স্কুল যাওয়ার পথে দুস্কৃতিদের পাল্লায় পড়েছিল। কোনওক্রমে প্রাণে বেঁচে ফিরেছে। পুলিশ স্টেশনে গিয়ে ঠিক এমনটাই জানিয়েছিল খুদে। সঙ্গে সঙ্গে তার কথা মতো তদন্তে নামে পুলিশ। কিন্তু কোথায় কি! অপহরণের চীহ্নমাত্র নেই কোথাও। তাহলে কেন ওমন ভয়ংকর কোথা বলল ওই খুদে? আসুন শুনে নিই।
স্কুলে বড্ড চাপ। তারপর টিউশনি, সেখানেও রোজ পড়া দেওয়ার হিড়িক। পালানোর কোনও উপায় নেই। একদিকে চেপে ধরবে বাবা-মা। অন্যদিকে শিক্ষকরা। কিন্তু রোজ কী আর হোমওয়ার্ক করা সম্ভব! মাঝেমধ্যে ইচ্ছা নাই করতে পারে। ঠিক যেমন হোমওয়ার্ক করতে বেমালুম ভুলে গিয়েছিল গুজরাটের এই খুদে। কিন্তু তার জন্য কোনও বকুনি খেতে হয়নি তাকে। বরং তার ‘হোমওয়ার্ক’ করতে না পারার কারণ শুনে রীতিমতো ঘাবড়ে যান সকলে।
আরও শুনুন: চাঁদে না গেলে প্রধানমন্ত্রী হবেন না রাহুল! কংগ্রেস নেতাকে কটাক্ষ হিমন্ত বিশ্বশর্মার
ঠিক কী ঘটেছে?
আসলে ওই সেদিন খুদে টিউশনেই যায়নি। তার দাবি, রাস্তাতেই নাকি একটা সাদা রঙের গাড়ি এসে তাকে জোর করে তুলে নেয়। শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। বাড়ি ফিরে ভয়ঙ্কর এক কিডান্যাপিং-এর কাহিনী শোনায় সে। বয়স মাত্র দশ। কিন্তু তাতে কি! এই বয়সেই সে এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখিন হয়েছে, যা রীতিমতো রোমহর্ষক। তার দাবি, এদিন সকালে টিউশন যাওয়ার পথে তাকে ধাওয়া করে একটা সাদা রঙের এসইউভি গাড়ি। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওই গাড়িটি খুদের সামনে এসে দাঁড়ায়। তারপর জোর করে গাড়িতে বসিয়ে নেয় তাকে। কিছুদূর যাওয়ার পর সেই গাড়িতে তার বয়সী আরও এক খুদেকে তোলা হয় বলেই দাবি করে সে। তারপর রাস্তায় এক রেলব্রিজের নীচে তাকে নামিয়ে দেওয়া হয়। আর ভিতরে থাকা অন্য খুদেকে নিয়ে সেখান থেকে চম্পট দেয় সাদা গাড়ি। সেখান থেকে কোনওক্রমে সে বাড়ি ফিরেছে। সবতা জানিয়েছে বাড়িতে। এরপর কী আর কেউ ঘরে বসে থাকে। এই খুদের বাবাও তাই তড়িঘড়ি তাকে নিয়ে থানায় ছোটেন। সেখানে গিয়েও সবিস্তারে এই ঘটনার বিবরণ দেয় ওই খুদে।
আরও শুনুন: বাথরুমের গোপন অভ্যাসেই মিলবে ব্যক্তিত্বের পরিচয়, জানেন কীভাবে?
সবটা শোনার পর তো পুলিশের চক্ষু চড়কগাছ। একটা দশ বছরের মেয়েকে নিয়ে দুস্কৃতিরা পালিয়েছে! সঙ্গে সঙ্গে তদন্তে নামেন পুলিশ আধিকারিকরা। কিছুক্ষণের মধ্যেই শহরের সব রাস্তায় চেকিং শুরু করে দেওয়া হয়। রাস্তায় নামে ৮০-রও বেশি পুলিশ। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেয় গোয়েন্দা বিভাগও। ঘটনাটি রাজকোট অঞ্চলের। এমনিতেই সেখানকার প্রায় সব রাস্তার মোড়ে সিসিটিভি লাগানো রয়েছে। খুদের কথা মতো যে জায়গা থেকে তাকে কিডন্যাপ করা হয়েছিল সেই এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখতে শুরু করেন অফিসাররা। যথা সময়ে স্ক্রিনে ওই খুদের ছবিও ধরা পড়ে। হিসাব মতো এরপরই একটা সাদা গাড়ি এসে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু কোথায় কি! না এল গাড়ি, না এল কোনও কিডন্যাপার। এদিকে এলেকার প্রায় সব গাড়ি চেক করেও কিছুই সন্দেহজনক খুঁজে পাননি অফিসাররা। বেশ কিছুক্ষণ এই ‘নাটক’ চলতে থাকে। এরপরই টনক নড়ে পুলিশ কর্তাদের। সন্দেহ হয়, ওই খুদে আদৌ সত্যি বলছে তো?
আরও শুনুন: একটা ইঁদুর ধরলেই ৪১ হাজার টাকা! দেশের কোন স্টেশনে মিলছে এমন সুযোগ?
ঠিক তাই, একটু চেপে ধরতেই গড়গড় করে সবটা স্বীকার করে নেয় ওই খুদে। নিজে মুখেই বলে, এতক্ষণ সে যা বলেছে তার সবটাই বানানো গল্প। আসলে, সেদিন টিউশনের হোমওয়ার্ক করা হয়নি। তাই কোনওভাবে টিউশন যাওয়াটা বন্ধ করতে হত। এদিকে বাড়িতে মা জোর করে টিউশনে পাঠিয়েছেন। তাই এক বন্ধুর সঙ্গে আলোচনা করে এমন কিডন্যাপিং এর গল্প ফেঁদেছিল সে। যা শুনে এতক্ষণ গোটা শহরে তাণ্ডব চালালেন পুলিশ আধিকারিকরা। বয়সের কথা ভেবে, তার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে ভালোভাবে বুঝিয়ে বলা হয়েছে, এমনটা যেন ভবিষ্যতে আর না করে সে। একইসঙ্গে তার বাবা-মা কেও পড়াশোনার জন্য অতিরিক্ত চাপ না দেওয়ার অনুরোধ করেছেন পুলিশ অফিসাররা। তবে এই ঘটনায় রীতিমতো অবাক সকলেই। বিশেষত একটা দশ বছরের খুদের মাথায় এমন ভাবনা এল কীভাবে, তা কিছুতেই বুঝতে পারছেন না অনেকেই।