ভূত, তথা মৃত আত্মাদের জন্য অন্তত একটি দিন বরাদ্দ রয়েছে গোটা বিশ্বেই। যে দিন নাকি পৃথিবীর মাটিতে অবাধ আনাগোনা চলে তেনাদের। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে এই দিনটি পালন করার ভিন্ন ভিন্ন রীতি রয়েছে। কালীপুজোর এক দিন আগে ভূত চতুর্দশীর দিন আমরাও পালন করি এই উত্সব। আসুন, জেনে নেওয়া যাক বিভিন্ন দেশে কীভাবে পালিত হয় ভূত দিবস ‘হ্যালোউইন’।
অষ্টম শতাব্দীতে পোপ তৃতীয় জর্জ ১ নভেম্বর দিনটিকে মৃত ও সাধুদের দিন হিসেবে ঘোষণা করেন। এই দিনকে বলা হয় অল সেন্টস ডে। তার আগের দিন সন্ধেবেলা অল হ্যালো’স ইভ। পরবর্তী কালে এই দিনটি পরিচিত হয়ে যায় হ্যালোউইন বলে। তাই প্রতি বছর ৩১ অক্টোবর মৃত পূর্বপুরুষদের স্মরণ করেন খ্রিস্টান ধর্মের মানুষরা। তবে সারা পৃথিবীতেই মোটামুটি অক্টোবর মাসের শেষ দিকে বা নভেম্বর মাসের শুরুতেই কোনও একটি দিনকে ‘অল সোলস ডে’ হিসেবে ধার্য করা হয়।
আরও শুনুন: বিলেতে মৃত্যু বড়লাটের, তবে কীসের টানে আজও নেটিভ শহরে ঘোরে হেস্টিংসের ভূত?
প্রাচীন কেলটিক উৎসব হিসেবেই হ্যালোউইনের সূচনা হয়েছিল। উৎসবের দিন ছিল ৩১শে অক্টোবর। আর কেলটিক প্রথা অনুযায়ী, অতৃপ্ত আত্মাদের বিদায় করার জন্য ব্যবহার করা হত টারনিপ নামে একটি সবজি। ষোড়শ শতকে আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলসের অধিবাসীরা এই দিনটিতে নিজেদের সাজিয়ে তুলতেন ভূতুড়ে পোশাকে। তারপর বাড়ি বাড়ি গিয়ে গান গেয়ে, কবিতা শুনিয়ে ‘ট্রিট’ অর্থাৎ খাবারদাবার চাইতেন। বিশ্বরাজনীতিতে আমেরিকার প্রাধান্য লাভের সঙ্গে সঙ্গে ইউরোপের দেশগুলি থেকে অনেকেই পাড়ি জমালেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে। আর তাঁদের সঙ্গেই আমেরিকায় এল ‘ট্রিক অর ট্রিট’-এর রীতিও। কেবল বদলে গেল একটি জিনিস। আমেরিকায় টারনিপ চাষ হত না, তাই সেই জায়গা নিল কুমড়ো।
আরও শুনুন: কালীপুজো মানেই ছিল ‘বুড়িমার চকলেট বোম’, কে এই বুড়িমা?
লাতিন আমেরিকায় মৃতদের জন্য নির্ধারিত দিনটিকে ডাকা হয় ‘ডে অফ দ্য ডেড’ নামে। সপ্তাহ জুড়ে এই প্রথা পালন করেন মেক্সিকানরা। এই রেওয়াজ প্রায় হাজার বছরের পুরনো। নভেম্বর মাসের প্রথম দুদিন মৃতদের শ্রদ্ধা জানানোর পর কঙ্কালের সাজে ম্যাকাব্রেলি প্যারেডে অংশ নেন লাতিন আমেরিকানরা।
অস্ট্রিয়াতেও এক দিন নয়, মৃতদের জন্য পালন করা হয় অল সোলস উইক। ৩০ অক্টোবর থেকে ৮ নভেম্বর এর মেয়াদ। পূর্বপুরুষদের মৃত আত্মার উদ্দেশে টেবিলের ওপর রুটি, জল রেখে দেন এই দেশের মানুষেরা। সারারাত আলো জ্বালা থাকে ঘরে। চেক প্রজাতন্ত্রের অধিবাসীরাও হ্যালোউইনের দিন বাড়ির ফায়ারপ্লেসের পাশে চেয়ার সাজিয়ে রাখেন। তাঁদের বিশ্বাস, এই দিন পরিবারের মৃত সদস্যেরা বাড়িতে আসেন।
কেবল পাশ্চাত্যে নয়, প্রাচ্যেও রয়েছে হ্যালোউইনের চল। তবে এর নামও আলাদা, আর সংস্কৃতি ভেদে বদলে যায় রীতিনীতিও। জাপানে গরমকাল জুড়ে চলে ফেস্টিভ্যাল অফ হাঙ্গরি ঘোস্টস। জাপান এবং চিন, দুই দেশেই অশুভ শক্তিদের হাত থেকে রেহাই পেতে জ্বালিয়ে রাখা হয় লন্ঠন। চিনে এই উৎসবের নাম তেং চেই।
আর আমাদের দেশে? ভারতে আত্মাদের উদ্দেশে জল দেওয়া হয় মহালয়ার সকালে। নবরাত্রি শুরুর আগের দিন মৃত মানুষদের উদ্দেশে তর্পণ করা হয়। আবার কালীপুজোর আগের দিন পালিত হয় ভূতচতুর্দশী। সেদিন চোদ্দ পুরুষের উদ্দেশে জ্বালানো হয় চোদ্দ প্রদীপ। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের চান্দ্র মাস অনুযায়ী মৃতদের স্মরণ করার দিন আসে মার্চ মাস নাগাদ। যে পরবের নাম শবেবরাত।