বিশ্বভ্রমণে বেরিয়ে গালিভারের দেখা হয়েছিল লিলিপুটদের সঙ্গে। যারা এতটাই ছোট্ট যে নিজেদের ছোট্ট দেশটাই তাদের গোটা পৃথিবী। তবে এই মানুষটির সম্পর্কে কিন্তু সে কথা খাটে না। আকারে যতই ছোট হোন না কেন, গোটা দুনিয়া তাঁর পায়ের তলায়। একেবারে একাই সারা পৃথিবীটা ঘুরে বেরিয়েছেন তিনি। যিনি কিনা বিশ্বের সবচেয়ে বেঁটে মানুষের তকমাও পেয়েছিলেন। কে ইনি? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
প্রাপ্তবয়স্ক একজন মানুষ। কিন্তু তাঁকে দেখলে সে কথা চট করে মনে হবে না কারোরই। কারণ, তাঁর উচ্চতা মাত্র সাড়ে ২৯ ইঞ্চি। আর ওজন? ৩২ পাউন্ড, অর্থাৎ ১৬ কেজির মতো। সেই যে কথায় বলে, ঝড়ে উড়ে যাওয়া, এই মানুষটিকে দেখলে সে কথাকে মিথ্যে বলে মনে হবে না। কিন্তু সেইসব আশঙ্কাকে পাত্তা দিতে তাঁর বয়েই গিয়েছে। ওইটুকু চেহারা নিয়েই গোটা দুনিয়াটা ঘুরে ফেলেছিলেন হেনরি বেহরেন্স। নিজের জীবদ্দশায় যিনি ছিলেন বিশ্বের ক্ষুদ্রতম মানুষ।
আরও শুনুন: টাকা দিলেই মিলবে ভালবাসা! এই দেশে ভাড়ায় মেলে প্রেমিক-প্রেমিকা, যাবেন নাকি?
হ্যাঁ, আশ্চর্য লাগলেও সত্যি। অস্ট্রেলিয়া এবং আন্টার্কটিকা বাদ দিলে বিশ্বের বাকি পাঁচ মহাদেশই ঘুরে দেখেছেন হেনরি। গিয়েছেন লাতিন আমেরিকা, আমেরিকা, মেক্সিকো, ইউরোপ এবং এশিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে। কিন্তু ওইটুকু চেহারা নিয়ে কীভাবে এমন অসাধ্য সাধন করেছিলেন তিনি? আসলে, শারীরিক বৈশিষ্ট্যের জন্য প্রথাগত কোনও কাজ তাঁর মেলেনি বটে। কিন্তু তাঁর জন্য ঘরে বসে থাকেননি হেনরি। বরং যা তাঁর সমস্যা, সেই সমস্যাকেই নিজের সুবিধায় রূপান্তরিত করেছিলেন তিনি। সার্কাসে বামনদের খেলা দেখানোর চল রয়েছে বরাবরই। সেই কাজটিই নিজের জন্য বেছে নিয়েছিলেন হেনরি। এমনিতেই ব্রাজিলে জন্মানোর কারণে জানতেন পর্তুগিজ ভাষা। পরে শিখে নেন আরও তিন-তিনটি ভাষা, ইংরেজি, জার্মান এবং স্প্যানিশ। ফলে দেশবিদেশে ঘুরে খেলা দেখাতেও কোনও সমস্যা ছিল না তাঁর। লন্ডনের কিংবদন্তি ‘শোম্যান’ বার্টন লেস্টারের ‘মিডগেট সার্কাস’-এ তাই চাকরি মিলে যায় হেনরির। ‘কর্নেল পিউয়ি’ নামে এক বেঁটে সেনাপতির অভিনয়ে দর্শকদের মাতিয়ে রেখেছিলেন তিনি। ‘মিডগেট সার্কাস’-এরই এক কর্মী এমিকে বিবাহ করেন হেনরি। এমি-ও ছিলেন বামন, তবে হেনরির চেয়ে ১০ ইঞ্চি লম্বা ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন পাশাপাশি কাজ করার পর ইংল্যান্ডেই সংসার সাজান দুজনে। পরবর্তী কালে একটি তথ্যচিত্রও তৈরি হয়েছে হেনরিকে নিয়ে।
আরও শুনুন: প্রাণ বাঁচাল কাঁচা মাছ, মাঝসমুদ্রে হারিয়ে যাওয়ার দু’মাস পর বেঁচে ফিরলেন ব্যক্তি
সে সময়ে ‘গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’ তৈরি হয়নি। তবে হেনরিকে বিশ্বের সবচেয়ে বেঁটে মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপের একাধিক দেশ। জানা যায়, ১৮৯৬ সালে ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় হেনরির ওজন ছিল আর পাঁচটা স্বাভাবিক শিশুর মতোই। তবে হঠাৎ-ই শারীরিক বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায় তাঁর। দুবছর বয়সে তাঁর উচ্চতা যা ছিল, ১৯৬১ সালে ৬৬ বছর বয়সে মৃত্যু পর্যন্ত তাই থেকে যায়। কিন্তু শরীরের উচ্চতা যাই হোক না কেন, নিজের কাজের জোরেই একদিন আকাশছোঁয়া খ্যাতি কুড়িয়েছিলেন হেনরি বেহরেন্স।