একই বাড়ি বিক্রি করা হয়েছে ২২ বার। অথচ সে ব্যাপারে বাড়ির মালিক কিছুই জানেন না। হঠাৎই জমি রেজিস্ট্রি অফিসের ফোন পেয়ে রীতিমতো অবাক বাড়ির আসল মালিক। কারা করেছে এমন প্রতারণা? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
বাড়ির আসল মালিক জানেনই না তাঁর সাধের বাড়ি বিক্রি হয়ে গেছে। তাও একবার নয়। বাড়িটি নাকি ২২ বার বিক্রি করা হয়েছে। অদ্ভুত প্রতারণার ফাঁদে পড়ে কার্যত মাথায় হাত সেই মালিকপক্ষের।
আরও শুনুন: প্রতি বছর একই দিনে পালন করা হয় বিশ্বকর্মা পুজো, নেপথ্যে কী কারণ
কী ঘটেছে আসলে?
ঘটনাটির কেন্দ্রস্থল পুনে। সেখানকার নন্দনবন নামের এক আবাসনকে নিয়েই করা হয়েছে এমন প্রতারণা। আবাসনের আসল মালিকও রীতিমতো আশ্চর্য হয়েছেন এমন প্রতারণার শিকার হয়ে। ঘটনাটি প্রথম নজরে আসে দত্তাত্রেয় সতভাই নামের এক জমি রেজিস্ট্রি অফিসারের। কয়েক মাস আগে সিদ্ধার্থ নামের এক আইনজীবী ওই রেজিস্ট্রারের কাছে অভিযোগ করেছিলেন, যে নন্দনবন আবাসনটি নিয়ে প্রতারণা চলছে। অনৈতিক কেনাবেচা সংক্রান্ত প্রতারণা করা হচ্ছে আবাসনটিকে। অভিযোগ শুনে খোঁজ শুরু করেন দত্তাত্রেয় নামের ওই অফিসার। তারপরেই উঠে আসে চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য। দেখা যায় ওই আবাসনটি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এক ব্যক্তির নামে রেজিস্ট্রি করা হয়েছিল। এরপর খোঁজ মেলে, ওই একই আবাসন আরও বেশ কয়েকজনের নামেও রেজিস্ট্রি করা হয়েছে। সব ক্ষেত্রে ক্রেতার নাম ভিন্ন ভিন্ন। তবে বিক্রেতা একই। এর থেকেই সন্দেহ দানা বাঁধে ওই রেজিস্ট্রারের মনে। আরও ভালো করে খোঁজ করে তিনি জানতে পারেন, ওই আবাসনটিকে বেশ কয়েকবার বিভিন্ন মানুষের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি পুলিশের দ্বারস্থ হন। এবং ঘটনাটি সবিস্তারে জানিয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
আরও শুনুন: স্কুলের শৌচাগারে ‘ডিজিটাল ধর্ষণ’-এর শিকার ৪ বছরের ছাত্রী, মায়ের অভিযোগ ঘিরে ছড়াল ক্ষোভ
তদন্তে নেমে আরও খানিক সত্যি উদ্ধার করে পুলিশ। জানা যায় ৪ জন মহিলা এবং একজন রিয়েল এস্টেট এজেন্ট মিলে এমন প্রতারণার চক্রান্ত করেছে। আরও জানা যায়, যে ওই আবাসনের আসল মালিকও নাকি চারজন। পুলিশের সামনে, তাঁদেরই অন্যতম অঞ্জলি গুপ্তার বয়ানে, ঘটনা, জলের মতো পরিষ্কার হয়। তাঁর মতে গত বছর ওই আবাসনটি বিক্রি করার কথা ভেবেছিলেন তাঁরা। তাই বেশ কিছু রিয়েল এস্টেট এজেন্টের সঙ্গে তাঁরা কথা বলেন। স্বাভাবিক ভাবেই তাঁদের প্রধান দাবি ছিল একজন সঠিক ক্রেতার খোঁজ পাওয়া। সেই মতো বিগত এক বছর ধরে বিভিন্ন ক্রেতা ওই আবাসন দেখতে আসেন। প্রত্যেককেই দায়িত্ব নিয়ে আবাসন ঘুরিয়ে দেখানো হয়। এমনকি ব্যাঙ্ক থেকেও আবাসনের মাপ-জোক করার জন্য বিভিন্ন লোক আসে। তাঁদের সঙ্গেও সহযোগিতা করেছিলেন আবাসনের আসল মালিকরা। কিন্তু এসবের আড়ালে যে পাঁচজন প্রতারক এমন ভয়ানক ষড়যন্ত্র করছিল তাঁদের সম্পত্তি নিয়ে, তা তাঁরা টেরও পাননি। তদন্ত করে জানা যায় আসলে ক্রেতা হিসেবে যারা আবাসনটি দেখতে এসেছিলেন তাঁদের প্রত্যেককেই আবাসনটি বিক্রি করে ওই প্রতারকের দল। রেজিস্ট্রি অফিস থেকে জানা যায় মোট ২২ বার ওই একই আবাসন রেজিস্ট্রি করা হয়েছে বিভিন্ন ক্রেতার নামে। মানে ২২ জনের কাছে বিক্রি হয়েছে আবাসনটি। তবে সব ক্ষেত্রেই বিক্রেতার নাম এক ছিল। বারংবার রেজিস্ট্রি করলেও যাতে ধরা না পড়ে তাই প্রয়োজনমত ভুয়ো পরিচয়পত্র ব্যবহার করত ওই প্রতারকের দল। পুলিশ সূত্রের খবর ইতিমধ্যেই ওই ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে আরও বেশ কয়েকজন এই চক্রান্তের সঙ্গে যুক্ত আছে বলেও মনে করা হচ্ছে। তাঁদের খোঁজও চলছে।