প্রিন্টার ব্যবহার করে কাগজপত্রের প্রিন্ট তো আমরা সকলেই নিয়ে থাকি। কিন্তু প্রিন্টার দিয়েই তৈরি হবে একটা আস্ত বাড়ি? এমনটাও কি সম্ভব? আজ্ঞে হ্যাঁ। ঠিক সেই কাজটাই বাস্তবে করে দেখিয়েছে এক সংস্থা। আসুন, শুনে নেওয়া যাক এই অভিনব বাড়ির কথা।
থ্রিডি প্রিন্টেড বাড়ি। নাম থেকেই পরিষ্কার, এটি হল এমন একটি বাড়ি যা থ্রি ডি প্রিন্টারের সাহায্যে তৈরি। অথচ তাতে নাকি বেডরুম, কিচেন, বাথরুম, সব আলাদা আলাদা ভাগ করা আছে। এমনকি আছে ঘরের ওপর ঘরও। মানে দোতলাও হতে পারে বাড়িটি। অর্থাৎ সব মিলিয়ে বাড়িটি ঠিক তেমনই দেখতে যেমনটা আমরা এতকাল দেখে বা জেনে এসেছি। কিন্তু এই গোটা বাড়িটাই তৈরি একটি থ্রি ডি প্রিন্টারের সাহায্যে।
শুনেই চমকে গেলেন তো? ভাবছেন তা আবার কেমন করে সম্ভব? আর এত বড় প্রিন্টার পাওয়াই বা যাবে কোথায়?
আরও শুনুন: বালিতে ফুটে উঠল মোদির মুখ, ‘মন কি বাত’ মনে রেখেই প্রধানমন্ত্রীকে অভিনব উপহার শিল্পীর
আসলে এই কাজের নেপথ্যে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল একটি সমীক্ষা। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের করা সেই সমীক্ষা জানাচ্ছে, ২০৩০ সাল নাগাদ প্রায় ৩০০ কোটি মানুষের থাকার জন্য উন্নত প্রযুক্তির বাড়ি প্রয়োজন হবে। অর্থাৎ দৈনিক প্রায় ৯৬ হাজার নতুন বাড়ি তৈরি করতে হবে। এই প্রয়োজন থেকেই আসে থ্রি ডি প্রিন্টিং প্রযুক্তির মাধ্যমে বাড়ি তৈরির উপায়। যা অপেক্ষাকৃত দ্রুত, টেকসই বাড়ি বানাতে সক্ষম। আর এর খরচও তুলনামূলকভাবে অনেকটা কম। যেহেতু এটা তৈরি করতে দক্ষ রাজমিস্ত্রি বা শ্রমিকের প্রয়োজন সেভাবে পড়ে না, এবং নির্মাণজনিত অপব্যয় কম হয়। কাঁচামাল একই, কিন্তু এই থ্রি ডি প্রিন্টেড বাড়ি তৈরির পদ্ধতি আলাদা।
আরও শুনুন: ৩ লাখের পেয়ালায় চা পান নীতা আম্বানির! কেন এই কাপের এত দাম?
ভারতে প্রথম থ্রি ডি প্রিন্টেড বাড়িটি তৈরি হয় চেন্নাইতে। ৬০০ স্কোয়ারফিটের একতলা একটি থ্রি ডি প্রিন্টেড বাড়ি, তৈরি হয়েছিল ৫ দিনে। আইআইটি মাদ্রাজের প্রাক্তন ছাত্রদের একটি স্টার্টআপ সংস্থা ‘ত্বস্তা কন্সট্রাকশনস’ (Tvasta) এই কাজ শুরু করে। কংক্রিট থ্রি ডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে নির্মাণ জগতে কার্যত বিপ্লব এনেছে এই সংস্থা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও তাঁর মন কি বাত অনুষ্ঠানে ‘ত্বস্তা’-র এই অভিনব উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তবে এই থ্রি ডি নির্মাণকে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই করে তোলার পাশাপাশি সংস্থাটি এখন জোর দিয়েছে, কীভাবে নির্মাণের সময় কাঁচামালের অপব্যয় একেবারে কমিয়ে ফেলা যায়। ত্বস্তার দাবি, একটি ঠিকঠাক থ্রি ডি প্রিন্টারের মাধ্যমে, এক সপ্তাহের মধ্যে ২০০০ স্কোয়ারফিটের একটি বাড়ি তৈরি করে ফেলা সম্ভব। আর এইভাবে ২ বেডরুম-সহ একটি বাড়ি বানাতে খরচ পড়বে মোট ৫ থেকে সাড়ে ৫ লাখ টাকা। যা বর্তমান নির্মাণ খরচের ২০-৩০ শতাংশ কম।
তাহলে বুঝতেই পারছেন, অদূর ভবিষ্যতেই হয়তো শহর জুড়ে বিপজ্জনক বাড়ির লেবেল সরিয়ে এই নতুন প্রযুক্তির হাত ধরে অনেক থ্রি ডি প্রিন্টেড বাড়ি, ক্যাফে, মল মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকবে। আর পুরাতন মিশে যাবে নতুনের ভিড়ে।