অনেকের কাছেই বিমানসেবিকার কাজ রীতিমতো ঈর্ষণীয় একটা ব্যাপার। একে তো দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়ানোর কাজ, তার উপর ঝকঝকে বিমানসেবিকাদের বেতনের অঙ্কটাও রীতিমতো চমকে দেওয়ার মতো। আর তেমনই একটি পেশায় ছয় দশকেরও বেশি সময় কাটিয়ে ফেলেছেন এই মহিলা। হ্যাঁ, তিনিই পৃথিবীর প্রবীণতম বিমানসেবিকা। আর তার জন্য গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নামও তুলে ফেলেছেন তিনি। আসুন, শুনে নিই তাঁর কথা।
একই পেশায় একটানা পঁয়ষট্টিটা বছর! ভাবতে পারেন? তবে সেই অসাধ্যটাই করে ফেলেছেন ৮৫ বছরের এই বৃদ্ধা। বিমানের সমস্ত যাত্রীদের খেয়াল রাখা, তাঁদের সমস্ত সুবিধা-অসুবিধাগুলো বুঝে পরিষেবা দেওয়ার কাজটা কিন্তু মোটেই সহজ নয়। আর বিমানসেবিকার সেই কঠিন কাজটাই এত বছর ধরে দক্ষ ভাবে সামলেছেন তিনি। আর সেই কাজই এনে দিয়েছে তাঁকে স্বীকৃতি। তিনি জায়গা করে নিয়েছেন গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে।
আরও শুনুন: অফিসের ধর্মীয় প্রার্থনাসভায় যোগ দিতে নারাজ, দুই কর্মীকে বরখাস্ত করল সংস্থা
এখনও পর্যন্ত তিনিই বিশ্বের প্রবীণতম বিমানসেবিকা। শুধু প্রবীণই নন। বিমানসেবিকা হিসেবে দীর্ঘতম কর্মজীবনের অধিকারীও তিনি। গত সপ্তাহেই সেই শিরোপা অর্জন করেছেন বেট নাশ নামে ওই মহিলা। গত ৬৫ বছর ধরে আমেরিকার এটি বিমানসংস্থার সঙ্গে কর্মরত নাশ। দেখতে দেখতে বয়স পেরিয়েছে আশির কোঠা। তবে তাতেও কাজের উদ্যমে এতটুকু টান পড়েনি।
পেশাগত জীবন শুরু ১৯৫৭ সালে। সে সময় অবশ্য বিভিন্ন বিমানসংস্থার সঙ্গে কাজ করেছেন বস্টনের বাসিন্দা নাশ।। তখন আসলে বিমানসেবিকারা নিজেদের পছন্দমতো বিমানসংস্থা ও উড়ান বেছে নিতে পারতেন। নাশের কেরিয়ারের বড় অংশই কেটেছে নিউইয়র্ক, বস্টন এবং ওয়াশিংটন ডিসি থেকে আসাযাওয়া করা বিমানে।
সাড়ে ছ-দশকেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন বিমানে এয়ারহোস্টেস হিসেবে কাজ করেছেন নাশ। ফলে নিত্যযাত্রীদের অনেকের কাছেই রীতিমতো কাছের হয়ে উঠতে পেরেছিলেন নাশ। এক যাত্রী যেমন জানিয়েছেন, নাশ যে বিমানে থাকতেন, সেই বিমানে যাতায়াত করতেই বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করতেন তিনি। এমনই ছিল নাশের জনপ্রিয়তা।
আরও শুনুন: ঘরছাড়া করেছে যুদ্ধ, নির্জন দ্বীপের হরে কৃষ্ণ মন্দিরই এখন আশ্রয় ইউক্রেনের উদ্বাস্তুদের
না, একেবারেই সহজ ছিল না কাজটা। নিজের পেশার পাশাপাশি দক্ষতার সঙ্গে সামলাতে হয়েছে পরিবারকেও। বৃ্দ্ধা মা আর ছেলের টানে তাই প্রতিদিন উড়ান শেষ করে বাড়ি ফিরতেই হত নাশকে। ছেলেটি বিশেষভাবে সক্ষম হওয়ার কারণে তার দেখাশোনায় বাড়তি নজর দিতেই হত তাঁকে। আর সেই সব প্রতিবন্ধকতাকে সামলেই দুর্দান্ত ভাবে নিজের কাজ করে গিয়েছেন নাশ। ৬৫ বছরের পেশাগত জীবনে তাঁর দিকে ওঠেনি একটিও অভিযোগের আঙুল। আর কাজের প্রতি সেই ভালবাসাই তাঁকে এনে দিয়েছে অনন্য সম্মান। প্রবীণতম বিমানসেবিকা হিসেবে বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন নাশ।
যাঁরা বলেন, ঘরকন্নার কাজ সামলে বাইরের জগৎ সামলানো যায় না… তাঁদের কাছে যেন এক জাজ্বল্যমান উদাহরণ প্রাণশক্তিতে ভরপুর এই মহিলা।