দশতলা বাড়ি। তবু ভূমিকম্পের আঁচ পড়েনি গায়ে। ১০০ ভূমিকম্পের টাল সামলেও এখনও অক্ষত দাঁড়িয়ে আছে ওই বাড়িটি। কীভাবে ঘটল এমন আশ্চর্য ঘটনা? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
ভূমিকম্প মানেই ধ্বংসস্তূপ। ধুলোয় মিশে যাওয়া সারে সারি বাড়িঘর। যত মজবুতই হোক না কেন, ভূমিকম্পের দারুণ আঘাত সহ্য করে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না অধিকাংশ বাড়িই। কিন্তু সেই ইতিহাসে বড়সড় ব্যতিক্রম এই বিশেষ বাড়িটি। একবার দুবার নয়, গুনে গুনে একশোবার ভূমিকম্পের আঘাত সহ্য করেছে সেই বাড়ি। তবুও এখনও মাথা উঁচু রেখেই দাঁড়িয়ে রয়েছে সেটি। ভেঙে পড়েনি কিংবা টলেও যায়নি। আর এই ঘটনা দেখে স্বাভাবিকভাবেই চমকে গিয়েছেন সকলে।
আরও শুনুন: অনেক হয়েছে, আর নয়! ১০২ সন্তানের পর ১২ স্ত্রীকে জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ি খাওয়ালেন ব্যক্তি
কোথায় রয়েছে এই বিশেষ বাড়ি? জানা যায়, ক্যালিফোর্নিয়ার সান ডিয়েগো অঞ্চলে এই বাড়িটি অবস্থিত। যার মোট উচ্চতা ১১২ ফুট। ১০০০ স্কোয়ারফুটের একটি প্ল্যাটফর্মের উপর দাঁড়িয়ে আছে গোটা বাড়িটি। ভূমিকম্পের বেশিরভাগ অভিঘাতটা যাতে ওই প্ল্যাটফর্মের উপরেই পড়ে, সেভাবেই বানানো হয়েছে এই বাড়িটি। তার উপরে প্রতি তলার মেঝেতে রয়েছে রকিং ওয়াল, যা ভূকম্পকে অনেকখানি প্রতিহত করতে পারে। শুধু তাই নয়, বাড়ির ভেতরের দেওয়াল, সিঁড়ি, সবকিছুই ভূমিকম্প রোধ করার মতো বিশেষ প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। গোটা বাড়ি জুড়েই লাগানো হয়েছে সেন্সর। দুটি পাঁচতলার সমান ধাতব টাওয়ার বাড়িটিকে দুদিক থেকে ধরে রেখেছে। আর এই সবকিছুর জন্যেই ভূমিকম্পের কবলে পড়লেও বাড়িটি সুরক্ষিত থাকবে বলেই আশা করা যায়।
আরও শুনুন: জাগ্রত আগ্নেয়গিরিতে জীবন্ত পশুর আহুতি দান, ধর্মীয় প্রথা দেখে স্তম্ভিত নেটদুনিয়া
আসলে সত্যি সত্যি ভূমিকম্পের মুখোমুখি এখনও হতে হয়নি বাড়িটিকে। তবে কম্পিউটারের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে ভূমিকম্পের অভিঘাত সৃষ্টি করে বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, আদৌ সেই কম্পন বাড়িটি সহ্য করতে পারে কি না। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের টলউড প্রকল্পের অন্তর্গত এই বাড়িটি, যাকে শেক টেবল বলেই চিহ্নিত করা হয়েছে। দুটি ভয়াবহ ভূমিকম্প তৈরি করে তাকে পরীক্ষা করা হয়েছে। ১৯৯৪ সালের লস অ্যাঞ্জেলিস ভূমিকম্প, যাতে কম্পনের মাত্রা ছিল ৬.৭ এবং ভাঙা বাড়িঘরের মোট মূল্য দাঁড়িয়েছিল ৪০ বিলিয়ন ডলার, তার সমান কম্পন তৈরি করা হয়েছিল। তৈরি করা হয়েছিল ১৯৯৯ সালের তাইওয়ান ভূমিকম্পও, যার কম্পনের মাত্রা ছিল ৭.৭। কিন্তু এমন ভয়ানক দুটি ভূকম্পকেও সহ্য করে নিয়েছে এই বাড়িটি। সব মিলিয়ে এই প্রকল্পকে তাই সফল বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। আর এই ধরনের বাড়ি তৈরি করা গেলে ভূমিকম্পের দরুন ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা অনেকটাই কমবে, এমনটাই আশা সকলের।