যে জিনিসের গন্ধ নাকে গেলেই হাত চাপা দিতে হয়, তাই নাকি কমিয়ে দেবে মানুষের অন্নকষ্ট! হ্যাঁ, এমন কথাই বলছেন বিজ্ঞানীরা। চাষের কাজে মানুষের মূত্র ব্যবহার করার পদ্ধতি আবিষ্কার করে ফেলেছেন তাঁরা। আর তাতেই নাকি লাফিয়ে বাড়ছে ফলন। ব্যাপারটা ঠিক কী, বরং শুনেই নেওয়া যাক।
চাষ-আবাদ করার জন্য এই সারের জবাব নেই, সে কথা একবাক্যে মেনে নিচ্ছেন কৃষকেরা। কিন্তু মুশকিল একটাই। এই বিশেষ সারটি ব্যবহার করলে গন্ধে টেকা দায়। হবে নাই বা কেন! সারটি তো আর কিছুই নয়, মানুষের মূত্রকেই যে ব্যবহার করা হয়েছে সার হিসেবে। ফলে পাবলিক টয়লেটের কাছাকাছি গেলে যে গন্ধটি নাকে এসে ধাক্কা দেয়, সেই অ্যামোনিয়ার উগ্র ঝাঁঝালো গন্ধ লেগে আছে এই সারে। তবে কিনা, পেটে খেলে পিঠেও সয় বইকি। খরাকবলিত জমি, যেখানে চাষ হওয়াই প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছিল, সেখানে এই বিশেষ সারটি ব্যবহার করতেই ফলন একলাফে বেড়ে গিয়েছে ৩০ শতাংশ। এহেন সাফল্যের খতিয়ান দেখে উৎসাহিত হয়ে আরও পরীক্ষানিরীক্ষা চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
আরও শুনুন: কয়লার বদলে মানুষের মল ব্যবহার হবে জ্বালানির কাজে, দাবি বিজ্ঞানীদের
ব্যাপারটা তবে খুলেই বলা যাক।
দেশ জুড়ে খরা পরিস্থিতি। ফসলের দশা মৃতপ্রায়। রাসায়নিক সার প্রয়োগে হয়তো অবস্থার খানিক উন্নতি হতে পারে, কিন্তু সেসব কেনার মতো সামর্থ্য এই গরিব দেশের অনেক কৃষকেরই নেই। এই পরিস্থিতিতে দুর্ভিক্ষের দিকেই এগিয়ে চলেছিল দেশটি। আর সেই সময়েই বিকল্প পদ্ধতির সন্ধানে মাঠে নামলেন বিজ্ঞানীরা। আর সেই গবেষণার সূত্রেই এক অভিনব পথের হদিশ পেলেন তাঁরা। দেখা গেল, রাসায়নিক সারের বদলে মানুষের মূত্রকে সার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। যেসব শস্যে মূত্র প্রয়োগ করা হয়েছে আর যেসব শস্যে হয়নি, তাদের মধ্যে তুলনা টেনে আরও দেখা গেল, মূত্র প্রয়োগ করায় ফলন বেড়েছে ৩০ শতাংশ। ২০১৪ সাল থেকে পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়ে সম্প্রতি এই সিদ্ধান্তেই এসেছেন আফ্রিকার দেশ নাইজারের বিজ্ঞানীরা। ইংল্যান্ড ও জার্মানির কিছু গবেষকের সঙ্গে যৌথভাবে এই গবেষণাটি চালিয়েছিলেন তাঁরা। পার্ল মিলেট নামে স্থানীয় একটি দানাশস্যের উপর পরীক্ষা চালিয়েই এই ফল মিলেছে বলে জানিয়েছেন ওই বিজ্ঞানীরা।
আরও শুনুন: বিমান থেকে মানুষের মল এসে পড়ল মাথায়, নিজের বাগানেই নাস্তানাবুদ হলেন এক ব্যক্তি
আমরা তো জানিই, আধুনিক পৃথিবীর প্রধান সমস্যাগুলির মধ্যে একটা বড়সড় সমস্যা, প্রয়োজনের তুলনায় কম খাদ্যের সংস্থান। এর আগেও সুইডিশ ইউনিভার্সিটি অফ এগ্রিকালচারাল সায়েন্স-এর বিজ্ঞানীরা জানিয়েছিলেন, মানুষের মূত্র থেকেই চিরস্থায়ী সমাধান ঘটতে পারে এই সমস্যার। আসলে বর্জ্য পদার্থ হলেও মানুষের মূত্রে থাকে ইউরিয়া, সোডিয়াম, পটাশিয়ামের মতো একাধিক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আর তাই মানুষের মূত্র চাষের কাজে ব্যবহার করার উপায় খুঁজছিলেন তাঁরা। জানিয়েছিলেন, সেক্ষেত্রে বর্তমানে গোটা পৃথিবীতে যে পরিমাণ নাইট্রোজেন ও ফসফরাসযুক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়, তা এক-চতুর্থাংশ কমে যেতে পারে। আর এবার সেই কাজেই সফল হলেন এই বিজ্ঞানীরা। এর ফলে রাসায়নিক সারে থাকা বিষাক্ত উপাদানগুলি ফসলে বাসা বাঁধবে না। আবার খরচের দিক থেকেও লাভবান হবেন কৃষকেরা। বিজ্ঞানীদের দাবি সঠিক হলে রাসায়নিক সারের ব্যবহার যেমন কমবে, তেমনই কমবে জলদূষণের হারও। পাশাপাশি শস্য উৎপাদনের পরিমাণ বাড়লে পৃথিবীজোড়া খাদ্যসমস্যাও কমে যেতে পারে বেশ খানিকটা। আপাতত সেই লক্ষ্যেই কাজ করে চলেছেন বিজ্ঞানীরা।