সাত সাতটা কান্ড। হাজার হাজার শব্দ। নানা ঘটনা মিলিয়ে বাল্মীকির রামায়ণ। বলাই বাহুল্য, এই মহাকাব্য কারও পক্ষেই একদিনে পড়ে ফেলা সম্ভব নয়। অথচ এক মহিলা গোটা রামায়ণটা ফুটিয়ে তুলেছেন সুচ-সুতোয়। ঠিক কীভাবে এই কাজ করেছেন তিনি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
অযোধ্যায় রামমন্দির প্রতিষ্ঠার পর কেটেছে একমাসেরও বেশি। তবু সেই নিয়ে উন্মাদনা কমেনি অনেকেরই। এখনও রামলালার দর্শন সারতে অযোধ্যায় ভিড় জমাচ্ছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষজন। মন্দিরের দানবাক্স উপচে পড়ার খবরও প্রকাশ্যে আসছে হামেশাই। তবে টাকা পয়সা দিয়ে নয়, হায়দ্রাবাদের এক মহিলা রামলালাকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তাঁর হাতের কাজ দিয়ে।
আরও শুনুন: ঘরে বসে ‘রাম মন্দির’ তৈরি করা যাবে নিজের হাতে, সাড়া ফেলে দিয়েছে ধর্মের ‘গেম’
রামমন্দির তৈরি আবহে সামনে এসেছিল নানা অদ্ভুত উপহারের কথা। কেউ পাঠিয়েছিলেন ১০৮ফুটের ধুপ, কেউ বা রাম মন্দিরের জন্য বানিয়েছিলেন বিশাল মাপের তালা। তবে হায়দ্রাবাদের অপর্ণা কানুমারি সেসব কিছু করেননি। বরাবরই এমব্রয়ডারির কাজ করতে ভালোবাসেন। তাই রামলালাকে শ্রদ্ধা জানাতে গোটা রামায়ণটাই তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন সুচ-সুতোর মাধ্যমে। শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। তাঁর তৈরি করা রামায়ণে গোটা মহাকাব্যের প্রতিটি ঘটনা আঁকা রয়েছে। তবে সবটাই সেলাইয়ের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা। ছোট থেকেই মা-ঠাকুমাকে এই কাজ করতে দেখেছেন অপর্ণা। আর সেখান থেকেই তাঁরও আগ্রহ জন্মায় সেলাইয়ের প্রতি। এতদিন বাড়ির ছোটখাটো জিনিস সেলাই করতেন। টেবিল ক্লথ বা বিছানার চাদরে ফুটিয়ে তুলতেন সুন্দর নকসা। তবে রামমন্দির তৈরি আবহে তিনি ঠিক করেন স্রেফ নকসা নয়, সুচ-সুতোয় আঁকবেন গোটা রামায়ণটাই। কাজটা মোটেও সহজ ছিল না। পরিশ্রম তো রয়েছেই, সেইসঙ্গে দরকার কাজের প্রতি নিষ্ঠা, সময়, এবং অবশ্যই অধ্যাবসায়। বলাই বাহুল্য, সব কিছু বজায় রেখেই এমনটা সম্ভব করেছেন তিনি। তাই কাজ শেষ হওয়ার পর তাঁর মুখে ফুটে উঠেছে তৃপ্তির হাসি।
আরও শুনুন: AI শিক্ষক ক্লাস তো নিলেন, তবে মাস্টারমশাই আপনি কি আর কিছুই দেখবেন না!
জানা গিয়েছে, রামমন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের দিনে সেলাইয়ের কাজ শুরু করেন অপর্ণা। আর সবটা শেষ হতে সময় লেগে গেল তিন বছরেরও বেশি। প্রায় ১০০টিরও বেশি কাপড়ের টুকরো ব্যবহার করেছেন অপর্ণা। তার প্রত্যেকটায় রয়েছে রামায়ণের নানা ঘটনার বিবরণ। একেবারে রামের জন্ম থেকে বনবাস পর্ব, রাবণের সঙ্গে যুদ্ধ কিংবা অযোধ্যায় রামের প্রত্যাবর্তন, সবই সেলাই করে ফুটিয়ে তুলেছেন অপর্ণা। তাঁর কাজ যেন ছোটদের বেশি করে আকর্ষণ করে সেই চেষ্টাই প্রথম থেকে করেছিলেন। তার জন্য ভাবতে হয়েছে অনেকটাই। প্রতিদিন ১০ ঘণ্টারও বেশি কাজ করতেন। কারণ যা কিছু করেছেন সবটাই নিজে করেছেন। যদিও এই কাজে ক্লান্তি ছিল না বলেই মনে করেন অপর্ণা। তাঁর দাবি, সারাদিন এই কাজ করলেও কোনওভাবেই বিরক্ত হতেন না। বরং রামের জীবনগাথা সেলাইয়ের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতে বেশ আনন্দে থাকতেন তিনি। তবে এই রামায়ণে লেখা অংশ খুবই কম। হায়দ্রাবাদের শিল্পী পুরোটাই তৈরি করেছেন ছবির মাধ্যমে। যা সম্পূর্ণ হওয়ার পর তাঁর পরিবার লোকজন বেজায় খুশি। বিশেষ করে তাঁর ছেলে, মায়ের এই কাজ নিয়ে সে নিজেও বেশ গর্বিত। একইভাবে নেটদুনিয়াও প্রশংসায় ভরিয়েছে শিল্পীকে। একে তো এমব্রয়ডারির মতো একটা প্রায় অপ্রচলিত শিল্প, তার ওপর সেখানে ফুটিয়ে তোলা গোটা রামায়ণ! গোটা বিষয়টাই বেশ আকর্ষণীয় মনে হয়েছে নেটদুনিয়ার বাসিন্দাদের।