ভোটের বাজারে ফুলের মালা। নেতার গলায় ফুলের মালা থেকে পদযাত্রায় পুষ্পবৃষ্টি। আর ফুলের বাড়তি চাহিদায় বাড়ছে ফুলের দামও। শুনে নেওয়া যাক।
উৎসবের মরশুমে ফুলের দাম বাড়ে বরাবরই। কারণ যে কোনও উৎসবেই ফুলের কদর থাকেই। দেখা যাচ্ছে, এইসব উৎসবের চেয়ে কম যায় না ভোটও। ভোটের মরশুমেও ফুলের চাহিদার রীতিমতো বাড়বাড়ন্ত। আর তারই প্রভাব পড়ে ফুলের বাজারে। চলতি লোকসভা নির্বাচনেও যেমন ফুলের দরে চোখ রাখলেই বোঝা যাচ্ছে, কী পরিমাণ কদর বেড়ে গিয়েছে তার!
আরও শুনুন:
নেতাদের মোচ্ছবের ঠেলায় লাফিয়ে বাড়ছে মাংসের দাম, মাথায় হাত ভোটারদের
হবে না কেন, বলুন তো! কোনও নেতানেত্রী জনসভায় বক্তৃতা রাখতে এলে তাঁকে মালা দেওয়া হবে, এ তো বরাবরের রীতি। একটা-দুটো মালাও নয়, সম্মানের সঙ্গে সমানুপাতিক হারেই বাড়বে মালার পরিমাণ। বিশেষ করে পদযাত্রার সময়ে দুপাশে জনতার ভিড় থেকে পুষ্পবৃষ্টির হিড়িক দেখেই বুঝে নেওয়া যায় নেতার জনপ্রিয়তা। যেমন উনিশের লোকসভার সময়কার এক হিসেব বলছে, বারাণসীতে মোদির রোড শো-এর আগে ফুল এসেছিল দিল্লি থেকে। দিল্লির ফুলবাজারের এক ব্যবসায়ী কালে শাহে শুক্লা হিসেব দেন, তাঁর দোকান থেকে ১০ কুইন্টাল, অর্থাৎ হাজার কেজি গোলাপের পাপড়ির অর্ডার দেওয়া হয়েছিল। আবার অনেকসময় কী জন্য মালা বা ফুল নেওয়া হচ্ছে সে কথা গোপনই রাখতে চান ক্রেতা। ভোট রাজনীতি বলে কথা। তবে কথায় কথায় ইঙ্গিত মিলেই যায়, কোন নেতানেত্রীর পায়ে যাবে এই ফুলের অঞ্জলি। এমনিতে ভোটের বাজারে সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে গাঁদার মালা আর গোলাপের পাপড়ির। কোন দলের কোন ফুল বেশি পছন্দ, তারও হিসেব আছে বইকি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিজেপির বেশি ঝোঁক গাঁদা ফুলের দিকেই। গেরুয়া রংকে গুরুত্ব তো দিতেই হবে। অন্যদিকে কংগ্রেস ফুলেও তেরঙ্গা বানানোর কথা মাথায় রাখে। আপের আবার বিশেষ বাছবিছার নেই। আঞ্চলিক দলগুলিও ফুল কেনার সময় দলীয় পতাকার রংকে গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা করেই থাকে।
আরও শুনুন:
যে রাঁধে সে রাজনীতিও করে! ভোটের হাওয়ায় পলিটিক্সের হেঁশেলনামা
ফুল ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাহিদা বাড়লেই দাম বাড়ানো যায়, এ তো বাজারের নিয়ম। ফুলের বাজারও ভোটের সময় সেই নিয়ম জারি করে অনায়াসে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, দুয়েক মাস আগেও কেজি দরে ২৫ থেকে ৪০ টাকা ছিল গোলাপ, যা এপ্রিল মাসেই দাঁড়িয়েছে কেজি প্রতি ৭০ থেকে ১০০ টাকা। ভোট পর্বের প্রচার আর ফলাফলের আবহে আরও লাফিয়ে বেড়েছে দাম। দোকানিরা বলছেন, অন্য সময়ে যা বিক্রিবাটা হয়, ভোট আবহে তা অন্তত ২০ শতাংশ তো বাড়েই। প্রচার যত জোর পায়, ততই ফুলের চাহিদা বাড়ে। বিশেষত মিছিল বা রোড শো মানেই প্রচুর ফুলের জোগান দিতে হয়। আবার ফলপ্রকাশের দিনক্ষণ ঘনিয়ে এলেও ফুল জমিয়ে রাখার পালা। অনায়াসে দ্বিগুণ, এমনকি তিনগুণ দাম চাইতেও তখন পিছপা হন না ফুলদোকানিরা। তেমনই, অন্যান্য সময় মালার যা গড় দৈর্ঘ্য হয়, এই সময়ে তার থেকে অনেক বেশি লম্বা মালাও দোকানে রাখতে হয়, বলছেন ব্যবসায়ীরা। ৫ থেকে ১০-১২ ফুট লম্বা এইসব মালার অর্ডার হয় অন্তত দিন পাঁচেক আগে। মালায় কী ফুল ব্যবহার করা হচ্ছে, তার উপর ভিত্তি করে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ছুঁতে পারে একটি মালার দাম। এই সময়ে পাইকারি বাজারে দিনে দু-আড়াই কোটি টাকাও লাভ হতে পারে, খুশি খুশি মুখেই জানাচ্ছেন ফুল ব্যবসায়ীরা।