‘মনে করো, আজই তোমার জীবনের শেষদিন। তাহলে গতকালের তুলনায় কী পরিবর্তন আনবে তোমার আজকের দিনযাপনে?’- এরকম বিষয় নিয়েই স্কুল পড়ুয়াদের লিখতে বলেছিলেন শিক্ষক। যার জেরে রীতিমতো বিপাকে পড়তে হল তাঁকে। কিন্তু হঠাৎ এমন অদ্ভুত বিষয় নিয়ে পড়ুয়াদের কেন লিখতে বললেন তিনি? আসুন শুনে নিই।
নিজের অবিচুয়ারি নিজেকেই লিখতে হবে। পড়ুয়াদের এমনই কাজ দিয়েছিলেন এক স্কুল শিক্ষক। কিন্তু এহেন আচরণের জেরে চরম বিপাকে পড়তে হল ওই শিক্ষককে। এমন প্রশ্নের কথা প্রকাশ্যে আসা মাত্রই তাঁকে বরখাস্ত করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
আরও শুনুন: হাতে হাতকড়া, তাও ৬ ঘণ্টায় সাঁতরে পেরোলেন ৭ মাইল, অসাধ্যসাধন ব্যক্তির
ঘটনাটি মার্কিন মুলুকের। প্রায়শই সেখানকার স্কুলগুলিতে বন্দুকবাজ হামলার খবর পাওয়া যায়। তেমনই ফ্লোরিডার এক স্কুলে বন্দুকবাজের হানায় প্রাণ হারিয়েছিল বেশ কিছু খুদে। ঘটনায় রীতিমতো উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে ওই স্কুল কর্তৃপক্ষ। তড়িঘড়ি ঠিক করা হয়, ছাত্রছাত্রীদের এই ধরনের ঘটনায় কীভাবে মোকাবিলা করতে হবে, সেই ট্রেনিং দেওয়া হবে। সেইমতো একদিন বিভিন্ন আত্মরক্ষার কৌশল শেখানো হয় ওই পড়ুয়াদের। তবে শুধু শারীরিকভাবে সমর্থ হলেই তো হল না, এই ধরনের পরিস্থিতিতে মনের জোর বজায় রাখাও একান্ত জরুরি। তাই পড়ুয়াদের মনস্তত্ত্বের পাঠ পড়াতে আসেন এক শিক্ষক। ঘটনাচক্রে ওই মনোবিজ্ঞানের শিক্ষক কিছুদিন আগেই স্কুলে নিযুক্ত হয়েছিলেন। ফলত, স্কুলের নিয়মকানুন সম্পর্কে খুব বেশি ওয়াকিবহাল ছিলেন না তিনি। তাই ক্লাসে ঢুকেই পড়ুয়াদের অদ্ভুত এক কাজ দিয়ে বসেন তিনি। তাঁর নির্দেশ ছিল, প্রত্যেক পড়ুয়া যেন নিজেদের অবিচুয়ারি, অর্থাৎ মৃত্যুসংবাদ লিখে দেখায়। স্পষ্টভাবে বলতে গেলে, পড়ুয়াদের তিনি বলেন, ‘মনে করো আজই তোমার জীবনের শেষ দিন। তাহলে গতকালের তুলনায় ঠিক কী পরিবর্তন আজকের দিনযাপনে আনবে?’ আর এতেই বাধে বিপত্তি। এইটুকু বয়সেই নিজেদের মৃত্যু সম্পর্কে ভাবতে বলায় অস্বস্তিতে পড়ে অনেক পড়ুয়াই।
ঘটনাটি স্কুল কর্তৃপক্ষের কানে পৌঁছতেও দেরি হয়নি। ওই শিক্ষককে তলব করা হয় সঙ্গে সঙ্গেই। ক্লাসে কেন এহেন প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছিলেন তিনি, সেই কৈফিয়ত চান কর্তৃপক্ষ। উত্তরে তাঁর আসল উদ্দেশ্য জানাতে দ্বিধা করেননি ওই শিক্ষক। তিনি যে পড়ুয়াদের মনের জোর বাড়াতেই এই প্রশ্ন করেছিলেন, সেকথা সাফ জানিয়ে দেন তিনি। একইসঙ্গে তিনি যে এই কাজ দেওয়ার সময় পড়ুয়াদের সতর্ক করেছিলেন, তাও কর্তৃপক্ষকে জানান ওই শিক্ষক। তাঁর সাফাই, কোনওভাবেই পড়ুয়াদের মানসিক আঘাত দেওয়া তাঁর উদ্দেশ্য ছিল না। কিন্তু এত ব্যাখ্যা দিয়েও কোনও লাভ হয়নি। পড়ুয়াদের মানসিক হেনস্থার অভিযোগে তাঁকে সরাসরি বরখাস্ত করে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
আরও শুনুন: খেতে সাধ তবু পকেটে টান! এবার EMI-তে আলফানসো কিনতে পারবে মধ্যবিত্ত
তবে এত কিছুর পরেও নিজের জায়গায় অবিচল রয়েছেন ওই শিক্ষক। তাঁর সাফ বক্তব্য, তিনি আসলে ওই পড়ুয়াদের মানসিকভাবে আরও দৃঢ় করতে চেয়েছিলেন। তারা যেন জীবনের আসল অর্থ বুঝতে শেখে, সেই প্রচেষ্টাই ছিল তাঁর। তাঁর মতে, সকলের জীবনেই মৃত্যু অমোঘ সত্য। তাই প্রথম থেকেই সেই কঠিন বাস্তবের মুখোমুখি হওয়া বাঞ্ছনীয় বলেই মনে করেন তিনি। আর সেই কারণেই তাঁর পড়ুয়াদের এ বিষয়ে সতর্ক করতে চেয়েছিলেন ওই শিক্ষক।