২০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পরাধীন ছিল আমাদের দেশ। তারপর বহু আন্দোলন আর সংগ্রামের জেরে এসেছিল স্বাধীনতা। এই আন্দোলন একদিকে ছিল ব্রিটিশকে বয়কট করার, আর তার পাশাপাশিই চলছিল দেশকে স্বনির্ভর করে গড়ে তোলার চেষ্টা। তাই সেই সময়েই স্বদেশি পণ্যের উৎপাদন শুরু হয়। আর তার কিছু কিছু পণ্য আজও একইভাবে সুনাম ধরে রেখেছে। সেই তালিকায় কী কী রয়েছে? আসুন শুনে নিই।
দেশ তখন ব্রিটিশ শাসনের অধীনে। একদিকে বিপ্লবীদের উপর নির্মম অত্যাচার। অন্যদিকে দেশের ব্যবাসায়ীদের টুঁটি চিপে ধরেছে একের পর এক বিদেশি পণ্য। এ দেশ থেকে কাঁচামাল আর মজুর নিয়ে, এ দেশের টাকায় উৎপাদন করা পণ্য বিপুল টাকায় বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। আবার বিলেত থেকে কর ছাড়াই এ দেশে পণ্য আমদানি করে তা চড়া দামে বিক্রি করছে ইংরেজরা। সব মিলিয়ে কোনও ক্ষেত্রেই দেশি পণ্যের মাথা তুলে দাঁড়ানোর জো নেই। জামাকাপড়, জুতো থেকে আরম্ভ করে নিত্য প্রয়োজনের একাধিক পণ্যে থাবা বসিয়েছে মোটা অঙ্কের কর। কোথাও আবার আইন করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে দেশি পণ্যের দোকান। তবে এমন পরিস্থিতেও প্রতিষ্ঠা হয়েছিল কিছু স্বদেশি সংস্থার। জন্ম হয়েছিল কিছু দেশি জিনিসপত্রের। যা তখনও রমরমিয়ে চলেছে, আজও একইভাবে চলছে।
আরও শুনুন: রাষ্ট্রপতি বলে বিনামূল্যে প্রাপ্তি নয়, উপহারেরও দাম মিটিয়েছিলেন আবদুল কালাম
তালিকায় প্রথমেই বলতে হয় বোরোলিনের কথা। সুরভিত এই অ্যান্টিসেপ্টিক ক্রিমের নাম শোনেননি, এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া কঠিন। শুধু বাঙালি বললে ভুল হবে, দেশের প্রায় সব রাজ্যেই এই বিশেষ ক্রিম পাওয়া যায়। শীতকালে ত্বকের যত্ন নেওয়ায় বোরোলিনের জুড়ি মেলা ভার। সেইসঙ্গে কোথাও কেটে গেলে বা পুড়ে গেলেও অনায়াসে কাজে আসতে পারে বোরোলীন। কিন্তু জানেন কি, এই বোরোলীনের জন্ম হয়েছিল স্বাধীনতার অনেক আগে। ১৯২৯ সালে বাঙালি ব্যবসায়ী গৌরমোহন দত্ত-র হাত ধরে শুরু হয়েছিল বোরোলিনের যাত্রাপথ। কয়েক বছরের মধ্যেই যা হয়ে ওঠে বঙ্গজীবনের অঙ্গ। আজও সেই সুনাম এতটুকু ম্লান হয়নি। এরপর বলতে হয় পার্লে-জি বিস্কুটের কথা। এক্ষেত্রেও স্রেফ নাম শোনা নয়, জীবনে কখনও পার্লে-জি খাননি এমন ভারতীয় খুঁজে পাওয়াও বেশ কঠিন। এই বিস্কুটেরও জন্ম ১৯৩৮ সালে। ব্রিটিশ আমলে জন্ম হলেও এই পণ্যকে কখনও পিছন ফিরে দেখতে হয়নি। প্রথম থেকেই জনপ্রিয় ছিল এই বিস্কুট। এখনও একইভাবে সেই ধারা বজায় রয়েছে। এখানেই শেষ নয়। স্বাধীনতার আগে শুরু হওয়া দেশি পণ্যের মধ্যে এখনও রীতিমতো জনপ্রিয়, রুহ আফজা, মাইসোর স্যান্ডেলের মতো জিনিসও রয়েছে।
আরও শুনুন: স্বদেশী আন্দোলনই প্রেরণা, বাঙালির ব্যবসায় জোয়ার এনেছিল সুরেন্দ্রমোহনের ‘ডাকব্যাক’
তবে শুধুমাত্র পণ্য নয়। সে সময় কিছু দেশি হোটেল তৈরি হয়েছিল, যা আজও গোটা দেশে রীতিমতো জনপ্রিয়। এই তালিকার প্রথমেই রয়েছে মুম্বইয়ের তাজমহল প্যালেস। দেশ স্বাধীন হওয়ার বহু আগে তৈরি হওয়া এই হোটেল বর্তমানে পর্যটকদের কাছেও অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠেছে। শোনা যায়, এই হোটেলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন জামশেদজি টাটা। পরাধীন ভারতের অন্যতম সফল এই ব্যবসায়ী দেশের জন্য অনেক কিছু করেছেন। এখনও তাঁর প্রতিষ্ঠিত ‘টাটা’ গোষ্ঠী একাধিক জনহিতকর কাজের সঙ্গে যুক্ত। দেশ জুড়ে এই সংস্থার সুনামও রয়েছে যথেষ্টই। বিমান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়াও এই সংস্থারই। এছাড়া নিত্য প্রয়োজনের একাধিক পণ্যের ব্যবসা রয়েছে এই সংস্থার। এরপর বলতে হয় বিখ্যাত ‘কেভেন্টারস’-এর কথা। এই হোটেলটিও ১৯২৫ সালে তৈরি হয়েছিল। আলাদা করে এর জনপ্রিয়তার কথা বলার বোধহয় প্রয়োজন নেই। দার্জিলিং ঘুরতে গেলে এখানে একবার অন্তুত যান প্রায় সকলেই। এই তালিকা কিন্তু চট করে শেষ হওয়ার নয়। সেই তালিকায় রয়েছে আরও বেশ কিছু দেশি সংস্থা, যা স্বাধীনতার আগে জন্ম নিলেও, একইভাবে জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে এখনও। আর সেই জনপ্রিয়তার সঙ্গে জুড়ে আছে দেশের বাণিজ্যের একটুকরো গৌরবময় ইতিহাস।