মাসের পর মাস বেতন বন্ধ। বারবার বলেও লাভ হয়নি। রাগের চোটে বসকেই অপহরণ করলেন কর্মীরা। কোথায় ঘটেছে এমন কাণ্ড? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
বেতন না পেলে রাগ হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই রাগে অফিসের বসকেই যদি কিডন্যাপ করা হয়? সম্প্রতি এমনটাই ঘটিয়েছেন সংস্থার কর্মীরা। তাতে লাভের লাভ অবশ্য হয়নি। পুলিশের হাতে ধরা পড়ে গরাদের ওপারেই ঠিকানা হয়েছে ওই কর্মীদের। কিন্তু তাঁদের এই কাণ্ড রীতিমতো শোরগোল ফেলেছে বিভিন্ন মহলে।
কথায় আছে, সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল বাঁকাতে হয়! এই সংস্থার কর্মীরাও বোধহয় তেমনটাই ভেবেছিলেন। মাসের পর মাস বেতন বন্ধ। বারবার বসের কাছে আবেদন করেছেন কর্মীরা। একজন-দুজন নয়, এই অবস্থা প্রায় ১২০০ কর্মীর। সব মিলিয়ে কয়েক কোটি টাকার বেতন বাকি। যদিও এই ঘটনা একেবারে অচেনা নয়। ঠিকমতো লাভ না হলে, অনেক সংস্থাই কর্মীদের মাইনে দিতে পারে না। তার জন্য কর্তৃপক্ষের তরফেই কিছুদিন সময় চেয়ে নেওয়া হয়। এই সংস্থা সেসব কিছুই করেনি। বরং কর্মীদের অভিযোগ তাঁদের বস নিজে বেশ ফূর্তিতেই দিন কাটাচ্ছিলেন। স্বাভাবিক ভাবেই, বসের এই ধরনের আচরণ দেখে বেজায় চটে যান কর্মীরা। তাঁদের মধ্যেই কয়েকজন মিলে বসকে অপহরণ করার সিদ্ধান্ত নেন। যেমন ভাবা তেমন কাজ। একেবারে দল বেঁধে বসের বাড়িতে হাজির হন ৮ কর্মী। সেখান থেকে একপ্রকার জোর করেই বসকে তুলে আনেন তাঁরা। শুধু তাই নয়, বেশ কিছু মোবাইল, ল্যাপটপ এমনকি একটি গাড়িও চুরি করে ওই অপহরণকারীর দল।
ঘটনাটি হায়দরাবাদের। এমনিতে এই শহরে আইটি সংস্থার ছড়াছড়ি। এমনই এক সংস্থা গিগলিয়াজ প্রাইভেট লিমিটেড। অভিযোগ, এই সংস্থাই প্রায় ১২০০ কর্মীকে দীর্ঘদিন বেতন দেয়নি। আর সেই রাগে সংস্থার সিইও রবিচন্দ্র রেড্ডিকে অপহরণ করেন সংস্থার ৮ জন কর্মী। অপহরণের সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন রবিচন্দ্রনের মা। কিন্তু তাঁকে রীতিমতো ভয় দেখিয়ে চুপ থাকার নির্দেশ দিয়ে যান ওই কর্মীরা। প্রথম কদিন সেই ভয়ে মুখ খোলেন বৃদ্ধা। কয়েকদিন কাটলে তিনি নিজেই হাজির হন থানায়। তাঁর অভিযোগ পেয়ে ঘটনার তদন্তে নামে পুলিশ। প্রাথমিক ভাবে, বৃদ্ধার বয়ানে ভিত্তি করেই সংস্থার কর্মীদের জীজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ। একটু খোঁজাখুঁজি করতেই সামনে আসে আসল সত্যি। স্থানীয় এক হোটেল থেকে রবিচন্দ্রনকে উদ্ধার করে পুলিশ। একইসঙ্গে চুরি যাওয়া ৮৪ টি ল্যাপটপ, ১৮ টি মোবাইল ও গাড়ি উদ্ধার করে পুলিশ। অপহরনকারীদেরও ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মীও ছিলেন দুজন। বেতন না পাওয়ার রাগেই যে এমনটাই করেছেন ওই কর্মীরা তা স্বীকারও করেছেন সকলে। ঘটনার তদন্তে নেমে এই কর্মীদের অভিযোগ যে সত্যি, সেই তথ্যও পুলিশের হাতে আসে। এমনকি ওই কর্মীরা এই নিয়ে থানায় অভিযোগও দায়ের করেছিলেন। কোনও লাভ না হওয়ায় শেষমেশ এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন তাঁরা। ঘটনার কথা সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তে বেজায় গোল বাঁধে। অনেকেই কর্মীদের পক্ষ নিয়ে কথা বলেন সেখানে। কেউ কেউ আবার অপহরণের মতো চরম অপরাধের নিন্দা করেছেন। তবে এইভাবে কারও বেতন বন্ধ রাখা যে অন্যায়, তা মেনেছেন সকলেই।