লোকসভা নির্বাচন শেষের মুখে। ইতিমধ্যেই গোটা দেশের নজর এক্সিট পোলে। কার দখল থাকবে দিল্লিবাড়ি, তা আগেভাগে জেনে নিতেই যত উৎসাহ। কিন্তু সবসময় কি এক্সিট পোলের ভবিষ্যৎবাণী সত্যি হয়? ইতিহাস বলছে একেবারেই নয়। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
পরীক্ষার থেকেও রেজাল্টের টেনশন বেশি। ভোটের ক্ষেত্রেও সেই ছবি তেমন বদলায় না। ভোট শেষ হতে না হতেই ফলাফলের জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়েন অনেকে। সেই সমস্যা মেটাতেই এক্সিট পোল। বুথফেরত সমীক্ষা থেকে আগেভাগে অনুমান করে নেওয়া কে জিতবে! বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় সেই অনুমান হুবহু মিলে গিয়েছে। তাই যে কোনও নির্বাচনের পরই সকলের নজর থাকে বিভিন্ন এজেন্সির করা এক্সিট পোলের দিকে। তবে সবসময় যে সেই ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হবে এমন কোনও মানে নেই।
কাউকে সরাসরি ভোট দেওয়ার জন্য প্ররোচির করা অপরাধ। কমিশনের তরফেও সেই কারণে, ভোটের ঠিক আগে রাজনৈতিক প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়। নিয়ম মানতে বাধ্য থাকেন সব দলের নেতৃত্ব। কিন্তু ভোট হয়ে গেলে সমীক্ষা করা যেতেই পারে। সরাসরি প্রশ্ন না করেও, একজন ভোটারের পছন্দের প্রার্থীর নাম জেনে অনুমান করাই যায় কোন দলের পাল্লা ভারি। এভাবেই দীর্ঘদিন ধরে বুথফেরত সমীক্ষা চালিয়ে আসছে বিভিন্ন এজেন্সি। অনেক সময় সংবাদমাধ্যমের তরফেও এই ধরনেই সমীক্ষা চালানো হয়। বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সেখানকার মানুষ কোন দলের কথা বেশি বলছেন তা শোনা হয়। সেই থেকেই অনুমান করে নেওয়া নির্বাচন শেষে কার মুখে হাসি ফুটবে। তবে ভোট চলাকালীন ফল ঘোষণার নিয়ম নেই। কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, একেবারে শেষ দফার ভোট মিটলেই এক্সিট পোল প্রকাশ্যে আনা যেতে পারে। চলতি নির্বাচনে শেষ দফা অর্থাৎ ১ জুন সন্ধ্যের পর এক্সিট পোল ঘোষণার অনুমতি দিয়েছে কমিশন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এক্সিট পোলে যা দেখানো হবে নির্বাচনের ফলাফল কি একেবারে তাই হবে?
নির্বাচনের সামগ্রিক ইতিহাস দেখলে হয়তো এমনটাই মনে হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এক্সিট পোলের হিসাব প্রায় মিলে যায়। তবে এমনও কিছু নির্বাচনের উদাহরণ রয়েছে, যেখানে এক্সিট পোলের হিসাব বিলকুল মেলেনি। ২০০৪ লোকসভার কথা ধরা যাক। সেবার এক্সিট পোলের হিসাব জানিয়েছিল ২৪০-২৫০ সিট দখল করবে বিজেপি শাসিত NDA। বাজপেয়ীর হাতেই থাকবে দিল্লিবাড়ির ক্ষমতা। কিন্তু নির্বাচনের ফলাফল সবাইকে চমকে দেয়। ১৪৫ সিট জিতে ক্ষমতার দখল নেয় জাতীয় কংগ্রেস। একইভাবে ২০১৫ সালের দিল্লি বিধানসিভা নির্বাচনে এক্সিট পোলের রায় একেবারেই মেলেনি। নির্বাচন মিটতেই এক্সিট পোল জানিয়ে দেয় ক্ষমতা থাকবে আম আদমি পার্টির হাতে। তবে ৭০ আসনের মধ্যে কমবেশি ৪০টি আসন থাকবে তাদের দখলে। কিন্তু নির্বাচনের ফলাফল বেরোলে দেখা যায় আপের দখলে ৬৭টি আসন। ২০১৫ সালের বিহারের নির্বাচনেও সেই এক ঘটনা। এক্সিট পোলের হিসাব জানিয়েছিল কোনও জোট ক্ষমতায় থাকবে না। কিন্তু নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর দেখা যায় RJD-JDU-কংগ্রেস জোটের হাতেই সবথেকে বেশি আসন। সুতরাং সেবারেও এক্সিট পোলের হিসাব বিলকুল মেলেনি। একই কাণ্ড ঘটেছিল ২০১৭ সালের উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের ক্ষেত্রে। নোটবন্দীর পরে পরেই হওয়া এই নির্বাচনে এক্সিট পোল যা হিসাব দেখিয়েছিল তা হুবহু মেলেনি। বরং সবাইকে অবাক করে ৩১২ কেন্দ্রে জয়লাভ রে বিজেপি। ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনেও বিজেপি কতগুলো আসন পাবে তা এক্সিট পোল সঠিকভাবে দেখাতে পারেনি। স্রেফ জানা গিয়েছিল NDA আবারও ক্ষমতায় ফিরবে। কিন্তু ভোটের ফল ঘোষণার পর দেখা যায়, বিজেপি একাই ২৭২ আসনে জয়লাভ করেছে। সুতরাং এক্সিট পোলের হিসাব যে সবসময় সঠিক বলবে তার কোনও মানে নেই এমনটা জানিয়ে দিচ্ছে এই পাঁচ নির্বাচন।