শরীরে ভরা যৌবন। মুখের হাসিতে মোহময় হাতছানি। যৌনতার সেই মাদক ইশারায় ভুলে পায়ে পায়ে এগিয়ে যায় একেকজন পুরুষ। আর তারপরেই… বেঁচে ফেরে না তারা কেউ। শত্রুদের ঘায়েল করার জন্য যৌনতাই টোপ ছিল এই মেয়ের। শুনে নেওয়া যাক তার গল্প।
অনেকক্ষণ ধরেই মেয়েটাকে অনুসরণ করে চলেছিল লোকটা। মেয়েটার বয়স বেশি নয়, কিন্তু এই বয়সেই যৌবন উপচে পড়েছে তার শরীরে। সাইকেল নিয়ে রাস্তায় যেভাবে কসরত করে চলেছে, তাতে মাঝে মাঝেই স্কার্টটা উড়ে যাচ্ছে অনেকখানি। নজর কেড়ে নিচ্ছে ফর্সা ঊরু। হাঁপিয়েও গিয়েছে বোধহয়, নিশ্বাস নিচ্ছে জোরে জোরে। আর তার জন্যই শার্টের বাঁধন মানতে চাইছে না উদ্ধত বুক। লোকটার যেন আর তর সইছিল না। সেই কবে থেকে যুদ্ধ শুরু হয়েছে। নাৎসি বাহিনীর একজন সৈনিক সে। চেনা দেশ ছেড়ে, ঘরবাড়ি ছেড়ে পড়ে থাকতে হচ্ছে এই বিদেশ বিভুঁইয়ে। উপোসি শরীর, মেয়েদের ছাড়া চলে! এই মেয়েটাকে দেখে অবশ্য সে আরও উত্তেজিত হয়ে পড়েছে। সাইকেল চালাতে চালাতেই মেয়েটা নজর করেছিল তাকে। সে একটা অশ্লীল ইঙ্গিত করেছিল অবশ্য। কিন্তু তাতে হাসছিলই মেয়েটা। চোখের ইঙ্গিতে ইশারাও করেছিল। ব্যস, সঙ্গে সঙ্গেই নিজের সাইকেলে উঠে তার পিছু নিয়েছিল লোকটা। এমনিতে মেয়েগুলোকে বাগে আনতে রীতিমতো জোর খাটাতে হয়। কিন্তু এখানে তেমনটা দরকার হবে না বলেই মনে হচ্ছে। ভাবতে ভাবতেই দ্যাখে, সাইকেল থামিয়ে দিয়েছে মেয়েটা। রাস্তার পাশে জঙ্গল এখানে আরও ঘন। সাইকেল থেকে নেমে বুনো ফুল তুলতে শুরু করেছে মেয়েটা। হাতে আবার একটা সাজিও আছে। দ্রুত কাছে গিয়েই মেয়েটাকে এক ঝটকায় কাছে টেনে আনে নাৎসি কম্যান্ডার। একটুও বাধা না দিয়ে তার বুকে ঘনিয়ে আসে মেয়েটা। তার ঠোঁট ফোলানোয় মদির ইশারা। চোখে নিষিদ্ধ কামনার ছায়া। তড়িঘড়ি মেয়েটার শার্টের বোতামে হাত রাখে সে।
আরও শুনুন: নাচের ছন্দে খসে পড়ত পোশাক, গুপ্তচর মাতা হারির শরীরী আগুনে পতঙ্গের মতো ঝাঁপ দিত শত্রুরা
কয়েকটা মুহূর্ত মাত্র। মাটিতে পড়ে থাকা সৈনিকটির দিকে তাকিয়ে ঘৃণায় থুথু ফেলে কিশোরী। ওই সৈনিক আর কী করে জানবে, তাদের নিকেশ করার জন্যই এত ছলাকলার জাল বিছিয়েছে এই মেয়ে। সাজির মধ্যেই সে লুকিয়ে রাখে ছোট্ট পিস্তলটা। তাতে লাগানো সাইলেন্সার, যাতে গুলি চালালেও আওয়াজ কারও কানে না যায়। এই যেমন এখন, কী সুন্দর চুপচাপ তার শরীর থেকে ছিটকে গিয়ে লোকটা আছড়ে পড়ল মাটিতে। এই সাজি নিয়েই সাইকেলে চড়ে মেয়েটা ঘুরে বেড়ায় রাস্তায় রাস্তায়। যেখানে কড়া পাহারা বসিয়েছে হিটলারের বাহিনী। কিশোর যুবক যাকেই পাক, গ্রেপ্তার করছে সঙ্গে সঙ্গে। মেয়েদের জন্য অবশ্য আলাদা নিদান। তাদের দেখলেই লালসার হাত বাড়ায় কোনও না কোনও সেনা। জার্মানি থেকে দূরে এই আমস্টারডামে এসে তারা আর কোনও বিনোদন খুঁজে পাচ্ছে না। তাই মেয়েদের ধর্ষণ করাই তাদের কাছে এখন একমাত্র বিনোদন। আর এই দুর্বলতারই সুযোগ নিয়েছে এই মেয়েটি। রাস্তায় বেরিয়ে এইভাবেই কোনও সেনার দিকে সে ছুড়ে দেয় কামনায় ভরা কটাক্ষ। যৌনতার ইশারা বুঝতে ভুল করে না কামুক পুরুষেরা। সুযোগ বুঝে তাকে কোনও নির্জন জায়গায় টেনে আনে মেয়েটি। ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগে বুকে ঠেকায় পিস্তল, আর তারপর, স্রেফ একটা গুলি।
মেয়েটির নাম ফ্রেডি ওভারস্টিজেন। হঠাৎ করেই তার জন্মভূমি নেদারল্যান্ডে হামলা করেছে এই বিদেশি শত্রুগুলো। হাজার হাজার মানুষকে ইচ্ছেমতো আটক করছে, তুলে নিয়ে যাচ্ছে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে, কিংবা ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিচ্ছে প্রকাশ্য রাস্তায়। তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে এই দেশের কিছু বিশ্বাসঘাতকও। আর তাদের মোকাবিলা করতেই প্রতিরোধ বাহিনী গড়ে তুলেছে দেশের মানুষ। ফ্রেডির বয়স যদিও মাত্র ১৪, তবুও সে নাম লিখিয়েছে এই দলে। নিজের রূপ যৌবনকে ব্যবহার করেই সে নিকেশ করতে চায় এই শত্রুদের। অবশ্য সে একা নয়। এই গুপ্তঘাতক বাহিনীতে ছিল সাতটি মেয়ে। যার অন্যতম ফ্রেডির দিদি, ট্রুস। দু’বছরের বড় দিদি ট্রুসকে সঙ্গে নিয়ে নাৎসি কনসেনট্রেশন ক্যাম্প থেকে বন্দি শিশুদের চুরি করত ফ্রেডি, তারপর সীমান্ত পার করে তাদের পৌঁছে দিত কোনও নিরাপদ আশ্রয়ে। ১৯৪৩ সালে তাদের দলে যোগ দিয়েছিলেন হ্যানি শাফট নামে এক আইনের ছাত্রী, যিনি ছিলেন ফ্রেডির মতোই বেপরোয়া। জার্মানদের রুখতে তাঁরা দুজন রাতের আঁধারে ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দিতেন রেললাইন আর ব্রিজ। পরে অবশ্য হ্যানিকে ধরে ফেলেছিল নাৎসিরা। তাঁকে ধর্ষণ করে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল হিটলারের এই কুখ্যাত বাহিনী।
আরও শুনুন: স্তনে-নখে মাখানো বিষ, সম্মোহনে সুন্দরী বিষকন্যাকে স্পর্শ মাত্র মৃত্যু অবধারিত পুরুষের
হ্যানিকে ভোলেননি। ভোলেননি হ্যানি এবং অন্যান্য সহযোদ্ধাদের লড়াই। তবে যুদ্ধের সময়ে কত নাৎসি সৈন্যকে হত্যা করেছেন, তার হিসেব রাখতে চাননি ফ্রেডি। তিনি আজীবন মনে করতেন, যারা নিরপরাধ মানুষদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়, মৃত্যুই তাদের উপযুক্ত শাস্তি। আর সেই শাস্তি দেওয়ার জন্য যেভাবে তিনি নিজেকেই বাজি রেখেছিলেন, সে কথা মনে রেখেছে পরবর্তী কালের ইতিহাসও।