একই গাড়িতে ছিল ৬ জন। সঙ্গে একটা ছাগল। যাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল বলি দেওয়ার জন্য। পথে দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল ৪ জনের, মারাত্মক আহত দুজন। এদিকে দিব্যি সুস্থ ওই বলির পাঁঠা! কোথায় ঘটেছে এমন কাণ্ড? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
অলংকরণ: সুযোগ বন্দ্যোপাধ্যায়।
কথায় বলে, রাখে হরি মারে কে! অর্থাৎ, খোদ ঈশ্বর যাকে রক্ষা করেন, তাকে মারবে এমন সাধ্যি কারও নেই। কিন্তু যে প্রাণীকে নিয়েই যাওয়া হচ্ছে ইশ্বরের নামে বলির উদ্দেশ্যে, তাকেও কি রক্ষা করেন তিনি?
সাম্প্রতিক ঘটনা সেই প্রমাণই দিচ্ছে। যা ঘটেছে তা ঈশ্বরের ইচ্ছা বলেই জোর গলায় দাবি করতে পারেন কেউ কেউ। কিংবা ঘুরিয়ে বলতে পারেন আলৌকিক ঘটনা। তবে মোটের উপয়ার এই ঘটনার কথা শুনে একটা কথা বলতেই হয়, বলিহারি কাণ্ড মশাই!
ঠিক কী ঘটেছে?
ঘটনা মধ্যপ্রদেশের। আপাতভাবে দেখলে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। তবে সেই দুর্ঘটনার কবলে পরেও একটি ছাগল বেমালুম বেঁচে গিয়েছে। আর তাতেই এই ঘটনা চর্চার কেন্দ্র উঠে এসেছে। আসলে, ওই ছাগলটি যে সে ছাগল নয়। সে হল গিয়ে বলির পাঁঠা। আক্ষরিক অর্থে নয়, সত্যি সত্যিই ছাগলটিকে বলির উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। পথে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ওই ছাগল ও তার সঙ্গে থাকা ছ-জন। এঁরাই গাড়ি করে বলির ছাগল নিয়ে যাচ্ছিলেন। মাঝপথে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়িটি পাশের নদীতে পরে। দুর্ঘটনা এতটাই ভয়ঙ্কর ছিল যে, গাড়িতে থাকা ওই ছ-জনই গুরুতর আহত হন। ঘটনাস্থলে প্রাণ যায় চারজনের, দুজনকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। অথচ ওই ছাগলের গায়ে একটি আঁচও লাগেনি। সে দিব্য সুস্থ। এমনটা কি করে সম্ভব, তা নিয়ে ধন্দ্বে এলাকাবাসী। তবে কেউ কেউ বলছেন, ওই ছাগলটিকে আদৌ নিধনের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল না। বরং স্থানীয় পুজোয় ছাগলটিকে প্রতীকী বলি দেওয়া হয়। অর্থাৎ প্রাণে না মেরে তার কানের কিছুটা অংশ কেটে নেওয়া হয়। এই নিয়ম দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রয়েছে। ব্যাপারটা খানিক সাপও মরল লাঠিও ভাঙল না, এরকম। ধর্মীয় নিয়ম মেনে দেবীর উদ্দেশে ছাগল উৎসর্গ করেও তাকে প্রাণে না মারা। এই ছ-জন এমনই অনুষ্ঠান সেরে ওই ছাগল নিয়ে ফিরছিলেন। পথে দুর্ঘটনা প্রাণ কাড়ল সবার।
তবে ঘটনার ব্যাখ্যা যাই হোক, ওই ছাগল যে বলির পাঁঠা তাতে সন্দেহ নেই। এবং এই ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনাতেও তার গায়ে এতটুকু আঁচ লাগেনি এও সত্যি। ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ভয়াবহতা আর মৃত্যুর দুঃখকে সরিয়ে রেখে অনেকে মশকরা করতে শুরু করেছেন বিষয়টা নিয়ে। প্রকৃত অর্থে রাখে হরি মারে কে, বোধহয় একেই বলে, এমনটাও বলছেন কেউ কেউ। এখানেই শেষ নয়, বিষয়টার সঙ্গে ভগবানের অস্তিত্ব আছে কি না, সেই বিতর্কের সঙ্গে জুড়েছেন অনেকে। তাতেই ফিরছে, বছর ১৩ আগে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ‘ও মাই গড’ সিনেমার কথা। সেখানে ইশ্বরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন কাঞ্জি লালজী মেহতা। দাবি করেছিলেন, প্রমাণ করে দেখাবেন, ঈশ্বর বলে আসলে কেউ কোথাও নেই! ভরা আদালতে দাঁড়িয়ে নিজের যুক্তির স্বপক্ষে বলেছিলেন, ‘ঈশ্বর যদি সত্যি থাকতেন তাহলে ইশ্বরের ধামে যাত্রা করবার পথে পাহাড়ের খাদে পড়ে গাড়ির অ্যাক্সিডেন্ট হত না!’ সিনেমায় দেখানো হলেও সেইসময় এইধরনের বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল। কোথাও গিয়ে তা যেন নতুন করে উসকে উঠল। বলি দিতে যাওয়া হোক, বা সেখান থেকে ফেরা, আদতে সেই পুজোর কাজ করেছিলেন ওই ছ-জন। অথচ তাঁরা বেঘোরে মারা পড়লেন, একইসঙ্গে। আর বহাল তবিয়তে বেঁচে রইল সেই ছাগল, যার মৃত্যু হয়তো নিশ্চিত ছিল ওই ছ-জনের হাতে। দুটো ঘটনার সঙ্গেই অদ্ভুত ভাবে জুড়ে আছে ঈশ্বর প্রসঙ্গ। তাই বিষয়টাকে চরম ‘আয়রনিক’ বলেই মনে করছেন অনেকে।