ধরা যাক, আপনি কোনও ব্যাপারে একেবারে তিতিবিরক্ত। আর সেই সময় আপনার বস আপনাকে ফোন করলেন। আপনি ফোন তো ধরলেনই না, উলটে বস কল রিসিভ করার অনুরোধ করে মেসেজ পাঠালে, আপনি উত্তরে লিখে পাঠেলন, আপনি বিরক্ত এবং আপনার কথা বলতে ইচ্ছে করছে না… এরপরই বসের কাছ থেকে মেসেজে গোলা বারুদ ছুটে আসবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু না। স্তুতি রাইয়ের ক্ষেত্রে অবশ্য তা হয়নি। বসকে, ‘কথা বলতে ইচ্ছে করছে না’ লিখে পাঠানোয়, তাঁর বস উত্তরে তাঁকে মেসেজে লেখেন, তোমার হাতের কাজগুলো আমায় দিয়ে দাও আর তুমি ৩-৪ দিনের ছুটি নিয়ে নাও। অনেকেই জানতে চাইবেন কে সেই বস? কোন কোম্পানিতে এমন বস আছেন? আসুন তবে শুনে নিই এই বিরল বসের কথা।
চাকরির বাজারে সময়টা ভাল নয়। বড় বড় কোম্পানিতে ছাঁটাই চলছে। রিসেশনের ধাক্কা লাগতে শুরু করেছে বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিতে। এই সময় বস চটে যায় এমন কাজ কি করবেন কোনও কর্মী! যে ঘটনার কথা আমরা শুনছি, সেখানে বস চটে যাবেন কি যাবেন না সে সবের তোয়াক্কা করেননি এক তরুণী। বসের ফোনের জবাবে তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন- কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।
আরও শুনুন: মহিলা না পুরুষ! দেখে বোঝার উপায় নেই, কেরলের পুজো দেওয়ার প্রথায় বিস্মিত নেটদুনিয়া
এদিকে আজকের জীবনে চাকরি বাঁচিয়ে রাখাটা বহু দক্ষ কর্মীর কাছেই বড় দায়। কোনও কারণে একটু বেশি ছুটির দরকার হলে, টেনশন হতে থাকে। এমনকি ওয়ার্ক-ফ্রম-হোমের জমানায় বাথরুমেও ফোন নিয়ে যেতে হয় পাছে, সিনিয়র বা টিম লিডারের কল মিস হয়ে যায়। কিন্তু সবসময় এমন তটস্থ থাকা তো সুস্থ কাজের পরিবেশের উদাহরণ হতে পারে না। ভাল ফোন, ভাল রিল, ভাল স্পিড… আমাদের আজকের জীবনের এই এত্ত সব ভাল-ভালর চাহিদায় শান্ত, স্বাভাবিক জীবনযাপন অনেকাংশেই বিপর্যস্ত। তাই মানসিক স্বাস্থ্য, ওয়ার্ক লাইফ ব্যালেন্স, মেডিটেশন নিয়েও উত্তোরত্তর চর্চা বাড়ছে। আমরা এখন বুঝতে শিখছি রোজকার অফিস-বাড়ি-সংসার-সমাচারের মাঝে নিজেকে সময় দেওয়াটাও জরুরি। শারীরিক কোনও রোগ ব্যাধিতে যতটা যত্ন তৎপরতা দিই, ঠিক ততটাই গুরুত্ব মানসিক সমস্যার ক্ষেত্রেও প্রয়োজন। আর আপনার অফিসের বস বা সিনিয়ররাও যদি এমন মানসিকতার হন, তবে কাজের পরিবেশ অনেকটাই সুস্থ ও স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। নির্দ্বিধায় তাঁদের সঙ্গে আপনি ভাগ করে নিতে পারেন আপনার মনে তৈরি হওয়া সমস্যাগুলিও।
আরও শুনুন: কনের বয়স্ক দাদাকে বিয়েতে বাধ্য বরের বোন! রাজস্থানের অদ্ভুত প্রথার বলি বহু তরুণী
স্তুতি রাইয়ের ক্ষেত্রে ঠিক তেমনটাই হয়েছে। তাঁর এবং তাঁর বসের কথোপকথন সম্প্রতি টুইটারে সবার সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন তিনি। টুইটটি শেয়ার করে স্তুতি মূলত তাঁর অফিসের সুস্থ্য কাজের পরিবেশের কথাই গর্ব করে বলেছেন। ওই টুইটের রিপ্লাইতেই এক নেটিজেনের কথা প্রসঙ্গে তিনি এও জানিয়েছেন, যে তাঁর বস আগে থেকেই এ ব্যাপারে জানতেন, তাই নির্দ্বিধায় তিনি তাঁর বসকে বলে ফেলতে পেরেছেন যে তাঁর এখন কথা বলতে ইচ্ছে করছে। কারোর সঙ্গেই না। আর সবশেষে স্তুতি স্বীকারও করে নিয়েছেন যে, তাঁর নিজেরও পরে মনে হয়েছে যে তিনি সামান্য উদ্ধত আচরণই করে ফেলেছেন বসের সঙ্গে। তবে আজকের দিনেও স্তুতির অফিসের ওয়ার্ক কালচার যে ঈর্ষণীয় তা তাঁর টুইটে, বেশিরভাগ নেটিজেনের রিপ্লাইতেই স্পষ্ট।