বয়স তাঁর একশো ছুঁই ছুঁই। এখনও দিনভর কাজে কোনও বিরাম নেই। পেশা হল জুতো সারাই করা। কিন্তু কোনও নির্দিষ্ট পারিশ্রমিক নেই। কাজ দেখে খুশি হয়ে যে যা দেন, সেটুকুতেই খুশি। তার থেকেও আবার কিছু বাঁচলে দিয়ে দেন গরিবদের। শুধু তাই নয়, জুতো মেরামত করতে করতে করেন তরুণদের মন মেরামতের কাজও। অর্থাৎ কাউন্সেলিং। কাশ্মীরের এই বৃদ্ধ যেন নিজেই এক বিস্ময়। আসুন শুনে নিই তাঁর কথা।
ভোর থাকতেই ঘুম ভেঙে যায় বৃদ্ধের। বাইরে তখনও জমাট ঠান্ডা। তাপমাত্রা ঘুরছে শূন্যের নিচে। বিছানা ছেড়ে উঠে পড়েন গুলাম আহমেদ শেখ। এ ঠান্ডা তাঁর গা-সওয়া।
ভাঙাচোরা টিনের একচিলতে দোকানঘর। ঘরই বলো আর দোকান। সব কিছুই ওই একচিলতে কুঁড়ে। উত্তরকাশ্মীরের বান্দিপোরার পীর শাহাবুদ্দিন এলাকার ফুটপাত ঘেষা একরত্তি দোকানেই নয় নয় করে নব্বইটিরও বেশি শীতবসন্ত দেখে ফেলেছেন গুলাম আহমেদ। একশো ছুঁই ছুঁই বৃদ্ধ সাহাবুদ্দিন পেশায় মুচি। অবসর শব্দটায় একেবারেই বিশ্বাস করেন না তিনি। তাই এই বয়সেও জুতো সেলাই বা পালিশের কাজ ছাড়তে পারেননি বৃদ্ধ। ছেলেমেয়ে পরিবার সবাই রয়েছে। তবে ওই দোকান ছেড়ে কোথাও যেতে চান না গুলাম।
আরও শুনুন: দত্তক নিয়ে বিয়ের ব্যবস্থা, ৪৭০ জন অনাথ মেয়ের ‘বাবা’ হয়ে উঠেছেন মহেশ
চোখের জ্যোতি কমেছে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে। কুচকে যাওয়া কাঁপা কাঁপা হাতে আজও সেলাই করে চলেন জুতো। ওই একরত্তি দোকানেই। খদ্দেররা আসেন। বৃদ্ধ তাঁদের চাহিদা মেনে সূঁচ-সুতো চালান চামড়ার গায়ে, যত্ন করে পালিশ করেন। না কোনও বাঁধা দর নেই তার দোকানে। খদ্দেররা খুশি হয়ে যা দেন, তা-ই নেন গুলাম আহমেদ। তাতেই দিন গুজরান হয়ে যায় তাঁর।
সারাটা জীবন এই সততার সঙ্গেই কাটিয়েছেন গুলাম আহমেদ। সমস্যা আসেনি এমন নয়। তবে তার জন্য কোনও দিন নিজের সততাকে বিকোতে দেননি। তিন ছেলে, দুই মেয়ে। বিয়ে-থা হয়ে গিয়েছে সকলেরই। পরিবারে আজ আর অর্থাভাব তেমন নেই বললেই চলে। ছেলেমেয়েরা আসেন, বাবার খবরাখবর নেন। তবে এই দোকান ছেড়ে অন্য কোথাও গিয়ে থাকার কথা ভাবতেও পারেন না বৃদ্ধ।
আরও শুনুন: বৃক্ষরোপণ নেশা, ৪০ বছরে ১১ লক্ষেরও বেশি গাছ লাগিয়ে নজির জয়রামের
দোকান থেকে হওয়া আয়েই চলে গুলামের। দুশো থেকে চারশো টাকা আয় হয়ে যায় কোনও কোনও দিন। কোনও কোনও দিন কম। নিজের প্রয়োজনীয় খরচ বাদ দিয়ে হাতে যেটুকু থাকে রাস্তার কোনও গরিব-দুঃখী মানুষকে দান করে দেন গুলাম আহমেদ। জিজ্ঞেস করলে বলেন, “আর কদিনই বা বাঁচব! কী হবে টাকা জমিয়ে!”
দোকানে যারা জুতো সারাতে আসেন, তাঁদের পরিশ্রমী হওয়ার কথা বলেন গুলাম আহমেদ। আজকালকার ছেলেপুলেরা পরিশ্রম করতে চান না বলে আফশোস গুলামের। জানালেন, তাঁদের সময়ে মানুষের প্রতি মানুষের ভালবাসা, সম্মান, যত্নবোধ এগুলো অনেক বেশি ছিল। এখনকার দুনিয়ায় তা আর দেখা যায়।
তবে সুস্থ আর সবল থাকতে কাজের বিকল্প নেই বলেই বিশ্বাস তাঁর। কাজ আছে বলেই একশো বছর বয়সেও এমন থাকতে পেরেছেন বলে জানান গুলাম।
বাকি অংশ শুনে নিন।