কথায় বলে খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি। এবার যেন সেকথাই প্রমাণিত হল। টাকা তৈরিতে কখনও কখনও লাগে সেই টাকার চেয়েও অধিক মূল্যের টাকা। আর সবচেয়ে নাকি খরচ বেশি হয় এক টাকার কয়েন তৈরিতে! জানেন, কোন মুদ্রা বা নোট বানাতে কত খরচ? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
টাকার গায়ে লেখা এক। কিন্তু তা তৈরিতে আদৌ একটাকা খরচ হয়নি। কী ভাবছেন, নিশ্চয়ই তার চেয়ে কিছুটা কম। আজ্ঞে না। কম তো নয়ই। উলটে খানিক বেশিই। কী ভাবছেন? তাহলে হিসাব মিলবে কীকরে? বলছি মশাই, এক্ষুনি বলছি।
আচ্ছা আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, প্রাচীনকালে জিনিস আদানপ্রদান হত গরুর বিনিময়ে। কালক্রমে তার পরিবর্তন হয়ে ধান, কড়ি এমনকী টাকা-পয়সারও বাঁকবদল হয়ে আজ গিয়ে ঠেকেছে ডিজিট্যাল কারেন্সিতে। কিন্তু তবুও দরকারে-অদরকারে ভরসা গ্যাঁটের কড়িই। কখনও কড়কড়ে কাগজ, কখনও আবার গোলাকার ধাতব বস্তু। রকমফেরে বাড়ে এই মহার্ঘ জিনিসের মূল্য। মুদ্রার রকমভেদে এক, দুই, পাঁচ, দশ আরও কত কী! আগে ছিল আরও কম। পঞ্চাশ পয়সা, এমনকী পঁচিশ পয়সাও। টাকার দাম বেড়েছে, দাম বেড়েছে জিনিসের। তাই সেসব বেপাত্তা হয়ে গেছে বহুদিন। তাই আজকের নিরিখে সবচেয়ে কমদামি যেখানা, তা হল এক টাকা। স্টেইনলেস স্টিলের তৈরি, এক টাকার কয়েনের ব্যাস ২১.৯৩ মিমি, পুরুত্ব ১.৪৫ মিমি এবং ওজন ৩.৭৬ গ্রাম। এইসমস্ত টাকাগুলি কোথায় তৈরি হয় জানেন? মুম্বই এবং হায়দ্রাবাদের ইন্ডিয়ান গভর্নমেন্ট মিন্টে তৈরি করা হয় এই মহামূল্যবান জিনিস।
আরও শুনুন: শুধু কাজ নয়, প্রেম করার জন্যও টাকা দেবে অফিস! অতিরিক্ত রোজগার হতে পারে লাখ টাকা
আমরা জানি, ১৯৯২ সাল থেকে ব্যবহার করা হচ্ছে এই এক টাকার কয়েনগুলি। অথচ এক টাকার একটি কয়েন তৈরি করতে এক টাকার বেশিই খরচ হয়ে যায় ভারত সরকারের। সম্প্রতি প্রকাশ্যে আসা একটি রিপোর্ট অনুসারে, জানা গিয়েছে এমনটাই। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, একেকটি কয়েন তৈরি করতে খরচ হয় ১.১১ টাকা, যা কিন্তু শেষে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে এক টাকার মূল্যের চেয়েও কিছুটা বেশি। তাহলে এবার শুনে নিন, বাকিগুলোর বেলায় কেমন খরচ হয়। দু-টাকার কয়েনের জন্য খরচ পড়ে ১.২৮ টাকা। পাঁচ টাকার জন্য সরকারের খরচ হয় ৩.৬৯ টাকা। আর ১০ টাকার কয়েন তৈরির জন্য কিনা খরচ হয় ৫.৫৪ টাকা মাত্র!
কিন্তু তাহলে কি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একটাকার কয়েন তৈরির রেওয়াজ? মনে রাখতে হবে দ্রব্যমূল্যসহ এই ধরনের নানার অর্থনৈতিক বিষয়গুলি তৈরির পিছনে কাজ করে বহু জটিল বিধিব্যবস্থা। রয়েছেন বড় বড় নীতিনির্দেশকরা। তাই তাঁদের পরিকল্পনামাফিক এক টাকার কয়েন পিছু লোকসানের খতিয়ান থাকলেও তা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় নি।