ভূত মানেই ভয় ধরানো গা ছমছমে ব্যাপার। এমন কিছু, যাকে ধরাছোঁয়া যায় না, তাকে নিয়ে তো ভয় লাগবেই। অথচ হরর ফিল্মের যে বিপুল দুনিয়া, সেখানে ভূত মানে কেবল ভয় নয়, যৌনতাও বটে। আসুন, একবার উঁকি দেওয়া যাক সেই ভূতের দুনিয়াতে।
ভূত আছে কি নেই, তা নিয়ে নানা মুনির নানা মত। তবে ভূতের গল্প কিন্তু আছেই। তবে স্থান কাল ভেদে সে গল্পের ধরনধারণও আবার বদলে বদলে যায়। এই যেমন ধরুন, বাংলা গল্পের কথাই যদি ধরি। সেখানে একদিকে ভয়ংকর ভূতের দেখা পাওয়া যায় বইকি, যাকে দেখে ভয় হয়। আবার সত্যজিৎ যেমন ‘নীল আতঙ্ক’ গল্পে বলেন এক অত্যাচারী নীলকর সাহেবের মৃত্যুর গল্প, কিংবা ‘ব্রাউন সাহেবের বাড়ি’-তে বলেন ভূত হয়ে মালিকের কাছে পোষ্য বেড়ালের ফিরে আসার গল্প, তা ভয় ধরালেও ক্ষতির কথা বলে না। এর পাশাপাশি শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় কি লীলা মজুমদারের ভূত আবার নেহাতই ভালো মানুষ। অঙ্কে তেরো পেলে কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় তো কেউ একলা মানুষের চোখের জল মুছিয়ে দেয়। কিন্তু এই সবরকম ভূতের বাইরেও আরেকরকম ভূত আছে। শরদিন্দুর বরদা যেমন বলেছিল, মুঙ্গেরে মহাল পরিদর্শনে গিয়ে এক অশ্লীল ভূতের দেখা পেয়েছিল সে। শোনা যায়, এক নীলকর সাহেবের অতৃপ্ত আত্মাই সেখানে রয়ে গিয়েছে। জীবিত থাকতে নারীশরীরের প্রতি তার যেমন আকর্ষণ ছিল, মরে গিয়েও তা হারিয়ে যায়নি। ফলে, বাড়ির তরুণী সহায়িকা যখন বরদাকে আকৃষ্ট করতে সেই নীলগুদামে এসে হাজির হয়, জোর করেই তার সঙ্গে যৌনতায় লিপ্ত হওয়ার চেষ্টা করতে থাকে ওই অশরীরী।
আরও শুনুন: ভূতেরা নেমে আসে বলেই কি পালিত হয় ভূতচতুর্দশী?
এমন অশ্লীল ভূতের কথা বাংলা সাহিত্যে সিনেমায় হয়তো খুব বেশি নেই। কিন্তু বিলিতি সিনেমায় তার ছড়াছড়ি। সেখানে ভূতের সঙ্গে যৌনতার নিবিড় যোগ। ভ্যাম্পায়রোস লেসবস কি ডটারস অফ ডার্কনেস ছবির কথা ধরুন, সেখানে তো যৌনতার ছড়াছড়ি। আবার কাউন্ট ড্রাকুলার গল্পেও যে তরুণী মিনা হার্কারের সঙ্গে কী ঘটেছিল, সে তো আমরা জানিই। সিনেমায় জোনাথন হার্কারকে সিডিউস করার কথাও ভোলার নয়। ‘আ নাইটমেয়ার অন এম স্ট্রিট’-এর অভিনেত্রীকে একটি দৃশ্যে দেখা গিয়েছিল শুধুমাত্র অন্তর্বাস পরে, তাঁর ঊর্ধ্বাঙ্গ সম্পূর্ণ উন্মুক্ত ছিল সেখানে। সাম্প্রতিক কালে ভ্যাম্পায়ার ডায়েরিজ তো দৃশ্যের পর দৃশ্য জুড়ে টানটান যৌনতার গল্প বুনেছে। ভ্যাম্পায়ারের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সঙ্গম হোক কি দুই ভ্যাম্পায়ারের যৌন মিলন, সবকিছুই এই হরর সিরিজটির আবেদন আরও একটু বাড়িয়ে দিয়েছিল।
মজার কথা হল, হরর ফিল্ম যৌনতার ক্ষেত্রে অনুঘটকের কাজ করে, এমন কথা বলেন অনেক বিশেষজ্ঞ। হাজার দুয়েক মানুষের মধ্যে এই প্রশ্নে একটা সমীক্ষাও চালানো হয়েছিল। সেখানে ৭১ শতাংশ মানুষ স্বীকার করে নিয়েছেন যে, ব্যাপারটা সত্যি। সত্যিই, হরর ফিল্ম দেখলে যৌন ইচ্ছে জেগে ওঠে। এদের মধ্যে আবার ৪৫ শতাংশ বলছেন, সে ইচ্ছে এতটাই প্রবল যে, সিনেমা শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষাও করা যায় না। অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে যে, কথাটা নেহাত কথার কথা নয়। হরর সিনেমায় যৌনতা যে কারণেই আসুক না কেন, বাস্তব জীবনে যে তা সম্পর্কের রং আরেকটু ঘন করে দিতে পারে, এমনটা কিন্তু বলাই চলে।