১২টার পর আর ১টা বাজে না এই এলাকার ঘড়িতে। বরং ফের ১১টার দিকে ঘোরে এখানকার ঘড়ির কাঁটা। কিন্তু কোথায় ঘটে এহেন অদ্ভুত কাণ্ড? কেনই বা চালু রয়েছে এমন অদ্ভুত নিয়ম? আসুন, তাহলে শুনে নেওয়া যাক।
সুকুমার রায়ের ‘হ য ব র ল’-তে যে বয়সের কাঁটা উলটো দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হত, সে কথা কে না জানে! কিন্তু তা বলে ঘড়ির কাঁটা ঘুরবে উলটো দিকে! তায় একটা দুটো নয়, একটা গোটা সম্প্রদায়ের মানুষের ক্ষেত্রেই সত্যি হয়ে আসছে সে কথা। ঘড়িতে ১২টা বাজার পরেই উলটোদিকে ফের ছুট লাগায় তার ঘণ্টা, মিনিট, সেকেন্ডের কাঁটা। ভাবছেন তো, কোথায় ঘটে এহেন অদ্ভুত কাণ্ড?
আরও শুনুন: ‘নারী যৌন ইচ্ছার কারণ’! আয়ুর্বেদ পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে চাওয়া হল এর ব্যাখ্যা, ঘনাল বিতর্ক
এই কাণ্ড ঘটে আসছে এ দেশেই। ভারতের একটি উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষ নিয়ম করে পালন করে আসছেন এই প্রথা। দক্ষিণের পর্দা কাঁপানো সিনেমা ‘আরআরআর’-এর কথা মনে আছে তো? সেখানে যে কোমারাম ভীমের চরিত্রটি তুলে ধরেছিলেন জুনিয়র এনটিআর, তাঁদের গোন্দ উপজাতির মধ্যেই আসলে প্রচলিত রয়েছে এই আশ্চর্য নিয়মটি। ছত্তিশগড়ের অধিবাসী এই উপজাতি সম্প্রদায়ের জীবনে সময়ের গতি উলটো দিকে বয়। কারণ তাঁদের মতে, এই গতিই হল প্রকৃতির নিজস্ব নিয়ম। গোন্দ সম্প্রদায়ের মানুষের বিশ্বাস, তাঁদের ঘড়িই আসলে সবচেয়ে বেশি করে প্রাকৃতিক নিয়ম মেনে চলে। তাঁরা মনে করেন, পৃথিবী ঘড়ির কাঁটার বিপরীত গতিতে চলে, অর্থাৎ ডানদিক থেকে বাঁদিকে ঘোরে। যে গতিকে আমরা এক কথায় বলি, অ্যান্টিক্লকওয়াইজ। আর কেবল পৃথিবীই নয়, চাঁদের গতিও ঘড়ির কাঁটার বিপরীত অভিমুখেই চলে বলে বিশ্বাস তাঁদের। আর সেই গতির সঙ্গে তাল মিলিয়েই তাঁদের ঘড়ি এমন বিপরীতমুখী। র কেবল ঘড়ির কাঁটাই নয়। তাঁদের কোনও বিয়ের ক্ষেত্রেও ঘড়ির কাঁটার বিপরীত গতিতেই চলে আগুনকে প্রদক্ষিণ করে বর বধূ। আর প্রকৃতির এই নিজস্ব গতির অভিমুখটিকেই সম্মান দিতে চান গোন্দ সম্প্রদায়ের মানুষেরা, তাকে মিলিয়ে নিতে চান নিজেদের জীবনের সঙ্গেই। কেবল গোন্দ উপজাতিভুক্ত হাজার দশেক পরিবারই নয়, এই ঘড়ির নিয়মকেই মেনে চলে আরও ২৯টি সম্প্রদায়ের লোক।