মাথা আছে, কিন্তু স্বস্থানে নেই। এমনটাও কি শুনেছেন কেউ? সেটাই ঘটেছিল এই কিশোরীর সঙ্গে। আর সেই অসহ্য অবস্থা নিয়েই এক যুগ কাটিয়ে দিয়েছিল এই মেয়েটি। অবশেষে মিলল মুক্তি। কীভাবে? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
এক যুগ। মানে বারো বছর। এতদিনের অসহনীয় যন্ত্রণা থেকে অবশেষে মুক্তি। বেঁচে থাকাই প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছিল যার কাছে, তাকেই যেন নতুন জীবন ফিরিয়ে দিলেন চিকিৎসকেরা। আরও একবার প্রমাণিত হল, বিজ্ঞান মানুষের কাছে কী অসম্ভব আশীর্বাদ হয়ে উঠতে পারে!
আরও শুনুন: হাসপাতালে পৌঁছে দিচ্ছেন ওষুধ, প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ইউক্রেনবাসীকে দেশ ছাড়তে সাহায্য করছেন শিখ দম্পতি
ভাবছেন, কী ঘটেছে ঠিক? তাহলে খুলেই বলা যাক।
সদ্য টিনএজে পা দিয়েছে আফশিন গুল। মানে তেরো বছর বয়স হল তার। সদ্য কিশোরী হয়ে ওঠার এই সময়টা ভারি সুন্দর। বন্ধুদের সঙ্গে খুনসুটি হাসিঠাট্টা, কোনও বন্ধুকে হঠাৎ ভাল লেগে যাওয়া, সব মিলিয়ে একটা ফুরফুরে জীবন। কিন্তু আফশিনের ভাগ্যে সেসব কিছুই ঘটে ওঠেনি। কী করেই বা ঘটবে? জন্ম থেকেই যে দুরারোগ্য অসুখে ভুগছে সে। সেরিব্রাল পলসিতে আক্রান্ত আফশিন। আর জন্মের মাত্র মাস আষ্টেক পরেই গোদের উপরে বিষফোঁড়ার মতো জুটে গিয়েছিল আরও এক মারাত্মক সমস্যা। খেলতে খেলতে পড়ে গিয়ে ঘাড়ে টান লেগেছিল মেয়েটির। আর তার ফলে তার মাথা একদিকে প্রায় ৯০ ডিগ্রি হেলে গিয়েছিল। মা-বাবা ভেবেছিলেন আপনা থেকেই ঠিক হয়ে যাবে, কিন্তু তা আদৌ হয়নি। পাকিস্তানের দরিদ্র পরিবারটির পক্ষে ব্যয়বহুল কোনও চিকিৎসা করানোও সম্ভব ছিল না। সুতরাং কাঁধের সমান্তরালে ঝুঁকে থাকা মাথা আর প্রচণ্ড যন্ত্রণা নিয়েই এতগুলো দিন কাটিয়েছে আফশিন।
আরও শুনুন: স্ত্রীকে কাছে রাখার দিশা দেখাল রিভলবার! বিশ্বযুদ্ধের ঘরছাড়া সেনাদের প্রিয় ছিল ‘সুইটহার্ট গ্রিপস’
ছবিটা বদলাল এতদিনে। আফশিনকে নিয়ে হওয়া একটি খবরের সূত্র ধরে তার কথা পৌঁছেছিল এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাছে। তারাই টাকা তুলে মেয়েটির সার্জারির ব্যবস্থা করে, যে সার্জারির খরচ প্রায় ২৬ লক্ষ টাকা। করোনাকালের দরুন সার্জারি করতে আরও খানিক দেরি হয়ে যায়। নয়া দিল্লির হাসপাতালে এই অস্ত্রোপচার হওয়ার সময়েও চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, আফশিনের বেঁচে ফেরার সম্ভাবনা মাত্র ৫০ শতাংশ। তবে, মাঝে মাঝে তো সত্যিই এমন কিছু ঘটে, যা আসলে হওয়া উচিত। আফশিনের মতো দুরবস্থাও যেমন বিরল, তেমনই তার জীবনে বিরল সৌভাগ্যও এনে দিয়েছেন এই চিকিৎসকেরা। জীবনে কার্যত প্রথমবার সোজা হয়ে তাকাতে পেরেছে কিশোরী আফশিন। সোশ্যাল মিডিয়ার পাতায় চিকিৎসকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা উজাড় করে দিয়েছে সে। আপাতত নতুন জীবন ফিরে পাওয়ার আনন্দে মশগুল তেরো বছরের কিশোরী।