যার অভিযোগে জেলে যেতে হয়, জেল থেকে ছাড়ানোর ব্যবস্থাও তিনিই করেন। শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। গুজরাটের এক মহিলা ১০ বছরে তাঁর স্বামীকে ৭ বার জেলে পাঠিয়েছেন। অথচ প্রত্যেকবার জামিনের ব্যবস্থাও করেছেন তিনি নিজেই। তবে কতদিন আর এইভাবে চলতে পারে, তাই সম্প্রতি অদ্ভুত এক কান্ড ঘটিয়েছেন ওই মহিলার স্বামী। ঠিক কী করেছেন তিনি? আসুন শুনে নিই।
গার্হস্থ্য হিংসার ঘটনা এ দেশে নতুন নয়। বিশেষত গ্রামের দিকে হামেশাই এমন ঘটনার কথা শোনা যায়। এক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়েছিল। স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আইনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন এক মহিলা। তাঁর অভযোগের ভিত্তিতেই স্বামীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। একবার-দুবার নয়, টানা সাতবার এইভাবে গারদবাস করতে হয়েছে ওই ব্যক্তিকে। তবে সম্প্রতি তিনি নিজেই স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন।
কী ঘটেছে ঠিক?
ঘটনাটি গুজরাটের। সেখানকার মাহসেনা অঞ্চলের এক দম্পতির কাণ্ড দেখে রীতিমতো অবাক পুলিশ কর্তারা। ২০০১ সালে প্রেমচাঁদ মালির সঙ্গে বিয়ে হয় সোনু মালি-র। বিয়ের প্রথম কয়েকবছর নিশ্চিন্তেই কাটিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু প্রেমচাঁদ বরাবরই স্ত্রী-কে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করতেন বলে অভিযোগ। প্রথমদিকে চুপচাপ মেনে নিলেও ২০১৪ সালে মুখ খোলেন সোনু। স্বামীর নামে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। ঘটনার জল গড়ায় আদালতে। প্রেমচাঁদকে ডেকে রীতিমতো ধমক দেন বিচারপতি। সেইসঙ্গে স্ত্রী সোনু-কে প্রতিমাসে ২০০০ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু সেই টাকার কিছুই দিতে পারেননি প্রেমচাঁদ। তাই আদালতের নির্দেশ অমান্য করায় তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারপরের ৫ মাস জেলেই কাটাতে হয় প্রেমচাঁদকে। সাধারণত এমন ঘটনার পরিণতি হয় বিবাহবিচ্ছেদ। কিন্তু এক্ষেত্রে তেমনটা হয়নি। বরং নিজেই স্বামীকে জেল থেকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করেন স্ত্রী সোনু। জেল থেকে ছাড়াও পান প্রেমচাঁদ। ফিরে এসে আবার একসঙ্গে থাকতে শুরু করেন তাঁরা। কিন্তু এতকিছুর পরেও প্রেমচাঁদের স্বভাবে কোনও পরিবর্তন হয়নি। অভিযোগ, জেল থেকে ফিরে এসেও স্ত্রী-কে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করতেন তিনি। বাধ্য হয়েই ফের আদালতে ছোটেন সোনু। আবার গ্রেপ্তার হতে হয় প্রেমচাঁদকে। আর এভাবেই ২০১৬ থেকে ২০২০, প্রতিবছর জেলে যেতে হয় প্রেমচাঁদকে। অদ্ভুতভাবে প্রতিবার তাঁকে ছাড়িয়েও নিয়ে আসেন তাঁর স্ত্রী সোনু-ই। এভাবেই ওই কয়েকবছরে টানা ৬বার হাজতবাস করতে হয় প্রেমচাঁদকে।
দু-বছর পর ঘটনার পুনরাবৃত্তি। আদলতের নির্দেশ সত্ত্বেও স্ত্রী-কে টাকা না দেওয়ায় ফের জেলে যেতে হয় প্রেমচাঁদকে। যথাসময়ে জামিনে মুক্তিও পান তিনি। কিন্তু বাড়ি ফিরেই শুরু হয় নতুন গণ্ডগোল। সামান্য এক কারণে স্ত্রী-র সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। তবে এবার তিনি নন, সমস্যা শুরু করেন তাঁর স্ত্রী সোনু। স্বামীকে রীতিমতো মারধর করেন বলে অভিযোগ। এমনকি স্ত্রী-র বিরুদ্ধে চোখে লংকা গুড়ো ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগও করেন প্রেমচাঁদ। তাই এবার তিনি নিজেই স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে থানায় হাজির হন। একে তো এতবার জেলে যাওয়ার রাগ, তার ওপর তুচ্ছ কারণে তাঁকে মারধর করা, সবমিলিয়ে স্ত্রীর নামে লম্বা নালিশ জানিয়ে আসেন তিনি। এখানেই শেষ নয়, ঘটনার পর রাগ করে বাড়িতেও ফেরেননি প্রেমচাঁদ। চলে যান গ্রামের বাড়িতে। সেখানে থেকেই তাঁর উপর হওয়ার অন্যায়ের সঠিক বিচার পাওয়ার আশায় থাকবেন তিনি, এমনটাই দাবি প্রেমচাঁদের।