স্বপ্নের শহর মুম্বই। সকাল থেকে রাত অবধি সবাই যেন ছুটছে। কথায় আছে, এখানে কেউ ঘুমোয় না। কিন্তু প্রথম থেকেই কি মুম্বই এমন ঝাঁ চকচকে? একেবারেই নয়। কীভাবে তৈরি হয়েছিল দেশের মায়ানগরী? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
মুম্বই শুনলেই অনেকের চোখের সামনে ভেসে ওঠে মন্নতের ছবি। বাইরে দাঁড়িয়ে শয়ে শয়ে ভক্ত। হাত নেড়ে অভিনন্দন জানাচ্ছেন কিং খান। একই ছবি কখনও বচ্চন হাউসের সামনে, কিংবা ভাইজান সলমনের বাড়ির সামনে দেখা যেতে পারে। এমনকি মুম্বইয়ের রাস্তাঘাটেও দেখা হয়ে যেতে পারে পর্দার ওপারে থাকা মানুষজনের সঙ্গে। তাই হয়তো এর নামই হয়ে গিয়েছে স্বপ্ন নগরী।
আরও শুনুন: অযোধ্যায় পুজো পান একা রাম, যৌথ পরিবারের ভাঙনের ইঙ্গিত কি মন্দিরেও?
তবে আজকের যে মুম্বই, শুরুর দিকে সেখানে এত আলো ছিল না। এমনকি এর সঙ্গে জড়িয়ে বহু প্রাচীন ইতিহাস। সমুদ্র ঘেরা এই শহর আসলে সাতটি দ্বীপ জুড়ে তৈরি। শোনা যায়, এই সাতটি দ্বীপই নাকি পণ হিসেবে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেসময় এগুলোর মধ্যেই কোনও যোগাযোগের ব্যবস্থা ছিল না। সবার প্রথম ব্রিটিসরাই এই কাজ করে। ধীরে ধীরে সাতটি দ্বীপের মধ্যেই তৈরি হয় উন্নত মানের যোগাযোগ ব্যবস্থা। যা না হলে মুম্বই কখনই বিশ্বের অন্যতম সেরা মেট্রো সিটির পরিচয় পেত না।
আরও শুনুন: প্রেম ভাঙলেই ‘দোষ’! সঙ্গী বদলালেই কি শাস্তি দেবে আদালত?
বলা হয়, স্বাধীনতার আগে মুম্বইয়ের উপর চারটি ভাগে শাসন চলেছে। সবার আগে হিন্দুরাজাদের পর্ব। তারপর মুসলিম। সেখান থেকে পর্তুগিজ শাসন। সবশেষে ব্রিটিস। এদের মধ্যে ব্রিটিসদের কাছে মুম্বই এসেছিল পণ হিসেবে। শোনা যায়, ১৬৬২ সালে কিং চার্লস II এর সঙ্গে পর্তুগিজ রাজকন্যার বিয়েতেই পণ হিসেবে দেওয়া হয়েছিল সাতটি দ্বীপ। বর্তমান মুম্বই অবশ্য তৈরি হয়েছে তার বহু পরে। এমনকি ১৯৯৫ সাল অবধিও এর নাম ছিল বোম্বাই। সিনেমা, গানে বারবার এই শহরকে বম্বে বলেই উল্লেখ করা হয়েছে। তা এই সাতটি দ্বীপের মধ্যে রয়েছে মজাগাঁও, পারেল, ওয়ারলি, মাহিম, ছোট কোলাবা, কোলাবা এবং বম্বে। প্রত্যেকটা দ্বীপই বর্তমান মুম্বই-এর গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কোথাও রয়েছে নায়ক-নায়িকার বাড়ি তো কোথাও পুরনো কোনও রেস্তোরাঁ। সবটাই হয়েছে ধীরে ধীরে। তাই বর্তমানে এসব জায়গা দেখে বোঝার উপায় নেই, এখানেই একসময় প্রস্তর যুগের মানুষরা হেঁটে বেড়াত। শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। মুম্বই-এর ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে এমন তথ্যও পেয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া, মুম্বই তৈরির কাজে বারবার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে নানা মহামারী। যে শহরে এখন আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে যায়, সেখানকার পুরনো বাসিন্দারা কম ঝক্কি পোহাননি স্রেফ টিকে থাকার জন্য। তবু সবকিছু সহ্য করে মুম্বই টিকে গিয়েছে। বলা ভালো, গোটা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ ভারতের এই শহরকে এক ডাকে চেনে।
আরও শুনুন: ঘরে বসে ‘রাম মন্দির’ তৈরি করা যাবে নিজের হাতে, সাড়া ফেলে দিয়েছে ধর্মের ‘গেম’
এবার আসা যাক যে সাতটি দ্বীপ জুড়ে মুম্বই তৈরি হল সেগুলোর কথায়। প্রথমেই কোলাবা এবং ছোট কোলাবা। স্বাধীনতার পর এতবছর কেটে গেলেও, ব্রিটিস আমলের ছাপ এখনও স্পষ্ট লেগে আছে মুম্বই-এর এই অঞ্চলে। এখানেই রয়েছে দ্য গেটওয়ে অফ ইন্ডিয়া। বিশ্ববিখ্যাত দ্য তাজ হোটেলও এখানেই। এককালে ব্রিটিস সরকারের উপরতলার মানুষজন এখানে নিত্য যাতায়াত করতেন তা আজও বোঝা যায়। শহরের এই অংশটা যেন সেই আভিজাত্য বহন করে চলেছে দীর্ঘদিন ধরে। এরপর মাজাগাঁও। যার নাম আগে ছিল মৎস গাঁও। নাম শুনেই বোঝা যায় এর সঙ্গে মাছের যোগ প্রবল। আসলে এখানেই মুম্বইয়ের মৎসজীবী সম্প্রদায়ের বাস ছিল। এখন অবশ্য সেই ছবি অনেকটাই বদলেছে। তবে মুম্বইয়ের মধ্যে এই জায়গা এখনও বেশ পরিচিত। এবার বলতে হয় ওয়ারলি-র কথা। মুম্বই-এর সবথেকে দৃশ্যসুন্দর সৈকত রয়েছে এখানেই। স্বাভাবিকভাবেই প্রতিদিন পর্যটকদের ভিড় থাকে চোখে পড়ার মতো। মনোরম আবহাওয়া, সেইসঙ্গে সমুদ্রের অসাধারণ দৃশ্য। সবমিলিয়ে মুম্বইয়ের ওয়ারলি-র আলাদা জনপ্রিয়তা রয়েছে। এদিকে মুম্বইয়ের পারেল অঞ্চলটিকে অনায়াসে বসতি এলাকা বলা যায়। বিভিন্ন স্তরের মানুষজনের বাস মুম্বইয়ের এই চত্বরে। সেইসঙ্গে এখানেই রয়েছে বিখ্যাত লালবাগচা গণেশ মন্দির। প্রতিবছর গণেশপুজোর সময় যেখানে গোটা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষজন ছুটে আসেন। একইসঙ্গে এখানে রয়েছে বিখ্যাত এক মশলার বাজারও। অন্যদিকে, মাহিম হল মুম্বইয়ের উত্তর অংশ। এখানে বিভিন্ন চার্চ এবং নানা ধরনের স্থাপত্য রয়েছে। ১৮৪৬ সাল অবধি শহরের এই অংশ মুম্বয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। বলা যায় সবথেকে পরেই একে মূল মুম্বইয়ের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। সবশেষে বম্বে। এই অংশের সঙ্গে বলা যায় বাকী দ্বীপগুলো জুড়েছে। আজকের মুম্বই-এ গিয়ে সে জিনিস কল্পনা করার উপায় নেই। সমুদ্র ঘেরা শহর দেখে বোঝা যাবে না এতটুকু, যে আসলে এটা সাতটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপের সমাহার। যা আজকের দিনে দাঁড়িয়ে গোটা বিশ্বকে নিজের পরিচয় দিচ্ছে।