ধর্ম আলাদা। তবে প্রার্থনাস্থল নয়। একইসঙ্গে ভিড় জমান হিন্দু-মুসলিম-খ্রিস্টান। ঈশ্বরের কাছে নিজেদের সমর্পন করাই উদ্দেশ্য। আর সবটাই হয় একসঙ্গে মিলেমিশে। তার মধ্যে কোনও অশান্তি বা কোনও হিংসা থাকে না। কোথায় আছে এমন প্রার্থনাস্থল? আসুন শুনে নিই।
ধর্মীয় বিশ্বাস ভেদে আলাদা হয় প্রার্থনাস্থল। হিন্দুদের ক্ষেত্রে মন্দির। মুসলিমদের মসজিদ। আর খ্রিশ্চানদের ক্ষেত্রে চার্চ। শিখ, বৌদ্ধ এঁদের রয়েছে আলাদা আলাদা প্রার্থনা জানানোর জায়গা। এমনকি ধর্মভেদে ঈশ্বরকে ডাকাও হয় একেক নামে। কিন্তু এমনও এক দরগা রয়েছে যেখানে সারাবছর একসঙ্গে প্রার্থনা জানাতে আসেন হিন্দু-মুসলিম-খ্রিশ্চান সহ অন্য ধর্মের মানুষজন।
কথা বলছি হায়দ্রাবাদের ‘হজরত রফিউদ্দিন শাহ্ কুয়াদ্রি’ দরগা সম্পর্কে। এখানেই সর্ব ধর্মের এক অদ্ভুত সহাবস্থান চোখে পড়ে। দরগা মূলত মুসলিমদের পবিত্র স্থান। তবে শাহ্ কুয়াদ্রি দরগা আলাদাভাবে মুসলিম বা হিন্দুদের জন্য তৈরি নয়। এই স্থানটি এলাকার সমস্ত মানুষের কাছেই পবিত্র। স্থানীয় বিশ্বাস, বিশ শতকের প্রথমদিকে এই দরগা তৈরি হয়েছিল। তখন থেকেই যে কোনও ধর্মের মানুষের জন্য এই দরগায় অবারিত দ্বার। দরগা তৈরি হয় কোনও সুফি সাধকের স্মৃতিতে। তার নামও দেওয়া হয় নির্দিষ্ট সিদ্ধ পুরুষের নামানুসারে। এই দরগাও বিখ্যাত সুফি সাধক হজরত রফিউদ্দিন কুয়াদ্রির স্মৃতি তৈরি। একসময় এলাকার অন্যতম জ্ঞানী পণ্ডিত হিসেবে তাঁর সুনাম ছিল। অনেকেই বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে তাঁর কাছে আসতেন। কোনওদিন ধর্মভেদে কাউকে আলাদা চোখে দেখতেন না তিনি। তাই তাঁর দরগাতেও একই নিয়ম মানা হয়। প্রতি বছর এই দরগায় বিশেষ এক উৎসবের আয়োজন হয়। সে সময় ভিড় হয় চোখে পড়ার মতো। স্থানীয় এলাকার মানুষজন তো বটেই, আশেপাশের এলাকা থেকেও অনেকে এই স্থান দর্শন করতে আসেন। তাঁদেরও সর্বধর্মের সহাবস্থান নিয়ে বিশেষ কোনও আপত্তি থাকে না। সকলে মিলে একসঙ্গে প্রার্থনা জানান দরগায়। অনেকেই বিশ্বাস করেন এখানে মনের ইচ্ছা জানালে অবশ্যই পূরণ হয়। বিশেষত রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে ম্যাজিকের মতো কাজ করে এই দরগার প্রসাদ। সেই বিশ্বাস নিয়ে ধর্ম পরিচয় ভুলে এখানে ছুটে আসেন সকলে।