একসময় চুরি করতেন, পরে হলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। পরিবর্তনের এহেন নজির চট করে তো দেখা যায় না। কী ঘটেছিল ঠিক? কার কথাই বা বলা হচ্ছে? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
প্রথম জীবনে হাত পাকিয়েছিলেন চুরিবিদ্যায়। শুধু নিজেই নয়, আরও বন্ধুদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে রীতিমতো গ্যাং বানিয়েও ফেলেন। তবে পরবর্তী জীবনে রাজনীতির দুনিয়ায় পা রেখে একেবারে মুখ্যমন্ত্রীর পদ পর্যন্ত পৌঁছে যান তিনিই। সত্যি বলতে, রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের নামে অসততা বা দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা আর সেই সূত্রে চোর তকমা মেলা নতুন নয়। তবে চোর থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর পদে পৌঁছনোর এহেন পরিবর্তন সত্যিই বেনজির। কে এই ব্যক্তি, জানেন?
আরও শুনুন:
আমিষ দ্বন্দ্বে মোদি-রাহুলের ধুন্ধুমার, অথচ ‘নিরামিষ’ আইসক্রিমেই বাজিমাত করেন এই গান্ধী
ইনি মহারাষ্ট্রের প্রথম দলিত মুখ্যমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্ডে। মৃত পশুর চামড়া থেকে ব্যবসায়িক লেদার বানানোর কাজে হাত লাগানোই তাঁর পারিবারিক পেশা। তবে তাঁর ঠাকুরদা লেদার ব্যবসায় রীতিমতো নাম করেছিলেন। এই ব্যবসার মধ্যে দিয়ে স্বদেশি আন্দোলনে কীভাবে অংশ নিতে পারেন, সেই মর্মে শিন্ডের বাবাকে চিঠি লিখেছিলেন খোদ মহাত্মা গান্ধী। কিন্তু বাবার অকালমৃত্যুর পর শিন্ডের পরিবার আচমকা দুরবস্থায় পড়ে। কিশোর শিন্ডে নিজেও কুসঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। বন্ধুদের সঙ্গে দল গড়ে রাস্তার ফেরিওয়ালাদের কাছ থেকে জিনিস চুরি করতে থাকেন। তবে সেই কাজ বেশিদিন চলেনি। এক মহিলা বিক্রেতার থেকে ছোটখাটো গয়না চুরি করে মা’র কাছে ধরা পড়ে যান শিন্ডে। যে দালালের কাছে চোরাই জিনিস বিক্রি করতেন, মা সেখান থেকে ওই জিনিসটি ফের কিনে এনে মহিলাকে ফেরত দিতে বাধ্য করেন। সেদিনই জীবনের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় শিক্ষাটি পেয়েছিলেন তিনি, আত্মজীবনী ‘ফাইভ ডিকেডস ইন পলিটিক্স’-এ সে কথা বলেছেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা শিন্ডে।
আরও শুনুন:
এই আদালতে বিচার হয় খোদ ভগবানের, ভুল না শোধরালে জোটে শাস্তিও
এরপর কখনও ধূপকাঠি বিক্রি, কখনও লজেন্সের কারখানায় কাজ, কখনও বেয়ারার কাজ- নানাভাবে মাকে সাহায্য করার চেষ্টা করেছেন শিন্ডে। কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে একটা বড় বাধা হয়ে দাঁড়াত তাঁর দলিত পরিচয়। শিন্ডে মনে করতে পারেন, একবার দীর্ঘ পথ রোদে হেঁটে এসে এক কুয়োর জলে স্নান করেছিলেন। সেই অপরাধে তাঁর উপর চড়াও হয়েছিল উচ্চবর্ণের মানুষেরা, কেন-না কুয়োটি নাকি অস্পৃশ্য হয়ে গিয়েছে। এইসব অভিজ্ঞতাই শিন্ডেকে জোর জুগিয়েছিল, ধর্মের বিদ্বেষ আর জাতপাতের ভেদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর। সেখান থেকেই নিজের এই সংকীর্ণ গণ্ডি ছেড়ে বেরোনোর চেষ্টা করতে থাকেন তিনি। চাকরি পান পুলিশে। পরে পা রাখেন রাজনীতিতে। ক্রমে ক্রমে জাতীয় স্তরের নেতা হয়ে ওঠেন সুশীলকুমার। পরবর্তী কালে রাজ্যের প্রথম দলিত মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁকেই নির্বাচন করে মহারাষ্ট্র।