন্তু তা দেখে বোঝা যাবে যে কোনও ভেজাল মেশানো হয়ে কি না। হলেও তা আলাদা করা যাবে সহজে। হলুদের কথাই ধরা যাক। গোটা হলুদ হাতে নিলেই বোঝা যাবে আসল না নকল। কিন্তু গুঁড়ো হলুদ আলস নকল সবই এক রকম দেখতে। অন্যান্য মশলার ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার। শুধু মশলা নয়, তেল, ঘি, দুধ সব কিছু কেনার ক্ষেত্রেই সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। অজানা অচেনা জায়গা থেকে কিছু না কেনাই ভালো। বিশ্বাসযোগ্য স্থানীয় দোকান থেকেই মশলা বা খাদ্য সামগ্রী কিনতে বলছেন তাঁরা। এতে খাটনি কিংবা খরচ হয়তো একটি বেশি হবে। তবে সুস্থ থাকার সম্ভাবনা যে বাড়বে, তাতে সন্দেহ নেই।