বাংলাদেশের বন্যা ওয়ানড়ের স্মৃতি ফেরাচ্ছে। ভূমিধসের জেরে একইভাবে ধংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল ওয়ানড়। সেখানকার পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক নয়। এই আবহে ওয়ানড়ের জন্য বিশেষ সাহায্য পাঠাল খুদের দল। ঠিক কী করেছে তারা? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ভালোবেসে বাড়ির খুদে সদস্যকে অনেকেই টাকা দেন। সেসব যত্ন করে জমিয়ে রাখে ছোটরা। প্রয়োজনে খরচও হয় সেই জমানো টাকা থেকে। মাঝেমধ্যে লজেন্স বা চিপসের আবদার মেটায় ওই জমানো টাকা। কিন্তু একদল খুদে নিজেদের যাবতীয় সঞ্চয় উজাড় করে দিয়েছে বন্যাত্রাণে।
:আরও শুনুন:
মৃত্যু কেবল মিথ্যে হোক! ৮ ঘণ্টার প্রাণপণ লড়াইয়ে ওয়ানড়ে উদ্ধার চার উপজাতি শিশু
ওয়ানড় বন্যার এক মাসও কাটেনি। এরই মাঝে নতুন করে বন্যার কবলে বাংলাদেশ। পূর্ব ভারতের বেশ কিছু জায়গার একই অবস্থা। এভাবেই প্রকৃতির তাণ্ডবে রাতারাতি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় দক্ষিণের ওয়ানড়। নিহতর সংখ্যা ৩৫০ ছাড়ায় মাত্র কয়েকদিনে। ঘরছাড়া হন বহু। নতুন করে নিজেদের পুরনো ঠিকানায় ফিরতে পারবেন না তাঁদের কেউই। সরকার সাহায্য মিললেও আগের অবস্থায় ফিরতে অনেকটা সময় লাগবে ওয়ানড়ের। এই আবহে অদ্ভুত এক কাণ্ড ঘটিয়েছে তামিলনাড়ুর একদল খুদে পড়ুয়া। ওয়ানড় বন্যার কথা বেশ ভালমতো জানত তারা। কতট ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সে আন্দাজও ছিল। তাই বন্যাত্রাণে সাহায্য করবে বলে ঠিক করে ওই খুদের দল। কিন্তু তারা তো রোজগার করে না। সাহায্যের অছিলায় টাকা চাইলে বাড়ি থেকে হয়তো দিয়েও দেবে, কিন্তু তাতেও সায় ছিল না কারও। অগত্যা, ভরসা পিগিব্যাঙ্ক। অতিযত্নে লুকিয়ে রাখা তালা দেওয়া বাক্স কিংবা ভাঁড় নিয়েই স্কুলে হাজির হয় ওই পড়ুয়ার দল। ভিতরে গুচ্ছ গুচ্ছ কয়েন। সবটা যোগ করলেও টাকার অঙ্ক খুব বেশি হবে না। কিন্তু তাতে কি! যেটুকু সামর্থ তাই দিয়েই সাহায্য করবে তারা।
:আরও শুনুন:
বন্যায় ভেসেছে আপনজন, ওয়ানড়ে মৃতদেহ সৎকারের দায়িত্বে মন্দির-মসজিদ-গীর্জা কর্তৃপক্ষ
যেমন ভাবা তেমন কাজ। স্কুলের বেঞ্চেই জড়ো করা হল রাশি রাশি কয়েন। মন দিয়ে সেসব গুনতে বসল খুদের দল। শেষমেশ দাঁড়াল ১০ হাজার ৬৬৮ টাকা। স্কুল শিক্ষকদের সহযোগিতায় সেই টাকা পাঠানো হল বন্যাত্রাণে। খুদেদের এই পদক্ষেপে বেজায় খুশি স্কুলের শিক্ষকরা। তাদের অভিভাবকরাও একইভাবে সমর্থন জানিয়েছেন। প্রত্যেকের যে নিয়মিত টাকা জমানোর অভ্যাস ছিল তা নয়। তবে ওয়ানড়ের পরিস্থিতি দেখে রোজ নিয়ম করে বাবা-মায়ের থেকে খুচরো আদায় করতে শুরু করে খুদের দল। কেন, কী প্রয়োজন সেসব বলতে চাইত না কেউই। অল্প টাকা খুচরো দিতে আপত্তি করতেন না অভিভাবকরাও। সেই টাকাই জমত পিগি ব্যাঙ্কে। এইভাবে জমিয়ে রাখা টাকাই বন্যাত্রাণে দান করল খুদের দল। কেউ কেউ নিজের ৬ মাস ধরে জমানো টাকার সবটা দান করেছে। কেউ আবার অল্প কদিনে যা জমেছে সেটা নিয়েই হাজির হয়েছিল। সবাই মিলে সেই টাকা গুনে শিক্ষকদের হাতে তুলে দেয়। তাঁরা দায়িত্ব নিয়ে স্থানীয় পোস্ট অফিসে সেই টাকা জমা দিয়ে খুদের দলের সাধপূরণ করেন।