শীতকালে কাঁথা আর বর্ষাকালে ছাতা। শুধু বর্ষাই বা কেন! রোদেও ছায়া দেয় ছাতা। ছাতা নামটার সঙ্গেই তো গভীর সম্পর্ক ছায়ার। চার হাজার বছরের সম্পর্ক! কোন দেশে ছাতা আবিষ্কার হয়েছে, তা নিয়ে অবশ্য বিতর্ক রয়েছে। আসুন শুনে নিই, মানব সভ্যতার অন্যতম সেরা আবিষ্কার ছাতার জন্ম ও তার বিবর্তনের ইতিহাস।
প্রয়োজনই উদ্ভাবনের কারণ। বিষয়টি যদি ছাতা হয় তবে তো তার হাজারও প্রয়োজন রয়েছে। বৃষ্টিতে ছাতা, রোদে ছাতা। ‘আমব্রেলা’ শব্দটিই এসেছে লাতিন শব্দ ‘আমব্রা’ থেকে। ‘আমব্রা’-র আভিধানিক অর্থ ছায়া। অর্থাৎ কিনা রোদ থেকে বাঁচতেই ছাতার জন্ম। পরে বৃষ্টি থেকে মাথা ও শরীর বাঁচাতেও কাজে আসে ছাতা। কিন্তু ছাতার উৎপত্তি কোথায়?
মনে করা হয় মানুষ ছাতার ব্যবহার করছে মোটামুটি চার হাজার বছর আগে। অনেকের ধারনা, ছাতা আবিষ্কার হয়েছে চিনে। অনেকে আবার মিশর, গ্রিসের কথাও বলে থাকেন। আসলে এই তিন অঞ্চলের প্রাচীন চিত্রকর্মে ছাতার দেখা মেলে। চিনের মতটাই অবশ্য জোরালো। মনে করা হয়, চিনে ছাতা তৈরি হওয়ার পর তা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে যায় এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। পরে পাড়ি দেয় ইউরোপেও। তবে অষ্টাদশ শতক পর্যন্তও কিন্তু ছাতার আকৃতি ছিল বিরাট। ওজনও ছিল বেশি। তখন ছাতার রড তৈরি হত কাঠ অথবা তিমি মাছের কাঁটা দিয়ে। হাতলগুলো ছিল দেড় মিটার লম্বা। একেকটি ছাতার ওজন হত ৪-৫ কেজি।
আরও শুনুন: পাখির পালক থেকেই এসেছে পেন! কী করে রূপ পেল এখনকার কলম?
চীনে যে সময় ছাতা আবিষ্কার হয়েছিল, তখন ছাতার ব্যবহার মেয়েদের মধ্যেই কিন্তু সীমাবদ্ধ ছিল। পুরুষের হাতে ছাতা উঠেছে অনেক পরে। মেয়েদের ব্যবহারের জিনিস হলেও, যে কোনও মেয়ে ছাতা ব্যবহার করতে পারত না। শুধুমাত্র সমাজের সম্ভ্রান্ত এবং আর্থিকভাবে শক্তিশালী পরিবারের মহিলারাই ছাতার ব্যবহার করতেন। ছাতা ছিল সামাজিক প্রভাব, প্রতিপত্তির প্রতীকও।
১৮৩০ সালে চালু হয় বিশ্বের প্রথম ছাতার দোকান। যার নাম “জেমস স্মিথ অ্যান্ড সন্স”। দোকানটি লন্ডনের ৫৩ নিউ অক্সফোর্ড স্ট্রিটে অবস্থিত। অবাক করা সত্যি হল, “জেমস স্মিথ অ্যান্ড সন্স” আজও ইউরোপের অন্যতম সেরা ছাতার ঠিকানা। প্রায় দুশো বছরের দোকান রমরমিয়ে চলছে। আধুনিক ছাতার জন্য ১৮৫২ সালটাও গুরুত্বপূর্ণ। এই বছরেই সুইচের সাহায্যে ছাতা খোলার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন গেজ বা গেড নামের এক ফরাসি। এরপর বলতে হয় জার্মান হ্যানস হাপটের কথা। এই ব্যক্তি ১৯২০ সালে ছাতা তৈরিতে অভিনব পরিবর্তন আনেন। পকেটে বহনযোগ্য ছাতা তৈরি করে ফেলেন তিনি। নাম দেন “লর্ড অ্যান্ড লেডি”। তবে ছাতার জীবনে শেষ বিপ্লবটি ঘটে যায় ১৯৬০ সালে। এই বছরে পলেস্টার কাপড়ের উদ্ভাবন হয়। ছাতায় যার ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয় বিশ্ব জুড়ে।
আরও শুনুন: ফোনে ধরলেই তো বলেন ‘হ্যালো’, জানেন এই শব্দ কোথা থেকে এল?
প্রয়োজনে কত বড় উদ্ভাবন হতে পারে ছাতা তার নজির। মূল ব্যাপারটা একই থাকলেও ছাতার জিজাইনের অদলবদল আজও ঘটে চলেছে। সবচেয়ে বড় কথা, জিনিসটার বাজার বাড়ছে বৈ কমছে না। স্বাভাবিক, মধ্যবিত্তের যে ছাতা ছাড়া চলে না। সে একটা ফুটো ছাতা হলেও চলবে। গরিবের মাথা তাতেও খানিক বাঁচে!